ভারতের পররাষ্ট্র সচিব ঢাকায়, নানা জল্পনা-কল্পনা

তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে এখন বাংলাদেশে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিজয় কেশব গোখেল। রোববার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে এসে পৌছান তিনি।

এই সফরকে ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক সমীকরণে নানা জল্পনা-কল্পনা। কূটনৈতক মহল তার এই ঢাকা সফরকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে।

এদিকে এ সফরে দুই দেশের মধ্যে বেশ কিছু সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার কথা রয়েছে। সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মোহাম্মদ শহীদুল হকের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন বিজয় কেশব। তিস্তার পানিবন্টনসহ দু দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দুই সচিবের মধ্যে আলোচনার কথা রয়েছে।

এ সময়ে বেশ কিছু সমঝোতা স্মারকেও সই করবে দুই পক্ষ। এছাড়া আগামীকাল সোমবার বিকেলে ঢাকার একটি হোটেলে বাংলাদেশ ভারত সর্ম্পক নিয়ে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার কথা রয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের।

একাধিক কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন ইস্যুর কথা বলা হলেও, বিজয় গোখলের ঢাকা সফরে মূলত উভয় দেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, এই নির্বাচনের আগে লন্ডনে দুদেশের প্রধানমন্ত্রীর সম্ভাব্য বৈঠক, রোহিঙ্গা সংকটে ভারতের অবস্থান ও তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সর্বাধিক গুরুত্ব পেতে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, হাসিনা-মোদি বৈঠকের এজেন্ডা নির্ধারণ এবং তা চূড়ান্ত করাও গোখলের ঢাকা সফরের বিশেষ উদ্দেশ্য।

বিজয় গোখলের সফর নিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়া এক খবরে বলেছে, বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় নির্বাচন আসন্ন হওয়ায় উভয় দেশের ক্ষমতাসীন সরকারের জন্যই পরস্পরের প্রতি আস্থা অর্জন ও নির্ভরশীলতা ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিমসটেকের নিরাপত্তাবিষয়ক সম্মেলন উপলক্ষে সম্প্রতি ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের ঢাকা সফরের মতো ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিজয় গোখলের সফরকেও বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে ভারতীয় প্রভাবশালী ওই ইংরেজি দৈনিক।

তাদের খবরে বলা হয়েছে, নিজেদের কৌশল ঠিক করতে ভারতের চিন্তার কেন্দ্রে এখন ঢাকা। শেখ হাসিনার গত দুই মেয়াদে বাংলাদেশ-ভারতের কৌশলগত সম্পর্ক সর্বাধিক ঘনিষ্ঠ হলেও সাম্প্রতিককালে চীন বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, আগামী ১৬ থেকে ২০ এপ্রিল যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অনুষ্ঠেয় কমনওয়েলথ হেড অব গভর্নমেন্ট সম্মেলন (সিএইচওজিএম) বা কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও ওই সম্মেলনে যোগ দেবেন এবং সম্মেলনের ফাঁকে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে একটি বৈঠকের কথা রয়েছে। দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের জন্য উভয় দেশ কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করেছে এবং তার অংশ হিসেবে বিজয় গোখলে ঢাকায় আসছেন।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রের উল্লেখ করে আনন্দবাজার পত্রিকার জানিয়েছে, বাংলাদেশের বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের কাছ থেকে আরো বেশি আস্থা অর্জন করার বিষয়টি অগ্রাধিকার দিচ্ছে ভারতের ক্ষমতাসীন মোদি সরকার। এ ছাড়াও লন্ডনে হাসিনা-মোদির ওই সম্ভাব্য বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকট, আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক সমস্যাসমূহ, তিস্তা ইস্যু এবং ভারতীয় অর্থায়নে বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প নিয়েও কথা হতে পারে। পাশাপাশি, বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের কথা রয়েছে। লন্ডনের বৈঠকে নরেন্দ্র মোদিকে ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানাতেও পারেন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গোখলের ঢাকা সফরকালে প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আগামীকাল সোমবার বৈঠকের কথা রয়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হকের সঙ্গে বৈঠক ছাড়াও গোখলে বাংলাদেশের গণমাধ্যম, চিন্তাবিদ ও সুশীল সমাজের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়, ইনস্টিটিউট অব পলিসি, এডভোকেসি এন্ড গভর্নেন্সের (আপিএজি) উদ্যোগে ‘ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ রিলেশনস : ডিপেনিং কো-অপারেশন এন্ড ওয়ে ফরওয়ার্ড’ শীর্ষক এক সেমিনারে অংশ নেবেন।

প্রসঙ্গত, দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ বৈঠক হয় প্রায় এক বছর আগে। গত বছরের এপ্রিল মাসে শেখ হাসিনার দিল্লি সফরে ওই বৈঠক হয়েছিল।

আরো পড়ুন….

ভারতে দলিত বিক্ষোভ-সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯, আহত দুই শতাধিক

ভারত জুড়ে দলিত সম্প্রদায়ের ডাকা ধর্মঘটে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯জনে। এছাড়াও আহত হয়েছে দুই শতাধিক।

সোমবার সুপ্রিম কোর্টের এক রায় নিয়ে দলিত সম্প্রদায়ের ধর্মঘটে ভারতের কয়েকটি রাজ্যে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেয়। বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে গোটা ভারত। দেশটির বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে।

ভারতীয় প্রভাবশালী বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবরে বলা হয়, এ বিক্ষোভে মধ্যপ্রদেশে একজন ছাত্র নেতাসহ ছয়জন নিহত হয়েছেন। রাজ্যের গোয়ালিয়রে বিক্ষোভকারীরা রেইললাইন অবরোধ করে এবং বেশ কিছু গাড়িতে অগ্নি-সংযোগ করে।

রাজস্থানের আলওয়ারে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে একজন নিহতের খবর পাওয়া যায়। উত্তর প্রদেশের মুজাফ্‌ফরনগরে একজন ও মিরুতে একজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া রাজ্যজুড়ে ৪০ পুলিশ সদস্যসহ ৭৫ জন আহত হয়েছেন।

পাঞ্জাব এবং ঝাড়খন্ডেও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পাঞ্জাবে সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। রাজ্যজুড়ে বিভিন্ন সড়কের যান চলাচল বন্ধ আছে। ঝাড়খন্ডের রাজধানী রাচিতে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লাঠিপেটা করেছে।

গত ২০ মার্চ ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এসসি/এসটি (নৃশংসতা প্রতিরোধ) আইনে গুরুত্বপূর্ণ দু’টি পরিবর্তনের আদেশ দেন। অতীতে এ আইনের অপব্যবহার হয়েছে এমন অভিযোগের ভিত্তিতে আদালত এ সংশোধনীর আদেশ করেন।

সংশোধিত আইনের অধীনে অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার না করা এবং জামিনের বিধান সংযোজন করা হয়। এ আদেশকে কেন্দ্র করেই ধর্মঘটের ডাক দেয় দলিতরা।

নিম্নবর্ণের মানুষদের সুরক্ষায় ১৯৮৯ সালে ভারতের পার্লামেন্টে এসসি/এসটি অ্যাক্ট পাস হয়। সম্প্রতি দলিত এবং উপজাতিদের সুরক্ষা আইনের অপপ্রয়োগ বন্ধে ভারতের সুপ্রিমকোর্ট এক আদেশে বলা হয়, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গ্রেপ্তার করা যাবে না।

এদিকে, সংঘর্ষের নিন্দা জানিয়েছেন উত্তর প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতীসহ বিভিন্ন রাজ্যের নেতারা। তারা আদালতের রায় পুনর্বিবেচনার আহ্বানও জানান।

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin