ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে উপ-নির্বাচনে ভরাডুবির হবে জেনেই ভয়ে আওয়ামী লীগ নিজেদের লোক দিয়ে রিট করে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে, বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর একটি অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। এর আগে ডিএনসিসি উপ-নির্বাচন স্থগিত করে দেয়া হাইকোর্টের আদেশের সঙ্গে সরকারের কোনো যোগসাজশ নেই বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ভোট ৩ মাসের জন্য হাইকোর্ট স্থগিত করা সাথে সরকারের কোন যোগসূত্র আছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি এ দাবি করেন।
এর আগে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন উপ নির্বাচন স্থগিত করেছে হাইকোর্ট। একটি রিটের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে এ উপনির্বাচনের তফসিল কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, এই মর্মে রুলও জারি করা হয়েছে।
বুধবার সকালে বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি জাফর আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রিটের নিষ্পত্তি করে রুলসহ এ আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী ও ব্যারিস্টার মুস্তাফিজুর রহমান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেসুর রহমান।
গত ৯ জানুয়ারি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে উপ-নির্বাচনসহ সিটি কর্পোরেশনে নতুন যুক্ত হওয়া এলাকায় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়।
ওই তফসিলের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গতকাল হাইকোর্টে পৃথক দুটি রিট করেন রাজধানীর সদ্যবিলুপ্ত ভাটারা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আতাউর রহমান ও বেরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম এই রিট করেছিলেন। রিটে নির্বাচন কমিশনারসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার সকালে রিটটি করেছিলেন তারা।
রিটে উল্লেখ করা হয়, সিটি করপোরেশন আইন অনুসারে ৭৫ শতাংশ কাউন্সিলর নির্বাচনের মাধ্যমে ফল সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হবে। এর ভিত্তিতে মেয়র পদ গঠিত হবে। অথচ গত বছরের জুলাইতে উত্তর সিটি করপোরেশনে ১৮টি ওয়ার্ড সম্প্রসারিত করা হয়। এ অবস্থায় ৭৫ শতাংশ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নির্বাচন হচ্ছে না। নতুন পুনর্গঠিত ওয়ার্ডের ভোটার তালিকা এখনো প্রকাশ করা হয়নি। এ পরিস্থিতিতে নির্বাচন স্থগিত চেয়ে রিটটি করা হয়।
তাছাড়া মনোনয়ন দাখিল করতে হলে ৩০০ ভোটারের স্বাক্ষরসহ তা জমা দিতে হবে। কিন্তু, রিটকারীর এলাকার ভোটার এখনো তালিকাভুক্তই হননি, যার ফলে তিনি স্বাক্ষর নিতে পারছেন না।
পরে রিটকারীর আইনজীবী ব্যারিস্টার আহসান হাবীব ভূঁইয়া জানান, একই আদালতে আরো একটি রিট আবেদন করা হয়েছে। দুটি আবেদনেই নির্বাচনের জন্য ঘোষিত তফসিলের কার্যক্রম স্থগিত চাওয়া হয়েছে। দুটি আবেদনের বিষয়েই আদেশ দেওয়া হয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) আগারগাঁওস্থ নির্বাচন ভবনে ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানান, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) মেয়র পদে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২৬ ফেব্রুয়ারি।
এর আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদার সভাপতিত্বে বিকাল সাড়ে ৩টায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও বৈঠকে চার নির্বাচন কমিশনার, ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তফসিল অনুযায়ী, এই নির্বাচনে প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র কেনা ও জমা দেওয়া যাবে আগামীকাল ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত। আবেদনকারী প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ২১ ও ২২ জানুয়ারি। তা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৯ জানুয়ারি।
নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী, প্রতীক বরাদ্দের আগে কোনো প্রচার চালানো যায় না। সে অনুযায়ী ৩০ জানুয়ারি থেকে প্রার্থীরা প্রচারণা শুরু করতে পারবেন।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ভোট হয়। আওয়ামী লীগের সমর্থনে ওই নির্বাচনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন সদ্য প্রয়াত আনিসুল হক। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতবছরের ৩০ নভেম্বর তার মৃত্যুতে স্থানীয় সরকার বিভাগ ১ ডিসেম্বর থেকে ওই পদটি শূন্য ঘোষণা করে।