bnp_jot

ব্রেকিং>> বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে খালেদা জিয়া

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে গুলশান কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক শুরু হয়েছে। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটি সদস্যদের নিয়ে বৈঠকে বসেছেন তিনি।

শনিবার রাত পুনে দশটায় এ বৈঠক শুরু হয়।

খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত রয়েছেন- বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দীন সরকার, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ড. আবদুল মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখ।

খালেদার মামলায় চূড়ান্ত যুক্তিতর্কে যা বললেন আইনজীবীরা

‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার সব সাক্ষ্য-প্রমাণ পর্যালোচনা করে দেখেছি, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগই দুর্নীতি দমন কমিশন প্রমাণ করতে পারেনি। ফৌজদারি মামলায় অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে না পারলে এর সুবিধা পাবেন আসামি’ বলে মন্তব্য করেছেন ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার।

বৃহস্পতিবার পুরান ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসাসংলগ্ন মাঠে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক আখতারুজ্জামানের আদালতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বিচারের যুক্তিতর্ক শুনানির সময় আদালতে তিনি এ মন্তব্য করেন।

এসময় তিনি আদালতকে উদ্দেশ করে আরো বলেন, ‘খালেদা জিয়া ন্যায়বিচার চান, ন্যায়বিচার করুন।’ নবম দিনের মতো খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন বিএনপি নেতা সাবেক স্পিকার জমির উদ্দিন সরকার। মধ্যাহ্ন বিরতির পর যুক্তিতর্ক শুরু করেন মওদুদ আহমদ।

‘খালেদা জিয়া এতিমের টাকা চুরি করে খেয়েছেন’—প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের অন্য নেতাদের এমন বক্তব্য আদালতের কাজে হস্তক্ষেপ কি না, সে বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার। এখন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৬টি মামলা আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাজনৈতিক কারণে এসব মামলা দেওয়া হয়েছে।

বিএনপির এই নেতা তার বক্তব্যে বারবারই আইনের শাসন, গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের কথা আদালতকে স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি এক-এগারোকে ‘কালো দিবস’ আখ্যা দিয়ে বলেন, ওই সময় সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে ও খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবন বাধাগ্রস্ত করতে মামলা দেওয়া হয়েছে।

মধ্যাহ্ন বিরতির পর যুক্তিতর্ক শুরু করে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ অভিযোগ তুলে আদালতের উদ্দেশে বলেন, ‘আদালতে আইনজীবীদের ঢুকতে বাধা দেওয়া হচ্ছে’, এসময় ‘খালেদার বিচার পাবলিক ট্রায়াল হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন না’ বলে মন্তব্য করেন। তিনি আরো বলেন, ‘জনগণের উপস্থিতিতে বিচার হচ্ছে না, হচ্ছে ক্যামেরা ট্রায়াল’।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলাকে ‘বানোয়াট’ মামলা আখ্যায়িত করে মওদুদ বলেন, এ মামলা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার চরম বহিঃপ্রকাশ। এটা ফৌজদারি মামলার আবরণে রাজনৈতিক মামলা। ক্যামেরা ট্রায়াল করার জন্য খালেদা জিয়ার আরও ১৪টি মামলা এখানকার আদালতে পাঠানো হয়েছে।

বাবা-মায়ের নামে করা ট্রাস্টের টাকা কেউ আত্মসাৎ করতে পারে তা বাংলাদেশের কোনো সুস্থ মানুষ বিশ্বাস করে না মন্তব্য করে মওদুদ বলেন, আদালতের ওপর যদি রাজনৈতিক প্রভাব না থাকত তাহলে আগেই খালেদা জিয়ার এই মামলা খারিজ করে দিতে পারতেন।

মওদুদ আহমদ বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের টাকা আত্মসাৎ তো দূরের কথা, ২ কোটি থেকে ৬ কোটি টাকা হয়েছে। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে দুদক। আইনের দৃষ্টিতে এই মামলা অগ্রহণযোগ্য।

মওদুদ আদালতকে জানান, অযোগ্য ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা হওয়ার কারণে দুদক থেকে তদন্ত কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ তার চাকরি হারান। পরে তিনি মইন উদ্দিন ও ফখরুদ্দিনের অবৈধ সরকারকে ধরে চাকরিতে ফেরেন। তার ক্ষোভ ছিল। অথচ তাকে দিয়ে মামলা তদন্ত করানো হলো।

দুদক মূল নথি উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছে জানিয়ে মওদুদ বলেন, জালিয়াতির মাধ্যমে নথি তৈরি করা হয়েছে, যা ভয়াবহ ফৌজদারি অপরাধ। জালিয়াতি নিয়ে উচ্চ আদালতের একাধিক নজির পড়ে শোনানোর পর মওদুদ আদালতকে জানান, নিশ্চয় আদালত জালিয়াতকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। তদন্ত করানোর ব্যবস্থা করবেন। তা না করেও যদি বিশ্বাস করেন যে জালিয়াতি হয়েছে তাহলে মামলা আর এগোতে পারে না।

কুয়েতের আমির জিয়াউর রহমানকে খুব ভালোবাসতেন জানানোর পর মওদুদ বলেন, ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুস্তাফিজুর রহমান কুয়েতের আমিরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এতিমদের জন্য জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টকে কুয়েতের আমির টাকা দেন। এই টাকা সরকারের কোনো টাকা না। নথিপত্রের কোথাও কোনো জায়গায় খালেদা জিয়ার স্বাক্ষরও নেই। খালেদা জিয়া সম্পূর্ণ নির্দোষ।

এর আগে গত বুধবার এ মামলায় অষ্টম দিনের মতো যুক্তিতর্ক শুনানি হয়। শুরুতে খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তিতর্ক তুলে ধরেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী।

এরপর খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলীকে উদ্দেশ করে বিচারক বলেন, ‘আপনি বিরতির আগে আপনার যুক্তিতর্ক শেষ করবেন। আজ নবম দিনের যুক্তিতর্কের মধ্যে আপনিই পাঁচ দিন চালাচ্ছেন। খন্দকার মাহবুব একদিন, আবদুর রেজাক খান দুদিন বললেন। আর কত দিন বলবেন? প্রসিকিউশন তো মাত্র একদিন বলল।’

এ কথা শুনে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আদালতে হৈচৈ শুরু করেন। এ সময় খালেদা জিয়া আদালতের সামনে একটা চেয়ারে বসেছিলেন। আইনজীবীরা হৈচৈ শুরু করলে তিনি আদালতের দিকে তাকিয়ে থাকেন।

এ সময় ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন বলেন, ‘এটা তো মার্শাল কোর্টের চেয়েও খারাপ নজির। ওয়ান-ইলেভেন ক্যাঙ্গারু কোর্টে এমনভাবে সময় বেঁধে দেয়নি।’

এ সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘বিজ্ঞ আদালত, আপনি আমাকে শুনানি করার জন্য আটকিয়ে দিতে পারেন না, সময় বেঁধে দিতে পারেন না। আসামিকে বলার সুযোগ করে দিতে হবে।’

এরপর আদালতে আইনজীবীরা আবারও হৈচৈ শুরু হলে আদালত বলেন, ‘আমি এখন মুলতবি করে দেবো।’
জবাবে খালদা জিয়ার প্রধান আইনজীবী আবদুর রেজাক খান আদালতকে বলেন, ‘বিজ্ঞ আদালত আমাকে এক মিনিট বলার সুযোগ দেন।’

বিচারক বলেন, ‘সিনিয়র, আপনি বলেন।’

পরে আবদুর রেজাক খান বলেন, ‘এ মামলায় মূল কথা তিনটি। খালেদা জিয়া আ্যকাউন্ট খুলেছেন কি না? টাকা উত্তোলন করেছেন কি না? ব্যয় করেছেন কি না? তাহলে প্রসিকিউটর কি এসব প্রমাণ করতে পেরেছেন? আমি মনে করি, পারেননি।’

‘যে কারণে আমাদের এতসব যুক্তিতর্কের সময় নিতে হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি হত্যারও বিচার এত বছর পর নিষ্পত্তি হয়নি, রাজীব গান্ধী হত্যা চোখের সামনে হয়েছে। এরপরও এত বছরে তা নিষ্পত্তি হয়নি। তাহলে এখানে আসামিকে শুনতে দিচ্ছেন না কেন? আসামিকে শোনার সুযোগ দিতে হবে।’

এই পর্যায়ে আদালত আবার বলার সুযোগ দেন। এরপর এ জে মোহাম্মদ আলী আবার যুক্তিতর্ক শুরু করেন। জালিয়াতির মাধ্যমে নথি তৈরির অভিযোগ এনে তদন্ত কর্মকর্তাসহ ছয়জন সাক্ষীর শাস্তি চেয়ে লিখিত আবেদন করে তিনি তার যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ করেন।

প্রসঙ্গত, ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই দুদক এ মামলা করে। ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট এ মামলায় খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, মাগুরার বিএনপির সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হক কামাল, সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ভাগনে মমিনুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলায় শুরু থেকে পলাতক আছেন।

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin