বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) এখন পর্যন্ত ২৮টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বলা যায়, প্রায় অর্ধেক খেলাই শেষ হয়েছে আসরটির। সিলেট ও ঢাকা পর্ব শেষ হওয়ার পর শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) থেকে শুরু হয় চট্টগ্রাম পর্ব।
যত দিন গড়াচ্ছে ততই উত্তেজনা বাড়ছে বিপিএলের। কারণ শিরোপার দৌড়ে টিকে থাকার জন্য শীর্ষ চারে অবস্থানের লড়াই এই পর্বেই প্রকট হবে। বিপিএলে পয়েন্ট টেবিলে দিকে তাকালে দেখা যাচ্ছে, সবার উপরে নাম মাহমুদউল্লাহর খুলনা টাইটান্সের। ৮ ম্যাচে ১১ পয়েন্ট নিয়ে তাদের অবস্থান শীর্ষে। দ্বিতীয়তে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। তামিম ইকবাল নেতৃত্বাধীন দলটি ৭ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে শেষ চারের দৌঁড়ে খুলনার পরেই অবস্থান। তৃতীয় বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ঢাকা ডায়নামাইটস। ৮ ম্যাচে ৪ টিতে জিতে তাদের পয়েন্ট ৯। আর চতুর্থতে মাশরাফির রংপুর রাইডার্স।
সবচেয়ে মজার তথ্য হলো, মাশরাফির নেতৃত্বাধীন দলটির বয়স যত বাড়ছে ততই সমৃদ্ধ হচ্ছে। শেষের দিকের ম্যাচগুলোতে জিতে চলছেন তারা। সর্বশেষ সিলেট সিক্সার্সের বিপক্ষে ইনিংসের শেষ বলে নাটকীয় জয় তুলে নেয় রংপুরের দলটি। তাসকিনের বলে ছক্কা হাঁকিয়ে রংপুরকে জয় এনে দেন লঙ্কান অলরাউন্ডার উপুল থারাঙ্গা।
এদিকে বিপিএলের বয়স যতই বাড়ছে ততই শঙ্কায় পড়ছে শেষ তিনে থাকা সিলেট সিক্সার্স-চট্টগ্রাম ভাইকিংস ও রাজশাহী কিংস। দেখে নিন পয়েন্ট টেবিলে দৌঁড়ে তারা কে কোথায় এবং শেষ চারে ওঠার ক্ষেত্রে কে কতটা সমৃদ্ধ। গোনিউজের পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো।
সিলেট সিক্সার্স: বিপিএল পঞ্চম আসরের প্রথম পর্ব শুরু হয় সিলেটে। স্বাগতিক হিসেবে সিলেট পর্বে বেশ দাপট দেখায় দলটি। তুলে নেন টানা তিন জয়। তবে ঢাকা ও চিটাগং পর্বে আসার সঙ্গে সঙ্গে চুপসে যায় দলটি। ইতোমধ্যে তিন পর্বে ৯টি ম্যাচ খেলেছে নাসির নেতৃত্বাধীন সিলেট। যাতে ৩ জয় ও ৫ পরাজয়ে পয়েন্ট টেবিলে তাদের অবস্থান ৫ এ। হিসেব মতে, সুপার ফোরে যাওয়ার যুদ্ধে তাদের সামনে আরো তিনটি ম্যাচ।
সিলেট সিক্সার্স বনাম রংপুর রাইডার্স
নাসিরের দলের এই তিনটি ম্যাচের প্রথমটিতে মুখোমুখি হবে মাশরাফির রংপুরের। দ্বিতীয় ও তৃতীয়টি চিটাগং-কুমিল্লার। দারুণ ছন্দে থাকা রংপুরের সঙ্গে সিলেটের ম্যাচটি যে মোটেও সুখকর হবে না তা অনুমেয়। কারণ বর্তমানে বেশ ছন্দে মাশরাফি নেতৃত্বাধীন দলটি। দারুণ ছন্দে ক্রিস গেইল-পেরেরা ও মিঠুন। সর্বশেষ ম্যাচে ব্যাট হাতে অধিনায়ক মাশরাফি নিজেই দেখিয়েছেন চমক। ব্যাট হাতে ১৭ বলে নিয়েছেন ৪২ রান। অন্যদিকে ফিনিশারের ভুমিকায় থাকা পেরেরার কথা নাই-বা বললাম। আর ওপেনিং জুটিতে ক্রিস গেইলের নান্দনিক বাউন্ডারির মারে তো মুগ্ধ মাঠে মাঠ ভর্তি হাজারো দশর্ক। তবে রংপুরের দূর্বলতার দিক হচ্ছে, তাদের দুই অস্ত্র ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ও শাহরিয়ার নাফিস মোটেও ছন্দে নেই।
এদিকে চলতি বিপিএলে মুখোমুখি লড়াইয়ে একবার মুখোমুখি হয়েছিল দলটি। আসরের ২২তম ম্যাচে সিলেটের বিপক্ষে ৭ রানে জয়ের দেখা পায় মাশরাফিরা।
সিলেট সিক্সার্স ও চিটাগং ভাইকিংস
বিপিএলের ২৬তম ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল দুটি দল। যাতে ৪০ রানে জয় লাভ করে চিটাগং ভাইকিংস। তাছাড়া চলতি আসরে খারাপ অবস্থানে থাকলেও বেশ ফাইটিং করেই হারছে চট্টগ্রাম ভাইকিংস। তারপরও পয়েন্ট টেবিলে এগিয়ে থাকা সিলেটই এগিয়ে থাকবে ৩৭তম ম্যাচে। ম্যাচটি হবে মিরপুরে।
সিলেট সিক্সার্স ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স
বর্তমানে পয়েন্ট টেবিলে দ্বিতীয় অবস্থানে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। তামিম ইকবালের নেতৃত্ব দলটি বেশ উড়ছে। ঢাকা ডায়নামাইটসকে পয়েন্ট টেবিলে একেবারে চেপে ধরেছে কুমিল্লা। তারপরও ময়দানি লড়াইয়ে এগিয়ে কিন্তু সিলেটই। প্রথম দেখায় তামিম বিহীন কুমিল্লাকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে সিলেট।
কিন্তু সময় বদলানোর সঙ্গে সঙ্গে বেশ ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে কুমিল্লা। তা পয়েন্ট টেবিল দেখলেই বুঝা যায়। তবে ৪২তম ম্যাচের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
চিটাগং ভাইকিংস
বিপিএলে পয়েন্ট টেবিলে একেবারে তলানীতে চিটাগং ভাইকিংস। ৮ ম্যাচে মাত্র দুটিতে জয়ের দেখা পেয়েছে দলটি। বিপিএলে শেষ চারের দৌঁড়ে টিকে থাকা যে কতটা দুষ্কর তা চিটাগংয়ের পয়েন্ট টেবিল দেখলেই বুঝা যায়। তবে শেষ চারে টিকার দৌঁড়ে দলটির আরো চারটি ম্যাচ রয়েছে।
চিটাগং ভাইকিংস ও ঢাকা ডায়নামাইটস
২৯তম ম্যাচে দলটি মুখোমুটি হবে ঢাকা ডায়নামাইটসের। সাঙ্গাকারা-ইভিন লুইস-আফ্রিদি ও মোহাম্মদ আমিরদের নিয়ে গড়া দলটির সঙ্গে কতটা নিজেদের এগিয়ে নেবে চিটাগং তা সবারই জানা।
চিটাগং ভাইকিংস ও রাজশাহী কিংস
৩৩তম ম্যাচে মুখোমুখি হবে পয়েন্ট টেবিলের তলানীতে থাকা চিটাগং ভাইকিংস ও রাজশাহী কিংস। পয়েন্ট টেবিলে উপরে উঠতে দুই দলের মঝে প্রবল ব্যাট-বলের যুদ্ধ দেখা যাবে।
চিটাগং ভাইকিংস ও সিলেট সিক্সার্স
৩৭তম ম্যাচে সিলেটের মুখোমুখি হবে চিটাগং ভাইকিংস এবং সর্বশেষ ৪০তম ম্যাচে রাজশাহীর বিপক্ষে লড়বে সিলেট।
রাজশাহী কিংস
গতবারের রানার্সআপ দলটি। এবারের আসরে এখনও পর্যন্ত ৮ ম্যাচ খেলে ৫ পরাজয়ের বিপরীতে জয় পেয়েছে মাত্র ৩টিতে। ৬ পয়েন্ট নিয়ে বিপিএলের টেবিলে ছয় নম্বরে অবস্থান করছে রাজশাহী কিংস। হাতে আছে আর মাত্র চারটি ম্যাচ। শেষ চার নিশ্চিত করতে হলে এই চার ম্যাচেই ভালো করতে হবে।
সে হিসেবে দলটির হাতে আরো চারটি ম্যাচ। আর প্রতিটি ম্যাচেই ভালো করতে হবে দলটিকে। বিপিএলের ৩০তম ম্যাচে পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষে থাকা খুলনা টাইটান্সের বিপক্ষে লড়বে দলটি। অর্থাৎ প্রথম ম্যাচেই বড় ধরণের বিপদে পড়বে রাজশাহী।
অন্যদিকে ৩৩তম ম্যাচে চিটাগংয়ের বিপক্ষে লড়বে ড্যারেন সামী নেতৃত্বাধীন রাজশাহী। শেষ চারের টিকিটে দৌঁড়ে দুই দলই একে অপরের কঠিন শত্রু বটে। তাই ধারণা করা যায়, খেলাটি চরম প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ হবে।
আবার ৩৬ তম ম্যাচে ঢাকার বিপক্ষে এবং ৪০তম ম্যাচে চিটাগংয়ের বিপক্ষে লড়বে দলটি।