আগামী বছর রাশিয়া বিশ্বকাপের ড্র অনুষ্ঠিত হয়েছে গতকাল। এতে কঠিন গ্রুপে পড়েছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জার্মানি ও রানার্সআপ আর্জেন্টিনা। এফ গ্রুপে জার্মানির প্রতিপক্ষ মেক্সিকো, সুইডেন ও দক্ষিণ কোরিয়া। ডি গ্রুপে আর্জেন্টিনা পেয়েছে ক্রোয়েশিয়া, আইসল্যান্ড ও নাইজেরিয়াকে। ৫ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল ই গ্রুপে খেলবে সুইজারল্যান্ড, কোস্টারিকা ও সার্বিয়ার বিপক্ষে।
তাদের তুলনায় সহজ গ্রুপে রয়েছে ব্রাজিল। ই গ্রুপে ব্রাজিলের সাথে আছে সুইজারল্যান্ড, কোস্টারিকা, সার্বিয়া।
নিম্নে ২০১৮ সালের রাশিয়া অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপ ফুটবলের গ্রুপ দেয়া হলো।
গ্রুপ এ : রাশিয়া, উরুগুয়ে, মিসর, সৌদি আরব।
গ্রুপ বি : পর্তুগাল, স্পেন, মরক্কো, ইরান।
গ্রুপ সি : ফ্রান্স, পেরু, অস্ট্রেলিয়া, ডেনমার্ক।
গ্রুপ ডি : আর্জেন্টিনা, ক্রোয়েশিয়া, আইসল্যান্ড, নাইজেরিয়া।
গ্রুপ ই : ব্রাজিল, সুইজারল্যান্ড, কোস্টারিকা, সার্বিয়া।
গ্রুপ এফ : জার্মানি, মেক্সিকো, সুইডেন, দণি কোরিয়া।
গ্রুপ জি : বেলজিয়াম, ইংল্যান্ড, পানামা, তিউনিসিয়া।
গ্রুপ এইচ : পোল্যান্ড, কলম্বিয়া, সেনেগাল, জাপান।
‘ফেবারিট জার্মানি ও ব্রাজিল’
গত পরশু ছিল গ্যারি লিনেকারের ৫৭তম জন্মদিন। জন্মভূমি ইংল্যান্ড থেকে বহু দূরে রাশিয়ায় বসে এই বিশেষ দিন উদযাপন করেছেন তিনি। রাশিয়ায় তার অবস্থান গতকাল অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের ড্রয়ের জন্য। ইংল্যান্ডের এ স্ট্রাইকার দুইটি বিশ্বকাপে খেলেছেন। ১৯৮৬ সালে মেক্সিকো বিশ্বকাপে জিতেছেন গোল্ডেন বুট। সেবার তার দল কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনার কাছে হেরে বিদায় নেয়।
১৯৯০ সালে ইংল্যান্ড যেতে পেরেছিল সেমিফাইনাল পর্যন্ত। এরপর থেকে বিশ্বকাপের সময় বিবিসিতে বিশ্লেষক হিসেবে কাজ করেছেন। তা টানা ছয় বিশ্বকাপে। এই ভূমিকায় তাকে পাওয়া যাবে আগামীতেও। তবে আগামী বিশ্বকাপে সম্ভাব্য ফেবারিটের তালিকায় লিনেকার রেখেছেন জার্মানি ও ব্রাজিলকে। তার মতে, ‘ইতিহাসের দিকে চোখ বুলান, সব সময়ইতো সাফল্য পেয়েছে তারা। আপনি কোনোভাবেই দল দুইটিকে বাদ দিতে পারেন না।’
এরপরেই আছে স্পেন ও ফ্রান্স। তার বক্তব্য, ‘ফ্রান্স বেশ ব্যালান্সড দল।’ তবে নিজ দেশ ইংল্যান্ডকে কোনোভাবেই ফেবারিটের তালিকায় রাখেননি তিনি। তবে পরবর্তী বিশ্বকাপে আশা জাগানোর মতো ফুটবলার আছে ইংল্যান্ডেরÑ বললেন তিনি।
বিশ্বকাপে নিজের খেলার স্মৃতি ও অভিজ্ঞতাকে সামনে এনে লিনেকার বলেন, ‘বিশ্বকাপ আমার জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এক কথায় স্পেশাল। এতে কোনো সন্দেহ নেই। আমি দুইটি বিশ্বকাপে খেলেছি। প্রথমটিতে জিতেছি গোল্ডেন বুট। পরেরটিতে গোল করেছি কয়েকটি।’ আরো জানান, প্রত্যেক ফুটবলারের জন্যই বিশাল সুযোগ এ আসরে নিজের সেরাটা প্রদর্শনের। সূত্র : ফিফা।
লক্ষ্য একটাই- বিশ্বকাপ
আবার দরজায় কড়া নাড়ছে বিশ্বকাপ ফুটবল। গতকাল হয়ে গেল এর ড্র। বিশ্বকাপের প্রসঙ্গ এলেই সামনে আসে পাঁচবারের ট্রফি জয়ী ব্রাজিলের গত আসরের সেমিতে জার্মানির কাছে ৭-১ গোলে হারের কাহিনী, যা তাদের সম্মানকে মাটিতে নামিয়ে এনেছিল। এরপর অবশ্য তারা অলিম্পিক গেমস ফুটবলের স্বর্ণ জিতেছিল। এখন তারা ফিফা র্যাংকিংয়ে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করলেও কিছু দিন আগেও ছিল এক নম্বরে। দেশটির বিশ্বখ্যাত ফুটবল তারকা নেইমারের মন্তব্য, ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে আমার ও ব্রাজিলের লক্ষ্য শিরোপায় হাত ছোঁয়ানো।
২০১৪ সালে নিজ দেশে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের শিরোপা না পাওয়ার জ্বালা মেটাতে আসন্ন বিশ্বকাপ জয়ের জন্য সব কিছুই করবেন বলে জানিয়েছেন ব্রাজিলীয় ফুটবল সুপার স্টার নেইমার। নিজেদের মাটিতে আয়োজন করার কারণে ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ ব্রাজিলেই থাকবে বলে আশা করা হলেও টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে চ্যাম্পিয়ন জার্মানির কাছে লজ্জাজনক হারে বিদায় নেয় ব্রাজিল। ঘটনাটি গোটা ব্রাজিল তথা ফুটবল বিশ্বে শোকের ছায়া ফেলে। তবে এবারের বাছাইপর্বে ল্যাতিন জোন থেকে সবার ওপরে থেকে বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে কোচ তিতের অনুসারীরা। এখন রাশিয়া থেকেই এই শিরোপা ছিনিয়ে আনতে চায় দলটি।
দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বাছাইপর্বে একটি মাত্র ম্যাচে পরাজিত হয়েছে ব্রাজিল। দলের প্যারিস সেন্ট জার্মেই (পিএসজি) তারকা নেইমারের আত্মবিশ্বাসও এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে। ফিফা ডট কমকে তিনি বলেন, ‘বিশ্বকাপের পর দুই তিন বছর আগের তুলনায় ব্রাজিলের বর্তমান দলটির প্রতি অন্য দলগুলোর সমীহ বেশি। মানুষ এখন আমাদের আলাদা চোখে দেখছে। আবারো ব্রাজিলের প্রতি সমর্থন এবং সম্মানবোধ ফিরে এসেছে। দর্শকেরা এখন আমাদের খেলা দারুণভাবে উপভোগ করছে। এসব ঘটনা আমাদেরকে অনেক আনন্দ দিচ্ছে। আমাদের সমর্থক এবং দেশবাসীর মনোভাব এখন পরিবর্তন হয়ে গেছে।’
নেইমার বলেন, ‘আসন্ন বিশ্বকাপকে সামনে রেখে সবাই এখন বেশ প্রত্যয়ী। তারা এখন আনন্দচিত্তে বিশ্বকাপের দিকে তাকিয়ে আছে।
গত বিশ্বকাপ ছিল নেইমারের জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক। পিঠের ইনজুরির কারণে তাকে টুর্নামেন্ট থেকে সরে দাঁড়াতে হয়েছিল। কোয়ার্টার ফাইনালে কলম্বিয়ার মোকাবেলা করার সময় প্রতিপক্ষ দলটির ফুটবলার হুয়ান জুনিগা হাঁটু দিয়ে নেইমারের পিঠে আঘাত করলে গুরুতর ইনজুরিতে পড়েন তিনি। ম্যাচে অবশ্য ২-১ গোলে জয়লাভ করে ব্রাজিল।
নেইমার বলেন, ‘এটি ছিল বিস্ময়কর ঘটনা। যে কারণে আমি আমার মতো করে বিশ্বকাপ শেষ করতে পারিনি। নিজ মাঠে দলকে চ্যাম্পিয়ন করাতে চেয়েছিলাম; কিন্তু আমি জিততেও পারিনি, হারতেও পারিনি। বিশ্বকাপ শেষ করা হয়নি আমার।। অপ্রত্যাশিতভাবে আমার টুর্নামেন্টটি শেষ হয়েছে একটি গুরুতর ইনজুরি নিয়ে। এ জন্য আমাকে যথেষ্ট ভুগতে হয়েছে।’
পিএসজি সুপার স্টার বলেন, ‘ওই সপ্তাহটি ছিল আমার জন্য খুবই বাজে। আমি প্রচুর কেঁদেছি এবং নিজেকেই প্রশ্ন করেছি কেন এমনটি হলো। তবে আপনার মানতে হবে, জীবনের এসব ঘটনাই আপনাকে আরো সুদৃঢ় করে তুলবে। হয়তো ওই সময়ের জন্য আপনি ব্যর্থ হয়েছেন কিংবা কিছু অর্জন করতে পারেননি; কিন্তু পরে আরো ভালো ভবিষ্যৎ গঠনে সেখান থেকে নেয়া শিক্ষা আপনি কাজে লাগাতে পারবেন।’
আমি মনে করি, ‘এবারের বিশ্বকাপ ব্রাজিলের জন্য বিরাট কিছু। বিশেষ করে শিরোপা জয়ের জন্য আমি আমার সব কিছুই উজাড় করে দেবো।’
dailynayadiganta