khaleda_zia

বিজয় দিবসে স্মৃতিসৌধে যাবেন খালেদা জিয়া

১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় উপলক্ষে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের মহান শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে যাবেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এরপর তিনি রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সমাধিতে যাবেন।

শুক্রবার এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিএনপি চেয়ারপাসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান।

তিনি বলেন, শনিবার জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের মহান শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন খালেদা জিয়া। এরপর রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন তিনি।

এর আগে শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় তিনি গুলশানের বাসভবন থেকে রওনা দেবেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

রাজনীতিতে সরকারের নানা কৌশল, শঙ্কিত নন খালেদা জিয়া
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই রাজনীতিতে উত্তাপ বাড়ছে। চলছে নানা কৌশলের খেলা। এক্ষেত্রে সরকারের নানামুখী কৌশল ক্রমেই দৃশ্যমান হচ্ছে। তবে সরকারের এসব কূটকৌশলে মোটেও শঙ্কিত নন দেশের প্রধান বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।

সরকারের সাম্প্রতিক তৎপরতায় এটা স্পষ্ট হচ্ছে যে, কোনো ধরনের সংলাপ-সমঝোতা ছাড়াই একাদশ নির্বাচন করতে চায় তারা। এক্ষেত্রে জাতীয় পার্টি ও বাম দলগুলোকে সঙ্গে নিয়েই নির্বাচনে যাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

তবে বিএনপি নেতারা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, দেশে আর কাউকে একতরফা নির্বাচন করতে দেবে না। যেকোনো মূল্যে প্রতিরোধ করবে। নির্বাচন হলে সমঝোতার ভিত্তিতে নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে হবে। অন্যথা কঠোর আন্দোলনে যাবে তারা।

এদিকে সরকারের আরেকটি কৌশল হলো- শেষ পর্যন্ত যদি সবার অংশ গ্রহণের ভিত্তিতে নির্বাচন করতেই হয় তা হলে যেকোনো মূল্যে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নির্বাচনের বাইরে রাখা। এক্ষেত্রে খালেদা জিয়ার দুটি মামলা রায়ের জন্য চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ক্ষমতাসীনদের ধারণা, মামলাগুলোর রায়ে খালেদা জিয়া দণ্ডিত হয়ে নির্বাচনের জন্য অযোগ্য ঘোষিত হতে পারেন।

আর এটি হলে নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপিতে নতুন করে ভাঙ্গনের খেলাও হতে পারে বলে ধারণা ক্ষমতাসীনদের। এভাবে বিএনপিকে বেকায়দায় ফেলে নির্বাচনের মাধ্যমে আরেকবার ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন দেখছে ক্ষমতাসীনরা। তবে মামলার ব্যাপারে মোটেও বিচলিত নন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

‘আমার মামলা নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কিছুই হবে না। বিএনপিকে চাপে রাখতে সরকার মামলাকে অস্ত্র হিসেবে বেছে নিয়েছে।’ গতরাতে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তার বিরুদ্ধে বিশেষ আদালতে চলা মামলা সম্পর্কে এ ধরনের মন্তব্য করেন। বৈঠক শেষে এক নেতা এ কথা জানিয়েছেন।

বকশীবাজারের বিশেষ আদালতে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল মামলা চলছে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য শেষ করেছেন খালেদা জিয়া। আগামী ১৯, ২০, ২১ ডিসেম্বর এ মামলার যুক্তিতর্কের পরবর্তী তারিখ।

তবে দুই বড় দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি যে নির্বাচনী পথে হাঁটছে-তা দলের শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যে উঠে আসছে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ‘সামনে নির্বাচন, দল গোছান’ বলে নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় নেতাকর্মীদের। সেদিন গণভবনে একটি জেলার নেতারা সাক্ষাৎ করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী আগামী বছরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বিবেচনায় রেখে দলীয় কার্যক্রমকে ‘সুসংগঠিত’ করার নির্দেশনা দেন।

এর আগে বিভিন্ন সময় তিনি এবার নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ও সব দলের অংশগ্রহণে হবে এবং বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে বলে সতর্ক করে দেন এবং দলকে সেভাবেই প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেন।

একইভাবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদসহ শীর্ষ নেতারা ‘বিএনপি নির্বাচনে যাবে, সেটা শেখ হাসিনার অধীনে নয়’ বলে মন্তব্য করেন। তারা বলেছেন, কোনো ষড়যন্ত্র করেও বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখা যাবে না। কাউকে একতরফা নির্বাচনও করতে দেয়া হবে না।

রাজনৈতিক সূত্রমতে, বিএনপির সমাবেশের পর থেকেই মূলত প্রকাশ্যে আসে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সংসদের বাইরে বিরোধী দল বিএনপির নির্বাচনী রাজনীতির নানা কর্মসূচি। বিএনপির সমাবেশের পর নিজেদের অবস্থান জানান দিতে পাল্টা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামে আওয়ামী লীগ।

এ সময় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে এবং প্রথম বর্ষপূতিকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াতের সহিংস রাজনীতি তুলে ধরতে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঠে নামাতে পারে দলটি। আয়োজন করতে পারে প্রতিবাদ সমাবেশেরও।

অনুরূপভাবে ৫ জানুয়ারিকে ঘিরে আরো কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির। এবার কক্সবাজারের আদলে সড়কপথে সিলেট বা রাজশাহী যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে খালেদা জিয়ার। এ সময় জনসংযোগ ও পথসভা করবেন তিনি। এজন্য স্থানীয় নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নিতেও বলা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ দলীয় সূত্রগুলো বলছে, বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে বাধা না দিয়ে বরং সহায়তা করার পক্ষে দলের নীতিনির্ধারকরা। সভা-সমাবেশের সুযোগ তৈরি করে দিয়েই দলটির লাগাম টেনে ধরতে চান তারা। তাদের মতে, মাঠে নামার সুযোগ দিচ্ছে না, সভা-সমাবেশ করতে দেওয়া হয় না বলে বিএনপির যে অভিযোগ, সেগুলোর ভিত্তিহীন প্রমাণ করতে ও ‘ষড়যন্ত্রের রাজনীতি’ বন্ধ করতেই এই কৌশল।

ক্ষমতাসীনরা মনে করছেন, নির্বাচনকেন্দ্রিক নানা দাবি নিয়ে মাঠে থাকলে আবারও সংঘর্ষে জড়াতে পারে দলটি। সে ক্ষেত্রে এখনকার মতো ভবিষ্যতেও তাদের কোণঠাসা করে রাখা যাবে। তা ছাড়া সভা-সমাবেশসহ নানা দিক নিয়ে ব্যস্ত রাখা গেলে নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র করতে পারবে না দলটি। এর মধ্য দিয়ে নির্বাচনী মাঠে বিএনপির অবস্থান সম্পর্কে অবহিত হওয়া যাবে এবং সে অনুযায়ী সরকারি দলও নির্বাচনী কৌশল নিতে পারবে।

এদিকে বেশ কিছু দিন ধরেই বেশ সক্রিয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসি চাইছে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী আগামী নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করতে, কিন্তু ম্যাজেস্ট্রেসি ক্ষমতা না দিতে। একইভাবে ইভিএম ব্যবহার না করতে। তবে এ নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মুখোমুখি অবস্থানে থাকায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না সংস্থাটি।

আবার নির্বাচনকালীন সরকার নিয়েও তুমুল বিতর্ক রয়েছে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে। এক্ষেত্রে প্রধান দুই জোট বিপরীত অবস্থানে অনঢ় রয়েছে। ফলে একাদশ সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin