বিচারকের প্রতি ‘ওহী’ নাজিল না হলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালাস পাবেন বলে মন্তব্য করেছেন তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে আলাদতের কার্যক্রম শেষে উপস্থিত সাংবাদিকরেদর কাছে তিনি এ মন্তব্য করেন।
খন্দকার মাহবুব বলেন, ‘প্রতিপক্ষ আদালতে যে তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন, তাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের সম্পৃক্ততা তারা প্রমাণ করতে পারেননি। সবাই জানেন, এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা। আদালতের বিচারকের ওপর ওহী নাজিল না হলে মামলা থেকে খালেদা জিয়া খালাস পাবেন।’
এর আগে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘আমরা ৩২ জন সাক্ষী ও তথ্য-প্রমাণের মাধ্যমে প্রমাণ করতে পেরেছি। আশা করছি, আদালতে আসামিরা সর্বোচ্চ শাস্তি পাবেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘খালেদা জিয়া টাকা বণ্টন করে দিয়েছেন ট্রাস্টের নামে। তারা স্বীকার করেছেন ট্রাস্টের নামে টাকা জমা আছে। এতে করে এটাই প্রমাণ হয়, তারা আত্মসাৎ করেছেন।’
এর আগে খালেদা জিয়ার পক্ষে পঞ্চম দিনের মতো জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন তার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন।
এ সময় তিনি বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে রাজনৈতিকভাবে হেনস্তা করার জন্য এ মামলাটি করা হয়েছে।’
এর আগে বেলা ১১টা ৩২ মিনিটে বকশীবাজারের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫নং বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামানের আদালতে খালেদা জিয়া উপস্থিত হন।
এর আগে গত ২৭ ডিসেম্বর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন আইনজীবী আব্দুর রেজাক খান। তার যুক্তি উপস্থাপন শেষে খন্দকার মাহবুব হোসেন খালেদার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন। বাকি যুক্তি তিনি বৃহস্পতিবারও তুলে ধরেন।
গত ১৯ ডিসেম্বর থেকে এ মামলার যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয়। রাষ্ট্রপক্ষ ১৯ ডিসেম্বর তাদের যুক্তি উপস্থাপন শেষ করে খালেদার সর্বোচ্চ শাস্তির আবেদন করেন। ২০ ডিসেম্বর থেকে খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন তার আইনজীবীরা।
মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় একটি মামলা করে দুদক।
২০১০ সালের ৫ আগস্ট তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশীদ। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।
মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া বাকি আসামিরা হলেন— মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।
এছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
পরে ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশীদ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
২০১৪ সালের ১৯ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়। এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন— খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী (পলাতক), হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর সাবেক নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
উৎসঃ poriborton