বিএনপি থেকেই তাবিথকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন শাকিল!

তফসিল ঘোষণার পরই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র পদে উপ-নির্বাচন নিয়ে দলগুলোতে তৎপরতা বেড়ে গেছে। বসে নেই রাজপথের বিরোধী দল বিএনপিও। গতবারের প্রার্থী তাবিথ আউয়াল এবারো দলটির হাই-কমান্ডের পছন্দের শীর্ষে রয়েছেন। তবে একাধিক নেতা দলের সমর্থন পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।

তাদের একজন বিএনপির সহ-প্রকাশনা সম্পাদক শাকিল ওয়াহেদ। তিনি তাবিথ আউয়ালকে চ্যালেঞ্জ জানাতে প্রস্তুত রয়েছেন।

শাকিলের আত্মবিশ্বাস, তাবিথের মত ভোটের দিন মাঝপথে নিজেকে সরিয়ে নিবেন না তিনি। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে থেকে দলের জন্য ‘বিজয় ছিনিয়ে’ আনতে পারবেন বিএনপির এই নেতা।

ডিএনসিসির বিগত নির্বাচনে বিএনপির সমর্থিত প্রার্থী তাবিথ আউয়াল মাঝপথে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। এবারো দলটির পছন্দের তালিকায় শীর্ষে আছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যবসায়ী আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়াল।

যদিও এখন পর্যন্ত দল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। প্রার্থী চূড়ান্ত করতে আগামী সপ্তাহে দলটির নেতাদের বৈঠকে বসার কথা রয়েছে।

গত মঙ্গলবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উপ-নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি এখানে ভোট হবে।

বিএনপি থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও দলীয় মনোয়ন পাওয়ার বিষয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে নিজ কার্যালয়ে শাকিল ওয়াহেদ কথা বলেন পরিবর্তন ডটকমের সঙ্গে।

তাবিথ আউয়ালকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে ভালো প্রার্থীকেই দলীয় মনোনয়ন দেওয়া উচিত। ড্রইং রুম প্রার্থী আর মাঠের প্রার্থী কখনো এক হয় না। ভোট জনগণ দেন। এজন্য তাদের কাছে যেতে হবে। দলের নেতাকর্মীদের সংগঠিত ও উজ্জীবিত করতে হবে। তাদের সঙ্গে নিয়ে সাহস করে ড্রইং রুম থেকে বের হয়ে আসতে হবে। মাঠের প্রার্থী না হলে নেতাকর্মীরা পাশে থাকবে না। ড্রইং রুম প্রার্থী হলে এবারো সকাল ১০টার মধ্যে হয়তো প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে হবে বিএনপিকে।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘দল আমাকে মনোয়ন দিলে শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকব। আমার হয়ে অন্য কেউ নির্বাচন থেকে প্রত্যাহার করতে পারবেন না। নির্বাচনের শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকতে চাই। জনগণের জোয়ার উঠলে কারচুপি করে সেটা কাভার করতে পারবে না। এক-দুই ঘণ্টায় দুর্বৃত্তরা কতটা সিল মারতে পারবে? শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকলে জয় অবশ্যই আসবে।’

দলের সাংগঠনিক শক্তি সম্পর্কে শাকিল বলেন, ‘মাঠে নামলে শক্তি বেড়ে যায়। আমি মাঠে নামলে জনগণ আমার পাশে থাকবে। দলের প্রার্থী হয়ে ড্রইং রুমে বসে থাকলে কর্মী জীবন দেবে না। আমি মাঠ নামলে কর্মীরা আমার জন্য জীবন দিতেও প্রস্তুত থাকবে।’

শাকিল ওয়াহেদ বলেন, ‘ইসির আচরণ বিধি অনুসরণ করেই মাঠে থাকতে হবে। ঘরে বসে থাকলে নেতাকর্মীরা কেন্দ্র পাহারা দিয়ে আপনাকে মেয়র বানিয়ে দিবেন না। আমি মনে করি, বিএনপি অনেক বড় দল। এখানে ড্রইং রুম থেকে প্রার্থীকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমি নামব না অন্য কেউ নামবে এটা হবে না।’

তিনি বলেন, ‘নেত্রীর (খালেদা জিয়া) সঙ্গে মনোনয়ন নিয়ে এখনো কথা বলিনি। সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। দলের মনোয়নের প্রক্রিয়া আছে। যথা সময়ে আমি নেত্রীর সঙ্গে কথা বলব। দল মনোনয়ন দিলে আমি অবশ্যই নির্বাচন করব।’

দল তার পরিবর্তে অন্য কাউকে মনোনয়ন দিলে তার হয়েও কাজ করবেন বলে জানান শাকিল ওয়াহেদ।

তিনি বলেন, ‘আমি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। ঢাকা মহানগরীর শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলছি। দলের সিনিয়ির নেতা ও পেশাজীবী নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আমি যেহেতু এমবিএ অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব। এজন্য আমরা সংগঠনের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছি। বিভিন্ন পেশাজীবীদের সঙ্গে বিনিময় করেছি। সবাই আমার প্রতি শুভ কামনা জানিয়েছেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি ইতোমধ্যে নির্বাচনী ইশতিহারের খসড়া তৈরি করেছি। সমর্থন পেলে তা নেত্রীর কাছে জমা দেব।’

বাসযোগ্য ঢাকা গড়ার প্রত্যাশার কথা জানিয়ে শাকিল বলেন, ‘জনগণের কাছ থেকে মতামত পাওয়ার জন্য ইতোমধ্যে আমি পোস্টার দিয়েছি। যার স্লোগান হচ্ছে, ‘আসুন গড়ি বিশ্বমানের এক নগর’। ঢাকা এক জনবহুল শহর। তাই ঢাকা শহরটাকে বাসযোগ্য করতে হবে। উচ্চ শিক্ষা ও কাজের জন্য বিশ্বের বেশ কয়েকটা দেশে ভ্রমণ করা বা বসবাস করার সুযোগ আমার হয়েছে। কি কি সুবিধা লন্ডনের নাগরিকরা পায়, কি সুবিধা তারা ভোগ করেন, নিউইয়র্কসহ বিশ্বের যেসব সুন্দর সিটি রয়েছে তারা কি ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন, আমি খুব নিখুঁতভাবে দেখার সুযোগ পেয়েছি। আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে। কিন্তু, অধিকাংশ ব্যবধান কমিয়ে আনা সম্ভব। আমরা যদি সৎ ও আন্তরিক হই তাহলে নগরবাসীর জন্য অনেক সুবিধা নিশ্চিত করা সম্ভব বলে আমি বিশ্বাস করি।’

প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের কাজের মূল্যায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই ওই নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। তবে আনিসুল হক মেয়র হিসেবে জনগণের পালস ধরতে পেরেছিলেন। তিনি যে কাজগুলো শুরু করেছিলেন, মেয়র নির্বাচিত হলে আমি সেগুলোর ধারাবাহিকতা রক্ষা করব।’

উল্লেখ্য, প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আধা-বেলায় ৩ লাখ ২৫ হাজার ৮০ ভোট পান বিএনপির প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। ১ লাখ ৩৫ হাজার ৩৭ ভোট কম পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছিলেন তিনি। এবারো দলীয় সমর্থনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান তাবিথ আউয়াল।

গত ১০ ডিসেম্বর রোববার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ঢাকা সিটি উত্তর নির্বাচনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে তাবিথ আউয়ালের নাম উঠে আসে। তবে এটা নিয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

সর্বশেষ গত ৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ২০-দলীয় জোটের বৈঠকে ডিএনসিসি নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে প্রার্থী চূড়ান্তের বিষয়টি জোটের নেতারা জোটনেত্রী খালেদা জিয়ার হাতে ছেড়ে দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, তাবিথ আউয়াল ও শাকিল ওয়াহেদ ছাড়া বিএনপির দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) কামরুল ইসলাম। আর ২০-দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামীও নির্বাচনে মহানগর উত্তরের সভাপতি সেলিম উদ্দিনকে তাদের প্রার্থী করার কথা জানিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জোটের বৈঠকে জামায়াত নেতা আবদুল হালিম জানান, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে যে কেউ প্রার্থী হতে পারেন। তফসিলের পর জোটগতভাবে যাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে, তার পক্ষেই সবাই কাজ করবেন।

বিএনপি নেতা মেজর (অব.) কামরুল ইসলাম মঙ্গলবার পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘দলীয়ভাবে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হলে তারপর প্রচারণা শুরু করব আমরা। দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার জন্যই কাজ করব।’

প্রসঙ্গত, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) মেয়র পদে উপ-নির্বাচন এবং এই সিটির সঙ্গে নতুন যুক্ত হওয়া ১৮টি ওয়ার্ড এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সঙ্গে যুক্ত হওয়া নতুন ১৮টি ওয়ার্ডে সাধারণ নির্বাচন আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে।

এজন্য রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ১৮ জানুয়ারি নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এছাড়া যাচাই-বাছাই ২১ ও ২২ জানুয়ারি, প্রত্যাহার ২৯ জানুয়ারি এবং প্রতীক বরাদ্দ হবে ৩০ জানুয়ারি।

গতবছরের ৩০ নভেম্বর লন্ডনের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আনিসুল হক। এরপর ৩ ডিসেম্বর তার পদ শূন্য ঘোষণা করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

উৎসঃ   পরিবর্তন

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin