বিএনপি-জাতীয় পার্টি বৈঠক

যুক্তফ্রন্ট এবং গণফোরামের ঐক্যের ডামাডোলে জাতীয় পার্টির সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করছে বিএনপি। দুই দলের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি. এম. কাদেরের সঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের অন্তত দু’টি বৈঠক হয়েছে।

একটি বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার উপস্থিত ছিলেন। বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে, তারেক জিয়ার আগ্রহ এবং নির্দেশেই এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। জি. এম. কাদেরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এটিকে কোনো আনুষ্ঠানিক বৈঠক নয় বলে মন্তব্য করেন।

জি. এম. কাদেরের মতে, ‘এটা স্রেফ সামাজিক সৌজন্যতা। তবে তিনি বলেন, ’আগামী নির্বাচন নিয়ে দেশে একটি গভীর সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপের বিকল্প নেই।’

তবে বিএনপির কোনো নেতাই এই বৈঠকের ব্যাপারে জাতীয় পার্টির কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। একাধিক সূত্র বলছে, এই বৈঠকের ব্যাপারে জাতীয় পার্টির প্রধান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সম্মতি রয়েছে। জানা গেছে, দু’পক্ষের মধ্যে আরও কথাবার্তা হবে।

একাধিক সূত্র বলছে, তারেক জিয়া যুক্তফ্রন্ট এবং গণফোরামের সঙ্গে জোটের ঐক্যে আগ্রহী নন। সুস্ঠু নির্বাচনের দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন পর্যন্ত তাদের সঙ্গে যেতে চান। ঢাকায় দুই নেতার সঙ্গে আলাপকালে তারেক স্পষ্ট করেই বলেছেন, ভোটের বাজারে ওদের (ড. কামাল ও বি. চৌধুরী) কোনো মূল্য নেই। ঐ সূত্র মতে, এদের সঙ্গে নির্বাচনী ঐক্যের চেয়ে তারেক ২০ দল এবং জাতীয় পার্টির ঐক্যে বেশি আগ্রহী।

বিএনপির একাধিক নেতার মতে, বিএনপি-জামাত-জাতীয় পার্টির ঐক্য হলে কারচুপি করেও আওয়ামী লীগ জিততে পারবে না। এজন্য বাইরে যুক্তফ্রন্টের ঐক্য প্রক্রিয়ায় আগ্রহ দেখালেও বিএনপির আগ্রহ জাপা’য়। বিএনপির একজন নেতা বলেন, ’জাতীয় পার্টির সঙ্গে আমাদের আদর্শিক মিল রয়েছে।’ ঐ নেতার মতে, শুধু জাতীয় পার্টি নয়, আমরা ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনসহ ইসলাম পছন্দ দলগুলোকেও আমাদের ছাতায় আনতে চাই।’

এদিকে জাতীয় পার্টি সূত্রে জানা গেছে, শেষ পর্যন্ত যদি বিএনপি নির্বাচনে আসে, তাহলে জাপা আওয়ামী লীগ অথবা বিএনপির সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতায় যাবে। তবে এরশাদ তাঁর সঙ্গেই ঐক্যে যেতে আগ্রহী যারা জাতীয় পার্টিকে এবার খুব বেশি আসনে ছাড় দেবে। অন্য একটি সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগের সঙ্গেই শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টি ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করবে।

কিন্তু আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে এবার খুব বেশি আসনে ছাড় দিতে রাজি নয়। এজন্যই নিজেদের দাম বাড়াতে জাপা বিএনপির দিকে ঝোঁকার কৌশল নিয়েছে। শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টি বিএনপির সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা করবে কিনা সেটি নিশ্চিত না হলেও রাজনীতির এই নতুন মেরুকরণ ঐক্যের হিসেব নিকেশ পাল্টে দিয়েছে।

তবে, জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি.এম. কাদের বলেছেন, ‘জাতীয় পার্টি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি সমর্থন করে না। এনিয়ে কোনো আন্দোলনেও আমরা বিশ্বাসী নই। বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশ নেয় তাহলেই কেবল তাঁদের সঙ্গে সমঝোতার বিষয়টি ভাবা হতে পারে।’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারও বলেছেন, ‘আমরা যদি নির্বাচনে যাই, তাহলে তো যেকোনো দলের সঙ্গেই নির্বাচনী সমঝোতা করতে পারি।


বাংলা ইনসাইডার

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin