বিএনপি ছাড়াই গ্রহণযোগ্য নির্বাচন?

বিএনপি অংশগ্রহণ না করলেও নির্বাচন যদি অবাধ ও নিরপেক্ষ হয় সেক্ষেত্রে আপত্তি নেই ভারতসহ শীর্ষ উন্নয়ন সহযোগীদের। তবে তারা ৫ জানুয়ারির মতো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত এমপি দেখতে চান না। ভারত চায়, যে রাজনৈতিক দলই নির্বাচনে অংশ নেবে তারা যেন অবাধ ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন করতে পারে। নির্বাচন যেন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়।

প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টার কাছে কূটনীতিকরা এরকমই মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী আগামী নির্বাচন নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, একাধিক মর্কিন কূটনীতিক এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাদা আলাদা ভাবে কথা বলেছেন।

যোগাযোগ করা হলে, ড. গওহর রিজভী বাংলা ইনসাইডারকে বলেছেন, ‘আমরা অবশ্যই একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। একটা ইনক্লুসিভ (অংশগ্রহণমূলক) ইলেকশন চাই। কিন্তু একটি দল অংশগ্রহণ না করলেই নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে না এই ধারণা ঠিক নয়।’ তাঁর মতে ` এই প্রবণতা একটি ভয়াবহ প্রবণতা এবং এক ধরনের ব্লাকমেইলিং।

এটি গণতান্ত্রিক ধারার পক্ষে একটি বড় বাধা। `ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ সহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে আলাপের কথা স্বীকার করে ড. রিজভী বলেছেন ` আমি শুধু বোঝাতে চাইছি, একটি দলের ইচ্ছা অনিচ্ছায় গণতন্ত্রের ভাগ্য নির্ধারিত হতে পারে না।’ তবে তিনি বলেন, `আমরা নির্বাচনে বিএনপিকে ওয়েলকাম করি। আমরা এটাও বলি, বিএনপি নির্বাচনে আসুক আমরা চাই।’

তিনি মনে করেন, `বিএনপি যদি গণতান্ত্রিক ধারায় বিশ্বাস করে তাহলে অবশ্যই নির্বাচনে আসবে। কিন্তু গতবারের মতো যদি তারা নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে গণতন্ত্রকে বাধাগ্রস্থ করতে চায়, তাহলে তো আমাদের সাংবিধানিক পথেই যেতে হবে।’

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি ড. গওহর রিজভী দিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠক করে এসেছেন। যদিও দুদেশের পররাষ্ট্র দপ্তরই বলছে এটা অফিসিয়াল কোনো বৈঠক না, ব্যক্তিগত সাক্ষাৎ। কিন্তু ড. রিজভীও স্বীকার করেছেন, ব্যক্তিগত আলাপ চারিতায় বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে কিছু কথাবার্তা হয়েছে।

তবে এসব ব্যক্তিগত আলাপ নিয়ে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি। সুষমা স্বরাজ ছাড়াও তিনি ভারতের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গেও দেখা করেছেন। আগামী নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত যদি বিএনপি অংশ না নেয় সেক্ষেত্রে পাশের দেশ এবং উন্নয়ন সহযোগীরা যেন নির্বাচনকে বৈধতা দিতে কার্পন্য না করে সেজন্যই সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে ড. রিজভীর এই তৎপরতা বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

সূত্র মতে, বেগম জিয়া দণ্ডিত হলে শেষ পর্যন্ত বিএনপি আবারও ২০১৪ র মতো নির্বাচন বর্জনের পথে হাঁটতে পারে। তখন ‘সকল দলের অংশ গ্রহণে’ নির্বাচন সম্ভব নাও হতে পারে। এর আগে সুষমা স্বরাজ ঢাকায় এসে ‘সকল দলের অংশগ্রহণে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যাপারে ভারতের আগ্রহের কথা জানিয়েছিলেন। ড. রিজভী ভারতকে বোঝাতে চেয়েছেন, বিএনপি অংশগ্রহণ করা না করা দলটির রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এজন্য নির্বাচন বন্ধ হবে কীভাবে? গওহর রিজভী এটাও বুঝিয়েছেন, ভারত এরকম অবস্থান নিলে বিএনপির দাবি দাওয়ার তালিকা আরও দীর্ঘ হবে। সেজন্য তিনি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে তিনটি বৈশিষ্ট্যের উপর জোর দিয়েছেন।

১। নির্বাচন কমিশনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ও নিয়ন্ত্রণে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

২। সকল দল থাকবে এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।

৩। নির্বাচন হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কোথাও নির্বাচন হবে না।

ড. গওহর রিজভী বোঝাতে চেয়েছেন, বিএনপি অংশগ্রহণ না করলেও নির্বাচন যদি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হয় তাহলে সেটি যেন গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হিসেবেই বিবেচিত হয়। সূত্রমতে, সুষমা স্বরাজ সহ ভারতের পদস্থরা ড. রিজভীর বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন। সূত্রমতে, দিল্লি থেকে ফিরেই রিজভী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। ড. রিজভী তাদেরও ভারতের মনোভাব জানিয়েছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত যদি শেষ পর্যন্ত বিএনপিকে বাদ দিয়ে নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য মানতে রাজি হয় তাহলে নির্বাচনী চাপ আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপির দিকেই চলে যাবে। সেক্ষেত্রে, বিএনপির জন্য আন্দোলন কঠিন হয়ে পরবে।

বাংলা ইনসাইডার

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin