bnp_12_november

বিএনপি এখন কী করবে?

আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে দেশের রাজনীতিতে উত্তাপ-উত্তেজনা ততই বাড়ছে। বিশেষ করে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধীদল বিএনপির মধ্যে বাকযুদ্ধ চলছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন আগামী নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকার তথা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই অনুষ্ঠিত হবে।

আর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও তার দলের নেতারা বলছেন বর্তমান সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। খালেদা জিয়া একাধিকবার বলেছেন শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচনে তার দল অংশ নেবে না।
এমনকি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে দেশে কোনো নির্বাচন তারা হতেও দেবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। এখনও পর্যন্ত প্রত্যেক দলই তাদের দাবির পক্ষে অনঢ় অবস্থানে রয়েছে।

সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার রাতে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে পরিষ্কার করে বলেছেন, আগামী নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ীই হবে। সংবিধান অনুয়ায়ীই নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা হবে। নির্বাচনে অংশ না নিয়ে যারা প্রতিহত করার চেষ্টা করবে জনগণ তাদেরকে প্রতিহত করবে।

এমনকি গত বুধবারও তিনি পুলিশ সদস্যদেরকে নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের নামে যারা দেশে সহিংসতা সৃষ্টি করবে তাদেরকে কঠোর হাতে দমন করতে হবে।

এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যদি আবারো ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি নির্বাচন করতে চায় তাহলে বিএনপি কী করবে? নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি কি বিএনপি আদায় করতে পারবে?

অথবা আওয়ামী লীগ যদি শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে বিএনপি কি সেই নির্বাচন ঠেকাতে পারবে? নাকি শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচনে অংশ নেবে?

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের টার্গেট হলো যেকোনো ভাবে আগামীতে আবার ক্ষমতায় আসা। এমন নির্বাচন সরকার দেবে না, যে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে খালেদা জিয়া দেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন।

মোট কথা বর্তমান সরকার বিএনপিকে আর ক্ষমতায় আসতে দেবে না। এজন্য যা যা করা দরকার আওয়ামী লীগ সবই করবে।

রাজনীতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগের টার্গেট হলো বিএনপিকে জাতীয় পার্টির মতো পঙ্গু করে দেয়া। আগামীতেও যদি বিএনপি ক্ষমতার বাইরে থাকে তাহলে নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা চলে আসবে।

সিনিয়র নেতারা অন্য দলে যোগ না দিলেও নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়বে। আর মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা দল ছেড়ে অন্য কোনো দলে যোগ দেবে। এভাবে দুর্বল হয়ে পড়বে বিএনপি। এক সময় দেখা যাবে বিএনপির অবস্থাও এরশাদের জাতীয় পার্টির মতো হয়ে যাবে।

তাদের মতে, অস্থিত্ব টিকিয়ে রাখতে বিএনপির সামনে এখন একটিই মাত্র পথ। আর সেটা হলো আন্দোলনের মাধ্যমে নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায় করা। কারণ, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে অংশ নিলে বিএনপি ৫০ টির বেশি আসন পাবে না কিংবা দেয়া হবে না।

এখন দেখার বিষয় বিএনপি কোন পথে হাঁটে। শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবে নাকি আন্দোলনের মাধ্যমে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে সরকারকে বাধ্য করবে।

অ্যানালাইসিস বিডি

ভুল বিএনপির, ক্ষতি আওয়ামী লীগের!

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি যে একতরফা নির্বাচনটি হয়েছিল, সেই নির্বাচনের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত সরকার অনেক সংশয়-সন্দেহ সত্ত্বেও গতকাল চার বছর পূর্তি উদ্যাপন করেছে। যে দেশে জনপ্রিয়তা পদ্মপাতার পানির মতো, সে দেশে এ রকম একটি নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ বলতে গেলে হেসেখেলে চার বছর কাটিয়ে দিয়েছে, সে জন্য তারা কৃতিত্ব দাবি করতেই পারে। কিন্তু সেই কৃতিত্বের পাশাপাশি একটি হতাশারও ছাপ লক্ষ করা যাচ্ছে। বিশেষ করে আগামী নির্বাচন নিয়ে।

সরকারের চার বছর পূর্তির আগের দিন প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের ৬৪টি জেলায় উন্নয়ন মেলার উদ্বোধন করেছেন। গতকাল প্রকাশিত সরকারি ক্রোড়পত্রেও সরকারের সাফল্য ও উন্নয়নের বিরাট ফিরিস্তি আছে। এর পাশাপাশি গণমাধ্যমগুলোও সরকারের চার বছরের হিসাব-নিকাশ মেলানোর চেষ্টা করেছে। প্রথম আলো ৫ জানুয়ারি থেকে বিভিন্ন খাতে সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতার খতিয়ান তুলে ধরার চেষ্টা করেছে নিজস্ব প্রতিবেদন ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের মাধ্যমে।

এই চার বছরে সরকার কী করেছে, বিরোধী দল কী করেছে, আর জনগণ কী পেয়েছে-ঘুরেফিরে এই প্রশ্নই সামনে এসেছে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে যেসব খবর ছাপা হয়েছে তার মর্মার্থ হলো, উন্নয়নের সূচকে আমরা এগিয়ে গেলেও গণতন্ত্রের সূচকে পিছিয়ে আছি। কেন পিছিয়ে আছি-সরকার সব দায় বিরোধী দলের ওপর চাপাবে, বিরোধী দল সরকারকে দোষারোপ করবে। কিন্তু সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে? নিরানব্বই ভাগ মুক্ত অর্থনীতিতে তারা আশা করে না সরকার সব মানুষকে কাজ দেবে, সবার খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করবে (যদিও আমাদের সংবিধানে সেরকম কথাই লেখা আছে)। কিন্তু জনগণ এটুকু তো আশা করতে পারে, স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে তারা দেশের শাসনপ্রক্রিয়ায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে। আর সেটি সম্ভব একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে। প্রাচীন গ্রিকের মতো বর্তমানে নগররাষ্ট্র নেই যে সব নাগরিক এক জায়গায় বসে দেশ পরিচালনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। এ কারণে ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি বাছাইয়ের রীতি চালু হয়েছে এবং প্রতিটি গণতান্ত্রিক দেশই তা মেনে চলে। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো, গত ৪৬ বছরে কীভাবে নির্বাচন হবে, সে বিষয়ে আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব একমত হতে পারেননি। আজ বিরোধী দল, তথা বিএনপি আওয়ামী লীগের ওপর ভরসা করতে না পেরে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার চাইছে। আওয়ামী লীগও বিরোধী দলে থাকতে বিএনপির ওপর অনাস্থা প্রকাশ করে একই দাবি তুলেছিল এবং আন্দোলনের মাধ্যমে তা আদায়ও করেছে। ভবিষ্যতে কখনো আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে গেলে যে দাবিটি ফের সামনে আনবে না, সে কথা জোর দিয়ে বলা যায় না।

আওয়ামী লীগ সরকার তার পাঁচ বছরে মেয়াদের চার বছর পার করেছে। আজ ১৩ জানুয়ারি থেকেই ক্ষণ গণনা শুরু হলো। আগামী এক বছরের মধ্যে নির্বাচন হতে হবে। আওয়ামী লীগের নেতারা প্রায়ই আক্ষেপ করেন, তাঁরা জনগণের জন্য এত কাজ করেছেন, অথচ গণমাধ্যমে তার প্রচার নেই। তারা নাকি বেছে বেছে সরকারের ত্রুটি ও ব্যর্থতাগুলোই তুলে ধরে। কিন্তু নেতারা ভুলে যান যে সরকার ভালো কাজ করলে তা ঢাক পিটিয়ে বলার প্রয়োজন হয় না। তারা যুদ্ধাপরাধের বিচার করেছে। গণমাধ্যম ফলাও করে তা প্রচার করেছে। সরকার জঙ্গিদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে। গণমাধ্যম সেই পদক্ষেপকেও স্বাগত জানিয়েছে।
বিগত নির্বাচনে বিএনপি না গিয়ে ভুল করেছে বলে আওয়ামী লীগ নেতারা জোর গলায় প্রচার করে থাকেন। তাঁদের এ কথার পেছনে যুক্তিও হয়তো আছে। কিন্তু সেই সঙ্গে এ-ও স্বীকার করতে হবে যে বিএনপিকে বাইরে রেখে নির্বাচন করায় বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সংসদের ভেতরে ও বাইরে শক্তিশালী বিরোধী দল না থাকায় ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। তাঁরা প্রশাসনকে নিজের মনে করেন। কথায় কথায় গণমাধ্যমকে হুমকি দেন। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আফসানা আহমেদের মতো যদি কেউ অন্যায়ের প্রতিবাদ করেন, তাঁকে ঘরের বাইরে রাত কাটাতে হয়। ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সাময়িক লাভবান হলেও ক্ষতির পাল্লাটা ভারী বলে মনে করি। বিএনপি আজ মাঠে বা সংসদে-কোথাও নেই। তারপরও আওয়ামী লীগ ভরসা পাচ্ছে না। আমাদের রাজনীতিকেরা কে কত বছর ক্ষমতায় থাকলেন, সেটি নিয়ে বড়াই করেন; কিন্তু পরবর্তী নির্বাচনে কীভাবে জনপ্রিয়তা ধরে রাখবেন, সে নিয়ে মোটেই মাথা ঘামান না।

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরকার তার সাফল্যের বার্তা জনগণের কাছে পৌঁছে দেবে আর বিরোধী দল সরকারের ভুলত্রুটিগুলো তুলে ধরবে। এরপর জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে কাকে বেছে নেবে। কিন্তু মনে হচ্ছে, সরকার বিরোধী দলকে সেই সুযোগটি দিতে চায় না। যেই নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে, সেই নির্বাচনকে বিএনপি ‘গণতন্ত্র হত্যা’ হিসেবে পালন করবে-সেটি তারা মেনে নেবে না স্বাভাবিক। কিন্তু ৫ জানুয়ারির পর অন্য কোনো দিন তাদের সভা করতে অনুমতি দিল না কেন? এতে জনগণের কাছে কী বার্তা গেল? গণতন্ত্র মানলে গণতন্ত্রের নিয়মকানুনগুলোও মানতে হবে।

আওয়ামী লীগের নেতারা আরেকটি কথা প্রায়ই বলেন, বিএনপির মুখে আইনের শাসন, মানবাধিকার, গণতন্ত্র, সুষ্ঠু নির্বাচন ইত্যাদি নাকি শোভা পায় না। কেননা ক্ষমতায় থাকতে তারা আইনের শাসন দেয়নি, সুষ্ঠু নির্বাচন টালবাহানা করেছে, পদে পদে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। যে সরকারের আমলেই এসব ঘটুক না কেন, নিন্দনীয়। আর বিএনপি আমলে হয়েছে বলে আওয়ামী লীগ আমলেও হবে, সেটি কাজের কথা নয়। ক্ষমতাসীনদের মনে রাখতে হবে যে বাংলাদেশে ইশতেহারের গালভরা প্রতিশ্রুতি পড়ে না শুনে মানুষ ভোট দেয় না। ভোট দেয় অপশাসন ও অপকর্মের বিরুদ্ধে।

নির্বাচন নিয়ে অনেক আগে থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী দল তথা আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের মধ্যে চাপান-উতোর শুরু হয়ে গেছে। দুই পক্ষই মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধে একে অপরকে হারানোর চেষ্টা করছে। আবার দুই পক্ষই জয়ের বিষয়ে শতভাগ আশাবাদী বলে দাবি করছে। গত চার বছরে সরকার কী করেছে, সেটি যেমন আলোচনায় আসবে, কী করার কথা ছিল, অথচ করতে পারেনি, সেসব নিয়েও মানুষ কথা বলবে। যেকোনো সরকারের প্রধান ও প্রথম দায়িত্ব নাগরিকদের নিরাপত্তা দেওয়া। দ্বিতীয়ত, দলমত-নির্বিশেষে সবাইকে গণতন্ত্রচর্চার সুযোগ দেওয়া। জাতীয় সংসদকে রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু করা। যেদিন সরকারের চার বছর পূর্তির খবরটি প্রকাশিত হয়, সেদিনের পত্রিকায় খবর এসেছে সংসদ চলছে কোরাম ছাড়াই। আগে দেখা যেত, সংসদ নেত্রী না থাকলে আওয়ামী লীগের সাংসদেরা গরহাজির থাকেন। এখন সংসদ নেত্রী থাকলেও দলের বেশির ভাগ সাংসদ সংসদে যান না। যে সংসদে কার্যত বিরোধী দল নেই, নীতিগত বিষয়ে বিতর্ক হয় না, সেই সংসদের বিষয়ে সাংসদদের আগ্রহ থাকার কথা নয়। আওয়ামী লীগের নেতারা নির্বাচনে না আসার জন্য বিএনপিকে দোষারোপ করেন। কিন্তু তাঁরা সংসদটা ভালোভাবে চালানোর তাগিদ বোধ করেন না।

অস্বীকার করার উপায় নেই যে আওয়ামী লীগের শাসন ছিল অধিকতর ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ। যুদ্ধাপরাধের বিচার ও সংসদ নির্বাচন নিয়ে বলা যায়, তারা বেশ চাপের মধ্যে ছিল। কিন্তু চলতি মেয়াদে খালেদা জিয়ার ‘তিন মাসের অবরোধ’ ছাড়া সরকারকে বাস্তবে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়নি। বাঙালির একটি স্বাভাবিক প্রবণতা হলো, বাইরের চ্যালেঞ্জ তারা ভালোভাবে মোকাবিলা করে থাকে। কিন্তু যখন কোনো প্রতিপক্ষ থাকে না, তখন নিজেরাই নিজেদের প্রতিপক্ষ করে মারামারিতে লিপ্ত হয়। সেটি যেমন আমরা বিগত ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দেখেছি, তেমনি শিক্ষাঙ্গনেও। বিরোধী পক্ষবিহীন ছাত্রলীগের একচ্ছত্র দৌরাত্ম্য এতটাই বেড়েছে যে কে হলে থাকবেন কে থাকবেন না, সেটি তাঁরাই ঠিক করে দেন। প্রক্টর-প্রভোস্ট-উপাচার্য কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিছুই না। শক্তিশালী বিরোধী দল জনগণের কতটা উপকার করতে পারে, সে বিষয়ে তর্ক থাকলেও নিঃসন্দেহে সরকার উপকৃত হয়। বর্তমান মেয়াদের শাসনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রথম ও বিএনপির প্রথম শাসনের তুলনা করলেও বিষয়টি স্পষ্ট হবে।

গণতন্ত্র যত ভঙ্গুরই হোক না কেন, নির্বাচন যত একতরফাই হোক না কেন, জনগণ নিশ্চয়ই আশা করতে পারে সরকার প্রত্যেকের জানমালের নিরাপত্তা দেবে। দুর্বৃত্তের হাত থেকে নিরীহ ও দুর্বল মানুষকে রক্ষা করবে। কেউ ঘর থেকে কিংবা রাস্তায় বের হয়ে গুম বা নিখোঁজ হয়ে যাবেন না। কখনো কোনো দুষ্টচক্র যদি কাউকে নিখোঁজ করে দেয়, রাষ্ট্রের দায়িত্ব তাঁকে খুঁজে বের করা। গত চার বছরে বহু মানুষ নিখোঁজ হয়েছেন। আবার সবাই না হলেও কেউ কেউ ফিরে এসেছেন। তাঁরা কীভাবে নিখোঁজ হলেন, কীভাবে ফিরে এলেন, এসে কেন নীরব হয়ে যান, সেসব প্রশ্নেরও উত্তর খোঁজা জরুরি। কিন্তু তার চেয়েও বেশি বেশি জরুরি না ফেরা ব্যক্তিদের ফিরে আসা। আইনের শাসনে বিশ্বাসী সরকার সেটা অস্বীকার করতে পারে না।

বাংলাদেশের গণতন্ত্র সম্পর্কে শেষ কথাটি বলতে চাই, রবীন্দ্রনাথকে ধার করে। তিনি বলেছেন, ‘যা পাইনি তাও থাক্, যা পেয়েছি তাও-/তুচ্ছ বলে যা চাই নি তাই মোরে দাও।’ সম্পূর্ণ ভিন্ন ভাবনায় রবীন্দ্রনাথ এসব পঙ্ক্তি লিখলেও আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সঙ্গে প্রায় মিলে যায়। আমরা একসময় গণতন্ত্র ও ভোট দুটোই চেয়েছিলাম। কিন্তু গণতন্ত্র অনেক আগেই জাতীয় সংসদের চার দেয়ালে বন্দী হয়ে আছে। বাকি যে ভোট ব্যবস্থা ছিল, সেটি নিয়েও মানুষ মহা দুশ্চিন্তায় আছে। তাই, জনগণ পাঁচ বছর নয়, এক দিনের গণতন্ত্র পেলেও খুশি। দেখে-শুনে-বুঝে ভোট দেওয়ার আগে ভোটের হারিয়ে যাওয়া অধিকারটি তারা ফিরে পেতে চায়।

বেলা শেষে সরকার, বিরোধী দল, জনগণ-সবারই একটি হিসাব-নিকাশ আছে। কী পেলাম, কী পেতে পারতাম। ২০১৮ তা মেলাতে পারবে কি?
সোহরাব হাসান: কবি, সাংবাদিক।
প্রথম আলো

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin