বিএনপি এখন কী করবে !

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অবস্থান করছেন লন্ডনে, আবার অসুস্থ মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম হাসপাতালে। দুই একদিনের মধ্যে মহাসচিব সুস্থ হয়ে ফিরলেও তাকে কিছু দিন বিশ্রাম নিতে হবে। এর মধ্যে নতুন করে চেপে বসেছে দুদক। সবকিছু মিলে নতুন করে চাপ বাড়ছে দল এবং জোটে। এ অবস্থায় দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে বলে মনে করেন তৃণমূল নেতারা।

বিএনপির শীর্ষ ৯ নেতাসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে সন্দেহজনক লেনদেন, অর্থপাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বিএনপি নেতাদের অভিযোগ সরকারের ইশারায় দুদক এমন কাজ করেছে। তবে আওয়ামী লীগ নেতাদের মন্তব্য দুদক প্রাতিষ্ঠানিক নিয়মেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাতে আওয়ামী লীগের কোন হাত নেই ।

দুদকের অভিযোগে বলা হয়েছে, বিএনপির এই কয়েক নেতাসহ আরও কিছু উচ্চপর্যায়ের নেতা এইচএসবিসি ব্যাংক, আরব বাংলাদেশ ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও ঢাকা ব্যাংকসহ বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বিগত দশকে বিদেশে টাকা পাচার করেছেন। বিভিন্ন নাশকতার কাজে অর্থলেনদেন করেছেন। এতে বলা হয়, বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতার ব্যাংক হিসাব থেকে গত ৩০ দিনে প্রায় ১২৫ কোটি টাকা উত্তোলন করেছেন। নাশকতা সৃষ্টির জন্যই এই টাকা উত্তোলন করা হয়েছে বলে ওই রিপোর্টে বলা হয়।

অভিযুক্ত নেতারা হলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, এম মোর্শেদ খান ও তার ছেলে ফয়সাল মোর্শেদ খান , যুগ্ম-মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল ও নির্বাহী সদস্য তাবিথ আউয়াল।
অনুসন্ধানের এই তালিকায় ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমানের নামও রয়েছে। বিএনপির এই নেতাদের বিরুদ্ধে দুদক থেকে সোমবার (৩ এপ্রিল) দুদকের উপপরিচালক মো. সামসুল আলমকে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়।

তবে তাদের বিরুদ্ধে দুদকের অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট বলে দাবি বিএনপির । তারা জানিয়েছেন, বিএনপিকে কালিমালিপ্ত করতেই বানোয়াট অভিযোগ দুদক।

মঙ্গলবার (৩ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বিএনপি নেতারা। এ সময় দলের সিনিয়র নেতারা নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সরকার খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনকে বাধা দিতে ও বিএনপিকে কালিমালিপ্ত করতেই আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। এই অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট।’তিনি বলেন, ‘সিঙ্গাপুরে কোন ফাইভ স্টার হোটেলে আমার কোন শেয়ার নেই, এমনকি ডাচ বাংলা ব্যাংকে আমার কোন একাউন্ট নেই। দুদক যদি পারে এসবের প্রমান হাজির করুক’। বরং ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির পেছনে সরকারের লোকজন জড়িত’ এফবিআইয়ের প্রতিবেদনের রেফারেন্স দিয়ে একথা বলেন ড. মোশাররফ।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘সারা জীবনেই সাত কোটি টাকা লেনদেন করেছি বলে মনে হয় না। আসলে এটা নোংরা রসিকতা। আমার যদি সিঙ্গাপুরে বাড়ি থাকে দলিল আনেন লিখে দেব এমন উক্তি করেন তিনি।

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এসব অভিযোগ একদলীয় শাসন কায়েমের অংশ। আসলে সরকার আর্থিক খাত ধ্বংস করে টাকা লুট করেছে। দুর্নীতিও আজকে একদলীয় হয়ে গেছে।’তিনি অভিযোগ করেন, ‘একদলীয় প্রচারণার জন্য আওয়ামী লীগ ২৫টি পোর্টাল খুলেছে। তারা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করছে শুধু ক্ষমতা দখলের জন্য।’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘ব্যবসা করি, লেনদেন হতেই পারে। কিন্তু দুদকের অভিযোগ বানোয়াট। গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টের ভিত্তিতে অভিযোগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। গোয়েন্দা সংস্থার উচিত মানুষকে সত্যটা জানানো, কারও বিশেষ কাজে ব্যবহৃত না হওয়া।’

দুদকের এমন পদক্ষেপের পর বিএনপির নেতাকর্মীরা রাজনৈতিক ভাবে দিশেহারা হবেনা বলে মনে করেন শীর্ষ নেতারা । স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে লিখতে পারেন, মিথ্যা মামলা দিতে পারেন। কিন্তু আমাদের নীতিভ্রষ্ট করা যাবে না, আমাদের ঐক্য বিনষ্ট করা যাবে না। আমরা দীর্ঘ রাজনীতি করে বর্তমান পর্যায়ে এসেছি।’

এ বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, সব নেতা জেলে গেলেও বিএনপির কোন ক্ষতি হবে না। নেতা ছড়াই বিএনপির কর্মীরা আন্দোলন করতে সক্ষম, কর্মীরাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে আন্দোলন করে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবে।

দুদকের নেয়া পদক্ষেপের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী পূর্বপশ্চিমকে বলেন, দুদক একটি স্বাধীন কমিশন, তারা কারো কিড়নক হয়ে কাজ করা মানে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়া। দুদক প্রাতিষ্ঠানিক নিয়মেই নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাতে আওয়ামী লীগের কোন হাত নেই ।

কালের কণ্ঠ

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin