bnp-flag

বিএনপির সামনে যে চার চ্যালেঞ্জ

আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চারটি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে রাজপথে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কাছ থেকে সংসদ ভেঙে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় দলটির জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ। মামলা-মোকদ্দমা মোকাবেলা করে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে নেতাকর্মীদের মনে শঙ্কা রয়েছে। শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি সারাদেশে দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীর রাজনৈতিক মামলাগুলো প্রত্যাহার করে নির্বিঘ্নে ভোটের মাঠে থাকার পরিবেশ তৈরি করা জরুরি। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও দল, জামায়াতে ইসলামীসহ জোটের শরিক দল থেকে যোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া বিএনপির জন্য সহজ নাও হতে পারে।

বিএনপি নেতারা বলছেন, তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এখন সব বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করেই সামনে এগিয়ে যাওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। তারা আশা করেন, দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে সব চ্যালেঞ্জই মোকাবেলা করতে সক্ষম হবেন তারা। তবে রাজনৈতিক বিশ্নেষকরা বলছেন, বিএনপির সামনে বন্ধুর পথ। এই পথ পাড়ি দেওয়া সহজ হবে না।

এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সমকালকে বলেছেন, সংবিধানের ধারাবাহিকতা রক্ষার কথা বলে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ নির্বাচনের নামে দেশবাসী ও বিদেশিদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। এ পরিস্থিতিতে এবার নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আদায় করে দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে যা যা করার সবই করবেন তারা।

বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. এমাজউদ্দীন আহমদ সমকালকে বলেন, বিএনপির সামনে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বিশেষ করে নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন ও নির্দলীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায় অন্যতম। একই সঙ্গে নির্বাচনের আগে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে চলমান জরুরি মামলাগুলো ছাড়া রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলাগুলো প্রত্যাহার করানো। বিএনপির জন্য গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আবহও তৈরি গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সংলাপের উদ্যোগ নিতে হবে। এসব দাবি-দাওয়া আদায় করা বিএনপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলেই মনে করেন তিনি।

সংসদ ভেঙে নিরপেক্ষ সরকারের দাবি – নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে এবারও অনড় বিএনপি। বিগত নির্বাচন যে ইস্যুতে বর্জন করেছে এখনও সেই অবস্থানের পরিবর্তন হয়নি। সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রয়োজনে নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়ার দাবিও তুলেছে তারা। সম্প্রতি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাবেন না বলেও ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। এর বাইরে যাওয়া সম্ভব নয়।’ সরকারের এ কঠোর মনোভাব পরিবর্তন করে দাবি আদায় বিএনপির জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন অনেকে।

বিএনপি নেতাকর্মীরা মনে করেন, আগামী নির্বাচন বিএনপিকে ছাড়া সরকার করতে পারবে না। বিগত নির্বাচন নিয়েই সরকার দেশি-বিদেশিদের সমালোচনা হজম করছে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় আসবে না- বিষয়টি আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাও বোঝেন। এ পরিস্থিতিতে তারা আবারও বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রেখে আরেকটি একতরফা নির্বাচন করতে চাচ্ছে। সে লক্ষ্যে ইতিমধ্যে তারা নানামুখী তৎপরতা শুরু করেছে। তবে এবার আওয়ামী লীগ সফল হবে না বলে দাবি করেন বিএনপি নেতারা। একই সঙ্গে সরকার বিএনপি ও ২০ দলীয় জোট ভাঙার ষড়যন্ত্র করছে বলে তারা অভিযোগ করছেন। এ বিষয়ে ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে সবাইকে লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে উঠে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন খালেদা জিয়াও।

এ ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সমকালকে বলেন, ‘উপযুক্ত’ সময়ে নির্দলীয় সরকারের রূপরেখা দেশবাসীর সামনে তুলে ধরবে বিএনপি। তারা আশা করেন, দেশে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে সরকার বিএনপির রূপরেখা ধরে সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন করতে দ্রুত সংলাপের উদ্যোগ নেবে।

খালেদা-তারেকের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে উৎকণ্ঠা :বিএনপির দুই শীর্ষ নেতৃত্ব খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বর্তমানে ৪৫টি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রয়েছে ১৮টি। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ২৭টি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে দুর্নীতি, গ্রেনেড হামলা, অর্থ পাচার, অবৈধ সম্পদ অর্জন, ফৌজদারি, রাষ্ট্রদ্রোহ, মানহানি এবং দেওয়ানি মামলা ইত্যাদি।

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ও চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা এবং তারেক রহমানের বিরুদ্ধে করা গ্রেনেড হামলার বিচার অনেকটা শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আগামী বছরের শুরুতে এ মামলাগুলোর রায় হতে পারে। এর মধ্যে জিয়া অরফানেজ ও চ্যারিটেবল দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে খালেদা জিয়ার সাত বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে এবং নির্বাচনের অযোগ্য বিবেচিত হবেন। অন্যদিকে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় বিস্ম্ফোরক ও হত্যার অভিযোগে পৃথক দুটি মামলা প্রমাণিত হলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে।

বিএনপি নেতাদের মতে, দলের দুই শীর্ষ নেতার সাজা হলে নির্বাচনে তারা অযোগ্য হয়ে পড়লে বিএনপি সংকটে পড়তে পারে। এ পরিস্থিতিতে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়বেন নেতাকর্মীরা। পাশাপাশি দল ও জোটে ভাঙন ধরাতে পারে সরকার। খালেদা জিয়াকে ছাড়া বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলে সরকারের ইন্ধনে দলের একটি অংশ নির্বাচনে অংশ নিতে পারে।

খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের আইনজীবী ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন সমকালকে বলেন, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের সব মামলাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা। ন্যায়বিচার পেলে তারা নির্দোষ প্রমাণিত হবেন।

দলীয় নেতাকর্মীদের মামলা-মোকদ্দমা প্রত্যাহার :বিএনপি নেতাদের মতে, বর্তমানে বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী মামলা-মোকদ্দমা মাথায় নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। নির্বাচনের আগে নেতাকর্মীদের এসব মামলা প্রত্যাহার না করলে তারা প্রকাশ্যে ভোটের মাঠে নামতে পারবেন না। মামলা প্রত্যাহার না করলে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ হবে না। প্রার্থীদের বিরুদ্ধে যেমন মামলা থাকবে, তেমনি কর্মীদের বিরুদ্ধেও মামলা থাকবে। বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, বর্তমানে প্রায় ৩০ হাজার মামলা রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে এসব মামলা প্রত্যাহার করাও দলটির জন্য একটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ।

নির্বাচনে ‘যোগ্য’ প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া আগামী নির্বাচনে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের শরিক দলের যোগ্য ও জনপ্রিয় প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া নিয়ে নানা জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। বিশেষ করে জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় তাদের নেতারাও ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে পারেন।

সূত্র আরও জানায়, আগামী নির্বাচনে ২০ দলীয় জোটের বাইরের দলগুলোকে নিয়েও একটি শক্তিশালী ‘নির্বাচনী মোর্চা’ গঠনের চেষ্টা করছে বিএনপি। পর্দার অন্তরালে বিএনপি নেতারা বিকল্পধারা, গণফোরাম, জেএসডি, নাগরিক ঐক্যের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন। তবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী মোর্চা হলে বেশ কিছু আসন ছাড় দিতে হবে এসব দলকেও। এতে দল ও জোটের নেতাদের অনেকটা ছাড় দিতে হতে পারে। এ কারণে আবার দল ও জোটের অনেক বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড়িয়ে যেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে অনেক প্রার্থী পরাজয়ের ঝুঁকিতে পড়বেন।

সমকাল

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin