বিএনপির রাজনীতি কি শুধু কবর জিয়ারতই?

১৯ জানুয়ারি সকাল। বিএনপির কর্মীরা চন্দ্রিমা উদ্যান, বিজয় সরণী এবং সংসদ এলাকার আশেপাশে জড়ো হচ্ছেন। আলতো শীত আর মিষ্টি রোদে বিষণ্ণ মুখগুলোতে এক চিলতে হাসি, কুশল বিনিময়।কুশল বিনিময়ের মাঝেই এক কর্মী বলেছেন, ‘আমরাতো এখন কবর জিয়ারতের রাজনীতি করছি। আন্দোলন নাই, নির্বাচন নিয়েও ভাবনা নেই।’ মুহুর্তেই ছোট্ট জটলাটির আড্ডা থমকে গেল।

আসলেইতো, গত এক বছরে বিএনপির উল্লেখ করার মতো কর্মসূচি কী? জনগণের কাছে বার্তাই কী? উল্লেখ করার মতো কর্মসূচি হলো বেগম জিয়ার কক্সবাজারের রোড মার্চ আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক জনসভা। কিন্তু এই কর্মসূচিতে না আছে কর্মীদের জন্য কোনো নির্দেশনা, না আছে জনগণের জন্য কোনো বার্তা।

১৯ জানুয়ারি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জন্মদিন। এই উপলক্ষে দলটির প্রধান কার্যক্রম ছিল জিয়ার কবর জিয়ারত। চোখে পড়ার মতো কোনো পোস্টার নেই। জন্মদিন নিয়ে কোনো চোখে পড়ার মতো আলোচনাও নেই। এত দৈন্য জন্মদিন বিএনপি কি কখনো পালন করেছে? এমন প্রশ্ন করতেই বিএনপির একজন গুরুত্বপূর্ণ নেত বললেন, ‘সম্ভবত না।’ স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘এরশাদের সময়ও আমরা নয়বছর ক্ষমতার বাইরে ছিলাম। কিন্তু আমাদের প্রতিষ্ঠাতার জন্মদিন পালন করেছি ঘটা করে। এবার তার লেশমাত্র নেই।’

জিয়া কি তাহলে বিএনপির রাজনীতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে? স্রেফ পালনের জন্যেই পালন করা হচ্ছে তাঁর জন্মদিবস? এরকম বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন বিএনপির নেতারা। একজন বললেন, ‘সময়টা খারাপ যাচ্ছে।’ তবে তিনি বলেন, ‘জিয়ার ছবিতে ধুলো জমেছে। এই ধুলো পরিস্কার না করলে আমরা কি নিয়ে দাঁড়াব?’ নতুন জেনারেশনের কাছে জিয়াউর রহমান অস্পষ্ট, বিতর্কিত।

বিএনপি তাকে তুলে ধরতে পারছে না। বিএনপির তরুণ একজন নেতা স্বীকার করেছেন, তরুণ প্রজন্মের কাছে জিয়া আবেদনহীন।’ তাঁর মতে, এজন্য বিএনপিই দায়ী। বিএনপির প্রবীণ নেতারা বঙ্গবন্ধুর পাশে জিয়াকে বসাতে গিয়ে সীমাহীন মিথ্যাচার এবং ইতিহাস বিকৃতি করেছেন।

আজকের প্রজন্ম যখন মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানছে, পড়ছে, শুনছে তখন জিয়া তাদের মধ্যে কোনো আবেগ সৃষ্টি করতে পারছে না। বিএনপি এখন ইতিহাস বিকৃতির শাস্তি বহন করছে। জিয়া এখন ইতিহাসের পাশ্বচরিত্র এবং খলনায়ক।

অবশ্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. এমাজউদ্দিন আহমেদ মনে করেন, ‘একজন নেতা বেঁচে থাকেন তাঁর দলের মধ্যে। বিএনপি যতদিন বেঁচে থাকবে, ততোদিন জিয়াও বেঁচে থাকবে। কিন্তু সংগঠন হিসেবে বিএনপি সত্যিই কি বাঁচবে?

ক্ষমতার কেন্দ্রে হওয়া দলটি ৮২ তে এরশাদ বিরোধী আন্দোলন করেছিল আওয়ামী লীগের উপরে ভর করে। এখন একা যে বিএনপি আন্দোলনে অক্ষম তা প্রমাণ করেছে। নির্বাচন নিয়েও দলটির অবস্থান পরিষ্কার নয়।

এভাবে দলটির গন্তব্য কোথায়, জিয়ার কবরের মতোই আরেকটি কফিনে বিএনপি কি কোমায় চলে গেছে? শুধুই কিছু অসংলগ্ন কথাবার্তা বলা ছাড়া কিছুই করতে পারছে না দলটি। জিয়ার জন্মদিনে অন্তত তেমনটাই মনে হয়েছে।

বাংলা ইনসাইডার

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin