ঢাকায় সমাবেশের স্থান বরাদ্দ নিয়ে কথা বলার জন্য বিএনপির প্রতিনিধিদের আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের (ডিএমপি) কার্যালয় যেতে বলা হয়েছে।
বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান প্রথম আলোকে এ কথা জানিয়েছেন।
ঢাকায় সমাবেশের অনুমতি পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে আলোচনার জন্য কমিশনারের কার্যালয়ে ডাক পাওয়াকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে বিএনপি। দলটির দুজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, তাঁরা আশাবাদী অনুমতি পাবেন। বিগত কয়েকটি সমাবেশ শান্তিপূর্ণ ভাবেই তারা করেছেন। বেঁধে দেওয়া শর্ত মেনেই বিএনপি আগের সমাবেশগুলো করেছে।
এক নেতা বলেন, আশা করছি কমিশনারের কার্যালয় সময় দেওয়ার পর বিএনপিকে নিরাশ করবে না।
বিএনপির একটি সূত্র জানায়, দলের তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল কমিশনারের কার্যালয়ে যাবেন। এই তিনজন হলেন, প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম ও আবুল খায়ের ভূঁইয়া।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি একতরফা ও বিতর্কিত নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিবাদে প্রতি বছর এই দিনটিকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করে বিএনপি। এদিন তারা ঢাকায় সমাবেশও করে। এবার সমাবেশের জন্য দলটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে ডিএমপিকে চিঠি দেয়।
সেখানে সম্ভব না হলে দলটি নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়েছে। এখনো পর্যন্ত এ নিয়ে ডিএমপি কোনো বক্তব্য দেয়নি।
prothom-alo
‘যে কোনো মূল্যে কাল সমাবেশ করবে বিএনপি’
কাল ৫ জানুয়ারির ‘গণতন্ত্র হত্যা’ দিবসে যে কোনো মূল্যে বিএনপি সমাবেশ করবে বলে জানিয়েছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। রিজভী বলেন, কাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বা নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে আবেদন করলেও এখনো অনুমতি পায়নি বিএনপি।
তবে অনুমতির জন্য এখনো আশাবাদী বিএনপি। আজ বৃহস্পতিবার সকালে নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন। এসময় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
রিজভী বলেন, আওয়ামী নেতাদের বক্তব্যে মনে হচ্ছে-তারাই পরিকল্পিতভাবে বিএনপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশ কর্মসূচির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে একটা অশান্তির পরিবেশ তৈরী করতে চাচ্ছেন। তারা রাজনীতিকে সংঘাতের দিকে নিয়ে যেতে চাচ্ছেন।
ইতোমধ্যে ঢাকাসহ দেশব্যাপী সরকারের নির্দেশে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার নির্যাতনসহ নানাভাবে হয়রানি শুরু করেছে। অতীতে বিএনপির কর্মসচিতে বিশৃঙ্খলা হয়েছে এমন কোনো নজির নেই।
তিনি বলেন, সরকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপিকে আগামীকালের সমাবেশের অনুমতি না দিয়ে ওই স্থানে একটি নাম না জানা সংগঠনকে অনুষ্ঠান করার অনুমতি দিয়ে যে নাটক করেছে সেই নাটকটি আসলে গণতন্ত্রের সাথে, জনগণের সাথে মশকরা ছাড়া কিছুই নয়। তবু আমরা এখনো আশা করবো সরকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অথবা বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার অনুমতি দেবে।
সমাবেশের অনুমতি নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের দেয়া বক্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, জনগণ জানে আপনাদের হুকুম ছাড়া আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এক পা ফেলতে পারে না। দিনরাত চব্বিশ ঘন্টার যেকোনো সময় যেকোনো স্থানে ক্ষমতাসীনদের সভা সমাবেশ করতে তো আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো অনুমতি লাগে না।
তাহলে আপনার কথায় এটি পরিষ্কার যে, সরকারবিরোধী দলগুলোকে নির্মমতার দ্বারা অবরুদ্ধ করে রাখতেই আপনাদের হুকুমে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করেন।
তিনি বলেন, আমরা এখন দেখি যে, একজন ইউএনও এক ব্যাংক ম্যানেজারকে প্রকাশ্যে চড় থাপ্পড় মারছে, পুলিশ শিক্ষকদেরকে পেটাচ্ছে, সহকারী কমিশনার শিক্ষককে লাঞ্ছিত করছে, সংসদ সদস্য শিক্ষককে কান ধরে উঠবস করাচ্ছে অথবা কোমলমতি শিশুকে গুলি করে গুরুতর আহত করছে, একজন কলেজ শিক্ষক ফরিদ উদ্দিনকে দিগম্বর করে রাজপথে ঘোরানো হচ্ছে। এগুলো সবই গণতন্ত্রহীণতার ফলে সমাজে সৃষ্ট নৈরাজ্যের উদাহরণ।
সমাবেশ নিয়ে শ্রমিক লীগ নেতাদের বক্তব্যের সমালোচনায় তিনি বলেন, শ্রমিক লীগ নেতাদের বক্তব্যে প্রমাণিত হয় তারা সাধারণ পরিবহন শ্রমিক-মালিকদের হুমকি দিচ্ছেন, যাতে আগামীকাল তারা পরিবহন বের না করে। ক্ষমতাসীনদের এসমস্ত বক্তব্য সবই গণবিরোধী হুকুমবাদ প্রতিষ্ঠারই বৈশিষ্ট্য। এসমস্ত বক্তব্য গণতান্ত্রিক অধিকারগুলোকে সম্পূর্ণরুপে উচ্ছেদ করতে বেআইনী দাপটের আস্ফালন।
রিজভী বলেন, আমি ওবায়দুল কাদেরকে পরিষ্কার বলতে চাই আপনার নেত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকলে এবং সংসদ বহাল থাকলে সেই নির্বাচন কখনোই সুষ্ঠ নির্বাচন হবে না। সেটি হবে নির্বাচনের নামে ভোটকেন্দ্রে ভোটারবিহীন নির্বাচন, যা শুধু আপনাদের নিজেদের পছন্দসই ব্যক্তিদের নাম বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করা।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবশ্যই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হবে। জনগণকে বাইরে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোকে বাইরে রেখে আর কোনো জাতীয় নির্বাচন হবে না। আর আপনারা যেভাবে নির্বাচন করতে চান, সেই নির্বাচন হবে চৌর্যবৃত্তির নির্বাচন।
উৎসঃ নয়া দিগন্ত