ভাঙতে চায় অতীতের সমাবেশের রেকর্ড। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির সমাবেশ আজ। চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচনের দাবি আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেবেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।রাজধানীতে প্রায় দুই বছর পর খালেদা জিয়ার এ সমাবেশকে কেন্দ্র করে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি। প্রস্তুতি নিয়েছে ঢাকার প্রতিবেশী কয়েকটি জেলার বিএনপির নেতারাও। লক্ষ্য একটাই, বিপুল উপস্থিতির মাধ্যমে সমাবেশকে জনসমুদ্রে পরিণত করা।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপি নেতারা এই সমাবেশে নেতাকর্মী-সমর্থকদের ব্যাপক উপস্থিতি ঘটাতে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। বিএনপি ও তার সকল অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলো এবং ঢাকা মহানগরসহ ঢাকার অদূরবর্তী জেলার নেতাকর্মীদের সমাবেশে অংশগ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দলটির সিনিয়র নেতারা ঢাকার আশপাশের জেলা ও মহানগর নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগও রক্ষা করছেন।
শুধু তাই নয়, সমাবেশে লোক সমাগম ঠেকাতে সরকারের তরফে সম্ভাব্য নানা প্রতিবন্ধকতার বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বিএনপি ও অঙ্গদলের নেতাকর্মীরা রাজধানীতে ভিড় করছেন শুক্রবার থেকেই। গ্রেফতার এড়াতে হোটেল এড়িয়ে এবার অবস্থান নিয়েছেন আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুদের মেস ও বাসাবাড়িতে। এবং রাজধানীর আশপাশের জেলাগুলো থেকে নেতাকর্মীরা শনিবার (১১ নভেম্বর) দুপুর থেকে ঢাকা ঢুকেছেন। যাতে করে জনস্রোতের কাছে অনুমতিপত্রের শর্তসহ হারিয়ে যেতে বাধ্য হয় সরকারের যাবতীয় কুটকৌশল।
সমাবেশের অনুমতি চেয়ে প্রশাসনের কাছে গত শুক্রবার (৩ নভেম্বর) চিঠি পাঠালে অনুমতি পাবে, কি হবে না তা নিয়ে সংশয় ছিল দলটির মধ্যে। তবে শনিবার (১১ নভেম্বর) সকালে ২৩ শর্তে জনসভার লিখিত অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। যদিও সমাবেশ সফল করতে সে শর্তকে বড় কোনো প্রতিবন্ধক মনে করছেন না দলটির নেতারা।বিএনপির অভিযোগ রয়েছে, সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে শুক্রবার রাত থেকেই নেতাদের বাসাবাড়িতে পুলিশ তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে। শুক্রবার রাতেই গ্রেফতার করা হয়েছে শতাধিক নেতাকর্মীকে। শনিবার রাতেও অব্যাহত রয়েছে পুলিশের সে অভিযান।
সমাবেশের প্রস্তুতির ব্যাপারে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ব্রেকিংনিউজ.কম.বিডিকে বলেন, ‘বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি। সমাবেশের ব্যাপারে আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি আছে। সমাবেশে ওইদিন নির্ধারিত হবে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির গতিপথ।’জানা গেছে, আনুষ্ঠানিক অনুমতি পাওয়ার পর শনিবার সন্ধ্যায় শুরু হয় মঞ্চ নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি। রাতভর কাজ শেষে রবিবার সকাল নাগাদ সমাবেশ মঞ্চ পুরোপুরি প্রস্তুত করা শেষ হবে। এবারও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সমাবেশে সাধারণত ৬০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩০ ফুট প্রস্থের মঞ্চ নির্মাণ করা হচ্ছে।
নির্মাণ কাজে প্রায় ৩০ জন শ্রমিক মূল মঞ্চ তৈরির কাজ করছেন। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ সিনিয়র নেতারা সমাবেশস্থল পরিদর্শন করেন।সমাবেশে ঢোকার পথে আর্চওয়ে স্থাপন ও স্বেচ্ছাসেবকরা মেটাল ডিটেকটর নিয়ে সংশ্লিষ্ট দায়িত্ব পালন করবে। সেখানে থাকা সমাবেশের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বিষয়ক সমন্বয়কের দায়িত্বপ্রাপ্ত আবদুল্লাহ আল নোমান জনসমাগম ও মানুষজনের চলাচলের সুবিধা-অসুবিধার যুক্তি তুলে ধরে সামান্য সরিয়ে মঞ্চ নির্মাণের জায়গা চিহ্নিত করে দেন। দলের উচ্ছ্বসিত কয়েকশ’ নেতাকর্মী মঞ্চ নির্মাণ শুরু থেকেই সমাবেশস্থলে জড়ো হচ্ছেন আবার চলে যাচ্ছেন।
প্রথমে ৮ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দীতে সমাবেশ করতে চেয়েছিল বিএনপি। তবে সিপিএ সম্মেলনের কারণে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ৯ নভেম্বরের পর সমাবেশ করার পরামর্শ দেয়। এরপর ১১ নভেম্বর সমাবেশের ঘোষণা দিয়েও যুবলীগের ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সেদিন সোহরাওয়ার্দীতে অনুষ্ঠান থাকায় একদিন পিছিয়ে ১২ নভেম্বর সমাবেশের দিন চূড়ান্ত করে বিএনপি। প্রায় দুই বছর পর রাজধানীতে এটি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জনসভা।উল্লেখ্য, সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করেছিলেন তিনি। সমাবেশ ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করবেন না।
উৎস: ব্রেকিংনিউজ