বিএনপির কর্মীদের হয়রানি না করতে হাইকোর্টের নির্দেশ

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মেয়রপ্রার্থীর নেতাকর্মী, সমর্থক ও এজেন্টদের গ্রেফতার কিংবা হয়রানি না করতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি নিশ্চিতের ব্যবস্থা করতেও আদেশে বলা হয়েছে।

একই সঙ্গে, পুলিশ বা অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী, তার সমর্থক ও প্রচারকারীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে আপিল বিভাগের গাইডলাইন মেনে চলতে কেন নির্দেশনা দেয়া হবে না- তা জানতে চেয়েও রুল জারি করেন আদালত।

আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, নির্বাচন কমিশন, পুলিশের মহাপরিদর্শক, গাজীপুরের পুলিশ কমিশনার ও পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট আটজনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

এ সংক্রান্ত এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মাদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রুলসহ এ নির্দেশনা দেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিনখোকন, এ কে এম এহসানুর রহমান, সানজিদ সিদ্দিকী প্রমুখ।

অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুর্টি অ্যার্টনি জেনারেল অমিত তালুকদার।

গত ২৪ জুন নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকেও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত পরোয়ানা ছাড়া কাউকে গ্রেফতার বা হয়রানি না করার নির্দেশনা দেয়া হয়। নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম-সচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে গাজীপুরের পুলিশ সুপারকে ওই নির্দেশনা দেয়া হয়।

এদিকে, গাজীপুর সিটি নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। এ নির্বাচন যেন সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত খুলনা সিটি নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি না হয় সেজন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ জানান তিনি। বলেন, ‘আমি সকলের কাছে আশা করব- গাজীপুরে যেন খুলনার পুনরাবৃত্তি না হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভোরের প্রভাত দেখে সকাল বেলায় বোঝা যায় দিনটা কেমন যাবে। এ নির্বাচন যদি সঠিক না হয়- এর থেকে আমরা একটা ইঙ্গিত পাব যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেমন হবে?’

গত ৩১ মে গাজীপুরে বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও হয়রানি বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়। গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বিএনপির মেয়রপ্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার রিটটি দায়ের করেন।

রিটে গ্রেফতার সংক্রান্ত আপিল বিভাগের নির্দেশনা ভঙ্গ করে গাজীপুরে গ্রেফতার বা হয়রানি না করার নির্দেশনা ও রুল জারির আবেদন করা হয়।

রিট আবেদনে বলা হয়, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনী প্রচারণার সময় বিএনপির নেতাকর্মীদের যেভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে, সেটা আইনসম্মত নয় এবং সুপ্রিম কোর্টের রায় পরিপন্থী। সুপ্রিম কোর্টের রায় অমান্য করে এটা করা হচ্ছে। তারা আইন মানছেন না।

গাজীপুর সিটিতে ৫৭টি সাধারণ এবং ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড রয়েছে। এ সিটি করপোরেশনের মোট ভোটার ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৭ জন। এর মধ্যে পাঁচ লাখ ৭৯ হাজার ৯৩৫ জন পুরুষ এবং পাঁচ লাখ ৬৭ হাজার ৮০১ জন নারী ভোটার। নির্বাচনে সাতজন মেয়র, ৮৪ জন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৫৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

এ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল ১৫ মে। নির্বাচনী প্রচার বেশ জমেও উঠেছিল। কিন্তু ৬ মে তিন মাসের জন্য নির্বাচন স্থগিত করেন হাইকোর্ট। এরপর ১০ মে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করেন সর্বোচ্চ আদালত। একই সঙ্গে ২৮ জুনের মধ্যে ভোটগ্রহণের সময়ও বেধে দেন। পরে নির্বাচন কমিশন নতুন করে ২৬ জুন ভোটের তারিখ ঘোষণা করে ১৮ জুন থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর নির্দেশনা দেয়।

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin