mirza_fakhrul

বিএনপিকে বাদ দিয়ে নির্বাচনের জন্য সরকার তড়িঘড়ি সাজা দিচ্ছে: ফখরুল

বিএনপিকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করার জন্য সরকার তড়িঘড়ি করে খালেদা জিয়াকে সাজা দিতে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শুক্রবার রাজধানীতে প্রয়াত কথা সা‌হি‌ত্যিক শওকত আলী‌র শোক সন্তপ্ত প‌রিবা‌রের সঙ্গে দেখা করেন মির্জা ফখরুল। এরপর সাংবা‌দিক‌দের সঙ্গে এ কথা বলেন তিনি। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার রায়ের দিন ধার্য্য প্রসঙ্গে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলার ব্যাপারে মির্জা ফখরুল আরো বলেন, ‘দ্রুততার স‌ঙ্গে এ মামলা শেষ করার চেষ্টা করা হ‌চ্ছে। আমা‌দের চেয়ারপারস‌নের আইনজী‌বীরা পরিস্কার ব‌লে দি‌য়ে‌ছেন যে, জা‌স্টিস হা‌রিড ইজ জা‌স্টিস বেরিড।’ তিনি আরো বলেন, ‘তারা আগামী নির্বাচন কর‌তে চান বিএন‌পি‌কে বাদ দি‌য়ে। এজন্য এই তড়িঘড়ি ক‌রে বিচার কাজ শেষ করা।’

আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। খালেদা জিয়া ছাড়া এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি সময়, প্রতিটি ক্ষণ তারা (সরকার) হুমকি দিয়েছেন, শক্তি প্রয়োগ করেছেন, বলপ্রয়োগ করেছেন। ভিন্নমত পোষণকারী কাউকেই তারা সু‌যোগ দি‌তে রা‌জি না।’

বিএনপি নেতা আরো বলেন, ‘তারা এই গণতান্ত্রিক প‌রি‌বেশ‌কে একেবারেই সংকু‌চিত ক‌রে ফে‌লে‌ছে। যে বাংলা‌দেশ আমরা যুদ্ধ ক‌রে স্বাধীন ক‌রে‌ছিলাম, সেই গণত‌ন্ত্রের কবর রচনা করা হ‌য়ে‌ছে।’

খালেদা জিয়ার সাজা সরকার আগেই ঠিক করে রেখেছে: ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, খালেদা জিয়াকে সাজা দেওয়ার বিষয়টি সরকার আগেই ঠিক করে রেখেছে।

বৃহস্পতিবার জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় রায় ঘোষণার দিন নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল এ কথা বলেন।

নয় বছর আগে দুদকের দায়ের করা এ মামলায় দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ মো. আখতারুজ্জামান আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি রায়ের দিন রেখেছেন।

একই আদালতে জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদার আত্মপক্ষ সমর্থনের শুনানি চলছে।

সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান, যিনি সরকারের বিশেষ দূত- হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে যেতে হবে। তাহলে দেশনেত্রীর মামলার রায় কি পূর্ব নির্ধারিত? এই অবৈধ সরকার পূর্বেই রায় লিখে রেখেছেন। তাহলে এই বিচারের প্রহসনের তো কোনো প্রয়োজন ছিল না।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশে যে আইনের শাসন নেই, ন্যায়বিচার সূদূর পরাহত সেটাই প্রমাণিত হচ্ছে। বিচার হবে- প্রধানমন্ত্রী যা চাইবেন তাই। এখন পর্যন্ত তার (এরশাদ) এই বক্তব্য যে আদালত অবমাননার সামিল, তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

ফখরুল বলেন, সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দলের প্রধান, তিনবার নির্বাচিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য ২৪টি মিথ্যা মামলা দিয়েছে। তার মধ্যে দুইটি মামলার বিচার প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। সপ্তাহে তিনদিন দেশনেত্রীকে আদালতে হাজির হওয়ার নজিরবিহীন নির্যাতন, তারিখে তারিখে জামিন দেওয়ার নজিরবিহীন আদেশ- সমগ্র বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

এটা এখন স্পষ্ট- নজিরবিহীন দ্রুততার সাথে মামলা শেষ করার প্রচেষ্টা প্রমাণ করে এই সরকার বেগম জিয়াকে ভয় পায়। ভয় পায় বলেই তাকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে চায়। আমরা সরকারের এহেন প্রচেষ্টার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

নির্বাচনী মাঠ সমান্তরাল করতে দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ৫০ হাজার মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি।

ফখরুল বলেন, ২০০৭ সাল থেকে চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত সারাদেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের মামলার সংখ্যা ৫০ হাজার ৭৪টি। আসামির সংখ্যা ১১ লাখ ৯১ হাজার ৪৪৯ জন। খুন হয়েছেন ৭৭৩ জন।

গতবছরের ২০ ডিসেম্বর থেকে এ বছরের ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের সাত বিভাগে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার পরিসংখ্যান তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, একমাস দুইদিনে মোট মামলা হয়েছে ৫২৮টি, আসামির সংখ্যা ২৪ হাজার ৭০৭ জন। গ্রেপ্তার ১৫১৯, গুম একজন, খুন একজন।

আমরা স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, এই অবস্থার প্রেক্ষিতে নির্বাচনের সমান্তরাল মাঠ হতে পারে না। সুতরাং নির্বাচন করতে হলে, অবশ্যই মাঠকে সমান্তরাল করতে হলে, বিরোধীদলের সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। অবিলম্বে গ্রেপ্তার, ক্রসফায়ার, হত্যা-গুম বন্ধ করতে বলছি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছি।

অজ্ঞতনামা আসামির নাম দিয়ে পুলিশের গ্রেপ্তার বাণিজ্য চলছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুল হাই, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin