বিএনপিকে নিয়ে সজীব জয়ের সাফ কথা !

আগামী নির্বাচনে বিএনপি আসতে চাইলে আসবে, না চাইলে আসবে না; বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে সরকার কোনো উদ্যোগ নিতে রাজি নয় বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি বলেন, একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে।

মানুষ যাকে ভোট দেবে সে দলই সরকার গঠন করবে। আগামী নির্বাচনে নিজের অংশগ্রহণের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেননি বলেও তিনি জানিয়েছেন।

গত রবিবার রাতে বেসরকারি চ্যানেল ৭১ টিভিতে প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে জয় এসব কথা বলেন। একাধিক জরিপে বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগ এগিয়ে আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জরিপে প্রতিটি বিষয়ে এখন আওয়ামী লীগ এত পর্যায়ে এগিয়ে আছে…এখানে সরকারের, প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রিয়তা, শুধু প্রধানমন্ত্রীর না, এখানে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তাও এখন বিএনপির চেয়ে বিশাল শতাংশে এগিয়ে আছে। এত বড় ব্যবধান কিন্তু আমরা ইতিহাসে কখনো দেখিনি। বাস্তব কথা হচ্ছে সেটা। ’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে জয় বলেন, ‘আমরা শুধু রাজনীতির ওপর প্রশ্ন করি না। আমরা মানুষকে অন্যান্য প্রশ্ন করি, আপনারা ভালো আছেন কি না, দেশ ঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছে কি না, আপনাদের কী কী সমস্যা আছে, সরকারের ব্যর্থতা কী। এসব আমরা জরিপ করে জানতে চাই যে দেশের মানুষ কী বলছে, ভাবছে।

এখানে দেখা যাচ্ছে এখন প্রায় ৬৮ শতাংশ মানুষ ভাবছে দেশ ঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গ্রহণযোগ্যতা এখন ৭৪ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের কোনো রাজনীতিবিদ যদি ৭৪ শতাংশ পায়, তবে সে তো উঠে নাচতে থাকবে। আওয়ামী লীগকে পছন্দ করে ৬০ শতাংশের বেশি মানুষ। ’ তিনি বলেন, ‘একটা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের জনপ্রিয়তা কিন্তু সব সময় একটু কম থাকে। আওয়ামী লীগ এখন খুবই জনপ্রিয়।

সেখানে যদি বিএনপির সঙ্গে তুলনা করি, তবে তারা ২০ শতাংশে আছে, ২৫ শতাংশে আছে। খালেদা জিয়া এখন ৩০ শতাংশ, ৪০ শতাংশের ওপর উঠতে পারছেন না। ভোটের সংখ্যায় আওয়ামী লীগের ভোট তো বেড়েছেই, তবে বিএনপির ভোট কিন্তু একেবারে শেষ হয়ে গেছে। এখন আমাদের জরিপে যখন জিজ্ঞেস করা হয় কাকে ভোট দেবেন, সামান্য শতাংশ মানুষ বলে, বিএনপিকে ভোট দেব। ’

বিএনপির জনপ্রিয়তা কমার কারণ প্রসঙ্গে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘সেটা বিএনপির ব্যর্থতার কারণে। কারণ মানুষ তো দেখেছে, আমি প্রথমে বলব ২০১৩-১৪-এর জ্বালাও-পোড়াও। আমাদের বেশির ভাগ ভোটার তরুণ। তারা নিজের চোখে দেখতে পেরেছে যে বিএনপি কিভাবে নিজের দেশের মানুষের ওপর আগুন হামলা চালিয়েছে। এটা তো একটা রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড নয়। এটা হচ্ছে একটা সন্ত্রাসী দলের কাণ্ড। এটা একটা কারণ। বিশেষ করে তরুণ ভোটাররা এটা কিন্তু ভোলেনি। ’

জয় বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির যেসব তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, খালেদা জিয়ার দুই ছেলেই সাজাপ্রাপ্ত। তাদের বিরুদ্ধে এফবিআই এসে সাক্ষ্য দিয়ে গেছে। কানাডার আদালতে কিছুদিন আগেই নাইকো মামলায় বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে রায় হয়েছে। সেখানে তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণিত হয়েছে যে বিএনপির নেতারা দুর্নীতি করেছে।

এসব কিন্তু মানুষ দেখতে পারছে, বুঝতে পারছে। আর শেষ কথা হলো—বিএনপি দেশের মানুষের জন্য কী করতে পেরেছে? করা তো দূরের কথা, বিএনপি কি ভালো কিছু বলতে পেরেছে দেশের জন্য? আজ পর্যন্ত গত ৯ বছরে বিএনপির ফখরুল ইসলাম বলেন, রিজভী বলেন, তারা কি বাংলাদেশের জন্য একটি ভালো কথা বলেছে? একটা ভালো কথা তারা বলেনি। অথচ ওদিকে মানুষ দেখছে আওয়ামী লীগ দেশকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে। ’

সরকারের সমালোচনার বিষয় প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জয় বলেন, ‘আমরা এগুলো জরিপ করে বের করে আনি। আমরা কিছু উন্মুক্ত প্রশ্ন রাখি। সেখানে জানতে চাই, তোমরাই বলো—দেশের কী কী সমস্যা আছে, তোমার কী কী সমস্যা আছে। আরেকটা প্রশ্ন রাখি—সরকারের সমস্যা কী কী। সেখানে ফলাফলে আসে যে জিনিসপত্রের দাম নিয়ে মানুষ কিছুটা অসন্তুষ্ট। এটা স্বাভাবিক। আমরা একটা দরিদ্র দেশ।

সেখানে জিনিসপত্রের দাম যত কম হয় মানুষের তত সুবিধা হয়। ’ জরিপে সরকারের সমালোচনার অন্য বিষয়গুলো তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘যানজট সমস্যা উঠে আসে। এ ছাড়া উঠে আসে, এখানে ব্রিজ লাগবে, ওখানে রাস্তা লাগবে। রাস্তার অবস্থা খারাপ। মানে অবকাঠামোর বিষয়গুলো উঠে আসে। গ্রামের মানুষেরও আয় বেড়ে গেছে। এখন মানুষের দাবি হয়ে যাচ্ছে, তারা চায় বিদ্যুৎ, তারা চায় রাস্তা। ’

সরকারের লক্ষ্য পূরণের কোথায় কমতি আছে জানতে চাইলে জয় বলেন, ‘আমাদের কিছু কাজে সময় লাগছে। যেমন কালিয়াকৈরে হাইটেক পার্ক স্থাপনে সময় লেগেছে আদালতে মামলার কারণে। আরো কিছু কাজ বিলম্ব হয়েছে ষড়যন্ত্রের কারণে। যেমন পদ্মা সেতু। এটা যদি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র না হতো, তবে বছর দুয়েক আগেই শেষ হয়ে যেত। আজকে ওই অঞ্চলের মানুষ লাভবান হতো। ’

বর্তমান সরকারের আমলে হলমার্কসহ নানা কেলেঙ্কারির বিষয়ে জানতে চাইলে জয় বলেন, ‘দেখুন, বাংলাদেশ ১৬ কোটি মানুষের দেশ। অন্যায় তো মানুষ করবেই। আপনি যতই সৎ থাকেন কিছুসংখ্যক মানুষ অন্যায় করবেই। তবে সরকারের দায়িত্ব কী? সরকারের দায়িত্ব হলো সাজা দেওয়া, যাতে ভবিষ্যতে অন্য কেউ এ ধরনের অন্যায় করতে ভয় পায়। আমাদের সরকার তো কাউকে ছাড় দেয়নি।

আমাদের সরকারের বর্তমান একজন এমপি কারাগারে আছে, একজন এমপি কারাগারে ছিল, এখন জামিনে আছে। ছাত্রলীগের সাড়ে ছয় শর ওপরে আমরা জেল দিয়েছি। আপনারা জানেন একজন মন্ত্রীর আত্মীয়কেও ফাঁসির দণ্ড দিয়েছি। এটা কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসে হয়নি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন কোনো সরকার নেই আওয়ামী লীগ ছাড়া, যারা চোখ বন্ধ করে কোনো দল না দেখে সাজা দিয়েছে। সমস্যা আছে, সমস্যা থাকবে। ’

তিনি বলেন, ‘জরিপে যেটা আসে, আইন-শৃঙ্খলার দিক থেকে বাংলাদেশ এখন অনেক ভালো আছে। মানুষ কিন্তু বলে যে তাদের জীবনের শুধু অর্থনৈতিক আয় বাড়েনি, নিরাপত্তাও বেড়েছে। কেলেঙ্কারি মাঝেমধ্যে হবে। সরকারের দায়িত্ব যারা দায়ী, তাদের সাজা দেওয়া। সরকার তা করে যাচ্ছে। ’

সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের প্রসঙ্গে জয় বলেন, ‘মানুষ চায় দুটি জিনিস—একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন, আরেকটি শান্তি। নির্বাচন যদি নিরপেক্ষ হয়, মানুষ কিন্তু অন্য বিষয় নিয়ে মাথা ঘামায় না। মানুষ যেন তাদের ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে পারে, মানুষ এটাই চায়। ’

আরো একবার বিএনপিবিহীন নির্বাচনের দায় সরকার নেবে কি না জানতে চাইলে জয় বলেন, ‘গতবার আমরা কী করলাম? আমার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফোন দিলেন খালেদা জিয়াকে। কিন্তু মিসেস জিয়া প্রধানমন্ত্রীকে ধমক দিলেন প্রায় আধাঘণ্টা ধরে। তারপর ওনার ছেলে আরাফাত রহমান যখন মারা যায়, আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী চলে গেলেন তাঁর বাসায়। আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রীকে দাঁড় করিয়ে রাখলেন বাসার গেটে।

১০ মিনিট তাঁকে ঢুকতেই দেওয়া হলো না। তো আমন্ত্রণ, আলোচনা তো একতরফা হয় না। এক হাতে তো তালি বাজে না। যেই কাজ আমরা একবার চেষ্টা করে, একবার শুধু নয়, বারবার চেষ্টা করে অপমানিত হয়েছি, সেটা আমরা আবার কেন করব? একজন চালাক মানুষ একই ভুল শুধু একবার করে।

শুধু বোকা মানুষই একই ভুল বারবার করতে থাকে। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করেছি তাদের নির্বাচনে আনতে। তারা আসেনি। উল্টো তারা জ্বালাও-পোড়াও করেছে। এবার আমাদের দায়িত্ব না। বিএনপি নির্বাচনে আসতে চাইলে আসবে, না আসতে চাইলে আসবে না। আমাদের পক্ষ থেকে আমরা কোনো পদক্ষেপ নিতে রাজি না। ’

তাহলে কী হবে, এমন প্রশ্নের উত্তরে জয় বলেন, ‘একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে, মানুষ ভোট দেবে। মানুষ যাকে ভোট দেবে সে দলই সরকার গঠন করবে। এটাই হবে। ’

ধর্মভিত্তিক রাজনীতির প্রসঙ্গে জয় বলেন, ‘আমরা সাম্প্রদায়িক রাজনীতি দেখতে চাই না। এখানে জামায়াতে ইসলামীসহ একটা গোষ্ঠী সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করছে। তবে জামায়াতে ইসলামী এবারে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। ’

‘ধানের শীষ’ প্রতীক নিয়ে জামায়াতের কারো কারো নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা প্রসঙ্গে জয় বলেন, ‘আমাদের নির্বাচন কমিশন বলেছে, জামায়াতে ইসলামীর যারা সংসদ সদস্য ছিল তারা যদি অন্য কোনো প্রতীক নিয়ে আসে, তবে তাদের নির্বাচনে অংশ নিতে দেবে না। আমি চাই নির্বাচন কমিশন এটা পালন করুক। কারণ আমরা কেউ চাই না যুদ্ধাপরাধীর একটি দল অন্য কোনো নাম নিয়ে বা অন্য কোনো প্রতীক নিয়ে আবার সংসদে আসুক, এটা আমরা কেউ চাই না। ’

আওয়ামী লীগের সঙ্গে হেফাজতের ঘনিষ্ঠতার প্রসঙ্গে জয় বলেন, ‘২০১৩ সালে বলা হয়েছিল আওয়ামী লীগ হেফাজতের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে। এখন আবার বলা হচ্ছে আওয়ামী লীগ হেফাজতের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছে। বাস্তব কথা হচ্ছে, এখানে আওয়ামী লীগ হাত মেলায়নি, ছাড় দেয়নি। এখানে আওয়ামী লীগকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। এখানে গুজব ছড়ানো হয়েছে, সমালোচনা হয়েছে। আমরা তো এমন কিছু করিনি যে হেফাজতকে কিছু দিয়েছি। পাঠ্যপুস্তকে কিছু কাটছাঁট হয়তো করা হয়েছে; কিন্তু বিরাট আকারে কিছু হয়নি। তার মানে এই নয়, আওয়ামী লীগ হেফাজতকে কিছু দিয়েছে। অনেক সময় নিচের দিকে এমন কিছু কাজ হয়ে যায়, যেটা পরে জানতে পারি এটা হয়েছে। সব সময় তো সব কিছু পড়ে দেখা সম্ভব হয়নি। …আওয়ামী লীগ সেক্যুলারিজমের সঙ্গে কোনো আপস করেনি। ’

আওয়ামী লীগের পরবর্তী নেতৃত্বে কে আসবেন—এ প্রসঙ্গে জয় বলেন, ‘আমি তো সেটা বলতে পারব না। আওয়ামী লীগ হচ্ছে একটি গণতান্ত্রিক দল। আমাদের প্রতি তিন বছর অন্তর একটি কাউন্সিল হয়। সেখানে কাউন্সিলররাই সিদ্ধান্ত নেয় কে নেতা হবে। এত দিন তারা আমার মাকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে রেখেছে। ভবিষ্যতে তারা কাকে চাইবে সেটা তাদের বিষয়। ভবিষ্যতে যখন কাউন্সিল হবে, যখন আমার মা আর থাকতে চাইবে না বা আওয়ামী লীগ একটা পরিবর্তন চাইবে, এটা সম্পূর্ণ দলের ওপর নির্ভরশীল। ’

আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা প্রসঙ্গে জয় বলেন, ‘সেই সিদ্ধান্ত আমি এখনো নিইনি। আমি বা আমাদের পরিবারেরই আসলে ক্ষমতা বা টাকার প্রতি সে রকম লোভ হয়নি। আমরা দেশের জন্য বা দলের জন্য কাজ করতে ভালোবাসি। আমি দলের জন্য কাজ করছি দলকে ক্ষমতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য, আর দেশের জন্য কাজ করছি ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। ভবিষ্যতে কী হবে সেটা ভবিষ্যৎই বলবে। আমি এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। ’

ইন্টারনেটের দাম প্রসঙ্গে জয় বলেন, ‘২০২১ সালের মধ্যে ইন্টারনেট খরচ মানুষের গড় আয়ের ২ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। আওয়ামী লীগ সরকার যত দিন ক্ষমতায় থাকবে প্রতিবছরই ইন্টারনেটের খরচ কমানো হবে। ’ গত ৯ বছরে ইন্টারনেটের খরচ ৯৯ শতাংশ কমিয়ে আনা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন জয়।

কালের কণ্ঠ

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin