bnp_jamat

বিএনপিকে ডিঙিয়ে জামায়াতের মেয়র প্রার্থী দেয়ার নেপথ্যে কারণ ফাঁস

২০ দলীয় জোটদের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি বিএনপিকে ডিঙিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) উপ-নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করেছে জামায়াতে ইসলামী। দলের ঢাকা উত্তরের আমির ও নির্বাহী পরিষদ সদস্য মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিনকে প্রার্থী করা হয়েছে। ২০ দলীয় জোটের সাথে আলোচনা না করেই প্রার্থী ঘোষনা করায় তোপের মুখে আছে দলটি।

সোমবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জোটের বৈঠকে কঠোর সমালোচনার মুখে পড়তে হয় দলটির প্রতিনিধি আব্দুল হালিমকে।

তবে জামায়াত সূত্র দাবি করছে, জামায়াতের একক প্রার্থী ঘোষনা দেয়া রাজনৈতিক কৌশল। রোববার অনুষ্ঠিত জোটের বৈঠকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে জামায়াতের একক প্রার্থী ঘোষণার বিষয়েও কঠোর সমালোচনা করে বক্তব্য দেন জোট নেতারা। জামায়াতের প্রার্থী দেয়ার বিষয়টি তুলে ধরে বৈঠকে বক্তব্য দেন জাতীয় পাটির ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ ইব্রাহিম, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ ও ন্যাপের গোলাম মোস্তফা ভূইঁয়া।

তারা বলেন, জোটগতভাবে আমরা প্রার্থী দিতে চাই। সেখানে জামায়াত একক প্রার্থী ঘোষণা দুঃখজনক। জবাবে জামায়াত নেতা মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, এটা আমাদের নির্বাচনী স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার অংশ। আমরা জোটগতভাবেই ইলেকশান করব। জোটনেত্রী ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে চূড়ান্তভাবে মনোনয়ন দেবেন। জামায়াত তা মেনেও নেবে। আমরা একসাথে কাজ করতে চাই। বৈঠকে বেগম খালেদা জিয়া জামায়াত ইস্যুতে নীরব থাকলেও তিনি যেকোনো মূল্যে জোটের ঐক্য অটুট রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

জামায়াতের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, রাজধানীতে ঝিমিয়ে পড়া দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের চাঙ্গা করতেই একক প্রার্থী দেয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর উত্তরের প্রায় ২৫ লাখ ভোটারের মধ্যে দলীয় ভোটারের সংখ্যা অনেক কম হলেও দলীয় ভাবমূর্তি কেমন তা দেখতে চায় দলটির নীতিনির্ধাকরা। পাশাপাশি একক প্রার্থী দিলে রাজনেতিক অঙ্গনে এর প্রভাব কেমন হয় তাও দেখার উদ্দেশ্য রয়েছে। এছাড়া জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করা হলে মেয়র বাদেও ১৮টি নতুন ওয়ার্ডে নির্বাচন হবে। সেগুলোতে কমিশনার চাওয়া হবে বিএনপির কাছে।

জামায়াতের নির্ভরযোগ্য সূত্রের দাবী, এককভাবে ঢাকা সিটি উত্তরে জামায়াতের নির্বাচন করার সম্ভবনা কম। কারন জামায়াত ২০ দলীয় জোটবদ্ধ। এখানে জোটের সিন্ধান্তই চুড়ান্ত। জোট কখনো চাইবে না জামায়াত একক প্রার্থী দিক। সেক্ষেত্রে ১৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে কমপক্ষে ৮টি ওয়ার্ডে জোটের সমর্থন চাওয়ার বিষয়টি দর কষাকষি এবং জোটে জামায়াতের গুরুত্ব বাড়াতেই একক প্রার্থী ঘোষনা করা হয় বলে জানয়েছে জামায়াত সূত্র।

১৯৯৪ সালেও অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর বর্তমান সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম। এখন তিনি কারাগারে।

সূত্র জানায়, মনোনীত মেয়র প্রার্থী মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি। ছাত্র রাজনীতি শেষ করে জামায়াতের রমনা থানার দায়িত্বশীল হিসেবে যোগ দেন তিনি। পরবর্তী সময়ে এই থানার সভাপতি, এরপর অবিভক্ত ঢাকা মহানগর কমিটির সহকারী সেক্রেটারি পদে দেখা গেছে তাকে। পরে গত বছরের শুরুর দিকে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণে ভাগ হলে তিনি উত্তরের আমির নির্বাচিত হন। তার গ্রামের বাড়ি সিলেটে।

বর্তমানে জামায়াতের মনোনীত দু’জন ঢাকা মহানগর উত্তরে মহিলা নেত্রী কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্বরত বলে জানা গেছে। ন্যাপ মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূইঁয়া পূর্বপশ্চিম নিউজকে বলেন, জোটের বৈঠকে আমরা সর্বসম্মতভাবে ডিএনসিসিতে একক প্রার্থী দেয়ার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপর দায়িত্ব অর্পন করেছি।

এনপিপি সভাপতি ফরিদুজ্জামান ফরহাদ পূবপশ্চিমকে বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে জামায়াতের একক প্রার্থী দেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে জামায়াতের পক্ষ বৈঠকে আব্দুল হালিম বলেছেন, এটা আমাদের স্বাভাবিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া। জোটগতভাবে জোট নেত্রী যে সিদ্ধান্ত নেবেন আমরা সেই সিদ্ধান্ত । ফরহাদ বলেন, ওর্য়াড কাউন্সিলরদের নির্বাচনের বিষয়ে উপস্থিত জোট নেতারা দাবি করেছেন যেসব দলের কাউন্সিলর যোগ্য জোটগতভাবে যেন তাদেরকে প্রার্থী করা হয়। তাহলে ফলাফল ভাল হবে।

রোববার জোটের বৈঠকে ডিএনসিসিতে মেয়রপ্রার্থী চূড়ান্ত করার বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলগমীর সাংবাদিকদের জানান, আগামী শনিবার দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) উপ-নির্বাচনের ২০ দলীয় জোটের চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করবে বিএনপি।

আরেক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গত সোমবার রাতে ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে জোটের শীর্ষ নেতারা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রার্থী বাছাইয়ের দায়িত্ব বিএনপি চেয়ারপাররসন খালেদা জিয়াকে দিয়েছেন। তারা বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন যাকে মনোনয়ন দিবেন, জোট তাকেই সমর্থন দেবে।

পূর্বপশ্চিমবিডিডটকম

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin