বাংলাদেশের নাগরিকরা অধিকাংশই ডেমোক্র্যাট সমর্থন করে। যে কোনো নির্বাচনে বাংলাদেশের যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করেন এবং যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন নিয়ে খোঁজখবর রাখেন, তাদের একটা বড় অংশই ডেমোক্র্যাট দলের সমর্থন। এবারের নির্বাচনেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দেখা গেছে যে, কমবেশি বাংলাদেশীরা মোটামুটি ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে একাট্টা।
বাংলাদেশেও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থন জো বাইডেনের তুলনায় অনেক কম। কারণ ডোনাল্ড ট্রাম্পের আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে তাকে নিয়ে নেতিবাচক খবরের কারণেই বাংলাদেশের জনগণ বিশেষ করে যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আছেন এবং বাংলাদেশে আছেন তারা ট্রাম্পের ব্যাপারে কিছুটা হলেও নেতিবাচক।
কুটনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, শেষ পর্যন্ত যদি বাইডেন বিজয়ী হন, তাহলে বাংলাদেশে কোন কোন ব্যাপারে ক্ষতি হতে পারে। বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের যে কূটনীতি সেটি ছিল মধ্যপ্রাচ্য উত্তর কোরিয়া, ইরান কেন্দ্রিক। তিনি এই উপমহাদেশ এর দিকে খুব একটা নাক গলাতে না।
আর ডেমোক্রেটরা অনেক বেশি উপমহাদেশ কেন্দ্রিক কূটনীতিতে মনোযোগী। আর এই কূটনৈতিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশের কিছু কিছু বিষয়ে ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে বলে কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। আর এই ক্ষতিগুলোর মধ্যে যে ক্ষতিগুলো শিকার বাংলাদেশ হতে পারেন বলে কূটনৈতিক মহল মনে করছেন; তার মধ্যে:-
১। অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ:
দেখা গেছে যে, ডেমোক্র্যাটরা যখন ক্ষমতায় থাকেন তখন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে। রাষ্ট্রদূতদের দৌড় ঝাপ বাড়ে। তারা বাংলাদেশের মানবাধিকার, গণতন্ত্র ইত্যাদি বিষয়ে অযাচিত কথাবার্তা বলেন। ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে যেহেতু প্রবাসী বাংলাদেশীদের সম্পর্ক খুব বেশি। সে জন্য সহজেই বাংলাদেশের ইস্যুগুলোকে সিনেট কংগ্রেসের রাষ্ট্রপতি পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া যায়। সেটা ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময় ছিল না বললেই চলে।
২। ভারত নির্ভরতা বাড়বে:
বাংলাদেশের ব্যাপারে জো বাইডেন ভারত নির্ভরতা অবশ্যই বাড়বে। কারণ তার রানিংমেট কমলা হ্যারিস ভারতীয় বংশোদ্ভূত। এর ফলে বাংলাদেশের মার্কিন নীতি পুরোপুরি ভারত নির্ভর হয়ে পড়বে। চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে বাংলাদেশে হয়তো নতুন চাপে পড়তে পারে।
৩। সুশীলদের প্রভাব বাড়বে:
জো বাইডেন এবং ডেমোক্র্যাটরা ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশের সুশীলদের ক্ষমতা বাড়বে। বিশেষ করে বাংলাদেশের সুশীলদের একটা বড় অংশের সঙ্গে ডেমোক্র্যাটদের সুসম্পর্কের কথা জানা যায়। তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ ব্যাপার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের পৌঁছে দেয়ার জন্য প্রাণান্ত চেষ্টা করবেন। আগে তারা যেমন সহজে সুযোগ পেতেন না, এখন এ ধরনের অভিযোগ করার সুযোগ তাদের বেড়ে যাবে।
৪। ইসরায়েল ইস্যুতে চাপ বাড়বে:
ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং জো বাইডেনের পররাষ্ট্রনীতির মধ্যে অনেক অমিল থাকলেও একটি বিষয় তারা মোটামুটি ঐক্যমতে আছেন। সেটা হলো ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যাপারে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে যে কূটনীতি শুরু করেছিলেন সেটাকে জো বাইডেন এগিয়ে যাবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে যেহেতু ডেমোক্র্যাটদের নজর উপমহাদেশের উপর বেশি থাকে, সেজন্য বাংলাদেশের ওপর ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশের ওপর চাপ বাড়তে পারে।
৫। বাণিজ্য সূচক কমতে পারে:
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাজার হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি রপ্তানি করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। আর এই কোটা সুবিধা বাতিল করার পরেও বাংলাদেশ এখনো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানীসহ অন্যন্য রপ্তানীর ক্ষেত্রে ভালো অবস্থানে আছে। কিন্তু ডেমোক্র্যাটরা ক্ষমতায় এলে যেমন ট্রাম্পের আগ্রাসী দিকগুলো থেকে তারা সরে আসবে। ফলে গার্মেন্টসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে চীন আরো বেশি সুযোগ পাবে।
কমলা হ্যারিস থাকার কারণে ভারতের পণ্যের বাজার প্রসারিত হবে। এর ফলে বাংলাদেশী পণ্যের বাজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সংকুচিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ। এই সব ক্ষতিগুলোকে পুষিয়ে নেয়ার জন্য বাংলাদেশে প্রথম থেকেই কুটনৈতিক তৎপরতার প্রয়োজন হবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
বাংলা ইনসাইডার