বাংলাদেশে মন্ত্রিসভায় রদবদল কিসের ইঙ্গিত

বাংলাদেশে মন্ত্রিসভায় বড় ধরণের রদবদল আনা হয়েছে। এ বছরেরই শেষ দিকে নির্বাচন হওয়ার কথা, সেই প্রেক্ষাপটে এই রদবদলকে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা তাদের নির্বাচনী কৌশলের অংশ হিসাবে বর্ণনা করছেন।

কিন্তু দেখা যাচ্ছে, রদবদলের প্রভাব বেশি পড়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক দলগুলোর নেতাদের উপরে। শরিক দলগুলো থেকে যারা মন্ত্রিসভায় রয়েছেন, তাদেরই অনেকের দায়িত্ব পরিবর্তন করা হয়েছে। খবর বিবিসির

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের শরীক ওয়ার্কাস পার্টির নেতা রাশেদ খান মেননকে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, সেটিকেও তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় বলেই মনে করছেন।

যদিও বাংলাদেশ বিমান এবং সিভিল এভিয়েশনের ব্যবস্থাপনা নিয়ে আওয়ামী লীগ এবং সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে মেননের ব্যাপারে অনেক দিন ধরে অসন্তোষ ছিল।

২০১৬ সালের নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাঙ্গেরি সফরে যাওয়ার সময় বিমানের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সেই বিমান জরুরি অবতরণ করাতে হয়েছিল। এ নিয়ে সরকারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যেও ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। এখন মেননকে সরিয়ে অন্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়ার পিছনে এসব বিষয় অন্যতম কারণ হয়ে থাকতে পারে বলে আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে কথা বলে ধারণা পাওয়া গেছে।

আওয়ামী লীগের আরেক শরীক জেনারেল এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির নেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে পানিসম্পদ মন্ত্রনালয় থেকে সরিয়ে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

তার ব্যাপারেও আওয়ামী লীগের ভেতরে সমালোচনা ছিল। আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেকে বলেছেন, হাওর অঞ্চলে বাঁধ ভেঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়ার ক্ষেত্রে পানিসম্পদ মন্ত্রী হিসাবে মাহমুদ যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারেননি বলেই তারা মনে করেন।

এখন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে জাতীয় পার্টির আরেক অংশের নেতা আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে। তিনি এতদিন বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। সেই মন্ত্রণালয়ে তার কাজ নিয়েও আওয়ামী লীগের ভিতরে সমালোচনা ছিল বলে দলটির নেতাদের অনেকে বলছেন।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের আরেক শরিক জাসদ নেতা হাসানুল হক ইনু তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে বহাল থাকলেও সেখানে তার একক ক্ষমতা কিছুটা খর্ব হবে বলে মনে হচ্ছে।

আওয়ামী লীগপন্থী সাংবাদিকদের সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন ধরে হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। সেই প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের বিশ্বস্ত একজনকে তথ্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে বসানো হলো বলে দলের মধ্যেই ধারণা করা হচ্ছে।

তথ্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে আনা হয়েছে তারানা হালিমকে। তিনি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন।

২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের শরিক দলগুলোর কয়েকজন নেতাকে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। এনিয়ে আওয়ামী লীগের ভিতরে ক্ষোভ ছিল এবং ঐ মন্ত্রীদের কাজ নিয়ে বিভিন্ন সময় দলটির ভিতরে সমালোচনাও হয়েছে।

এখন মন্ত্রিসভার রদবদলে শরিক দলগুলোর মন্ত্রীদের মন্ত্রণালয়ে আওয়ামী লীগের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা হয়েছে বলে দলটির নেতাদের অনেক মনে করেন।

হঠাৎ বড় ধরণের এমন রদবদলকে আওয়ামী লীগ নেতারাও চমক হিসেবে দেখছেন।

তবে আওয়ামী লীগ নেতা এবং শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের মন্ত্রণালয়েও নতুন শপথ নেয়া কাজী কেরামত আলীকে প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে। সম্প্রতি বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন পত্র ফাঁস এবং দুর্নীতি নিয়ে মন্তব্য করায় নাহিদকে নিয়েও আওয়ামী লীগের ভিতরে সমালোচনা হয় বলে দলটির নেতারা বলছেন।

এছাড়া নতুন তিন জন মন্ত্রীর মধ্যে তথ্য ও প্রযুক্তি খাতের একজন উদ্যোক্তা মোস্তাফা জব্বারকে ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন জুনায়েদ আহমেদ পলক। আর তারানা হালিম ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী। এখন মোস্তাফা জব্বার টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী হয়ে দু’টি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেলেন।

লক্ষীপুরের সংসদ সদস্য শাহজাহান কামাল দায়িত্ব পেয়েছেন বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের। আর মৎস ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ ঐ মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রী হলেন। এই মন্ত্রণালয়েরই মন্ত্রী ছায়েদুল হক কয়েক সপ্তাহ আগে বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে মৃত্যুবরণ করেন।

মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে পদ পূরণের বিষয়কে সামনে এনেই মন্ত্রিসভায় এই রদবদল করা হলো।

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin