bnp-flag

বহুমতে দেরি বিএনপির চূড়ান্ত কর্মকৌশল

বিএনপির সিনিয়র এক নেতা জানান, কর্মকৌশল নিয়ে বিএনপিতে নানা মত আছে। প্রতিটি মতের পেছনে গ্রহণযোগ্য যুক্তিও আছে। এরপরেও এবার সতর্ক পথ চলায় সিদ্ধান্ত রয়েছে তাদের। তাই হুট করে কোনো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত্ম নেবে না বিএনপি

নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন আদায়ের দাবিতে বিএনপির শীর্ষপর্যায়ে থেকে শুরম্ন করে সর্বস্ত্মরের নেতাকর্মীরা একমত। তবে এই দাবি আদায়ে কর্মকৌশল প্রণয়নে দলটিতে রয়েছে বহুমত। অনেকে এখনই আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করতে চান, আবার অনেকে চান সরকারের সমঝোতার জন্য আরো সময় দিতে। সব মতের পক্ষেই গ্রহণযোগ্য যুক্তি থাকায় দাবি আদায়ের চূড়ান্ত্ম কর্মকৌশল নির্ধারণ করতে পারছে না বিএনপি।

জানা গেছে, দাবি আদায়ের কর্মকৌশল নির্ধারণে বিএনপিতে তিন ধরনের মত আছে। দলের একটি অংশ মনে করছেন, আগামী ৫ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচনের এই দিনকে ঘিরে এখনই অল আউট আন্দোলনে যাওয়া উচিত। আরেকটি বড় অংশ মনে করেন, আগামী জুন পর্যন্ত্ম শান্ত্মিপূর্ণভাবে সমঝোতার চেষ্টা করে তারপর আন্দোলনে যাওয়া উচিত হবে।

আরেকটি অংশের বক্তব্য, যেহেতু সরকার একতরফা নির্বাচন করে মেয়াদ পূর্ণ করছে তাই আন্দোলনে যাওয়ারই দরকার নেই। শুধু সমঝোতার চেষ্টা করেই নির্দলীয় দাবি আদায় করা সম্ভব হবে। দলে এই তিন ধরনের মত উপস্থাপনকারী নেতারা নিজেদের মতের স্বপক্ষে গ্রহণযোগ্য যুক্তিও দিচ্ছেন।

৫ জানুয়ারিতে আন্দোলনে যাওয়ার পক্ষে থাকা নেতাদের যুক্তি হচ্ছে, আন্দোলন ছাড়া কোনো অবস্থাতেই এই সরকারের কাছ থেকে দাবি আদায় করা সম্ভব হবে না। যেহেতু আন্দোলন করতেই হবে তাহলে বিলম্ভ করে লাভ নেই। আগেভাগে আন্দোলন শুরম্ন করলে সরকার চাপে পড়ে হলেও একটি সমঝোতায় আসার উদ্যোগ নিতে পারে।

আর জুনে আন্দোলন যাওয়ার পক্ষে থাকাদের যুক্তি হচ্ছে, এক বছর আগে আন্দোলন শুরম্ন করলে তা দমনে সরকার পর্যাপ্ত সময় পাবে। আর সময় দিলে সরকার বিগত সময়ের মতো আবারও মামলা হামলার মাধ্যমে বিএনপিকে আবারো দুর্বল করে ফেলার সুযোগ পাবে। তখন নির্বাচনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সঙ্গত কারণে নির্বাচনের কাছাকাছি সময়ে আন্দোলনের পরিকল্পনা করা উচিত।

অন্যদিকে আন্দোলনে না যাওয়ার পক্ষে থাকাদের যুক্তি হচ্ছে, তাদের কাছে তথ্য আছে, নির্বাচন করতে হলে যেসব উইং সরকারকে ব্যবহার করতে হয়, তারা সবাই সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পক্ষে। পশ্চিমা দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, দাতা সংস্থা এমনকি জাতিসংঘও সবার অংশগ্রহণে নির্বাচনের নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছেন।

তাই এবার সুষ্ঠু নির্বাচন ইসু্যতে শান্ত্মিপূর্ণ রাজনৈতিক সমাধানে ক্ষমতাসীনরা বাধ্য হতে পারে। এরপরেও যদি ক্ষমতা দীর্ঘমেয়াদী করতে সরকার আগের পথ বেছে নেয় সেক্ষেত্রে আন্দোলনের কথা ভাবা যাবে। আন্দোলনের মতো আন্দোলন হলে ৭ দিনের মধ্যেই সফল হওয়া সম্ভব বলেও তাদের যুক্তি।

বিএনপির সিনিয়র এক নেতা জানান, কর্মকৌশল নিয়ে বিএনপিতে নানা মত আছে। প্রতিটি মতের পেছনে গ্রহণযোগ্য যুক্তিও আছে। এরপরেও এবার সতর্ক পথ চলায় সিদ্ধান্ত্ম রয়েছে বিএনপির। তাই হুট করে কোনো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত্ম নেবে না বিএনপি। সময় নিয়ে হলেও কার্যকরী সিদ্ধান্ত্ম নেয়া হবে।

দলের অপর এক সিনিয়র নেতা জানান, আন্দোলনের বিষয়ে চূড়ান্ত্ম কর্মকৌশল নির্ধারণে সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে, যারা এখনই আন্দোলনে যাওয়ার পক্ষে তারা আন্দোলনে কোনো ভূমিকা রাখার কথা নয়। আর যারা আন্দোলনে যাওয়ার পক্ষে নন তারা আন্দোলন সফলের হাতিয়ার হিসেবে পরিচিত। তাই কর্মকৌশল চূড়ান্ত্ম করতে সময় লাগছে।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির এক নেতা জানান, আগামীতে যাতে আন্দোলন ব্যর্থ না হয় সেজন্য বিগত সময়ে কেন আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছিল, কাদের গাফিলতি এর জন্য দায়ী, সমন্বয়ে থাকা নেতাদের ভূমিকা কী ছিল, দলের কারো বিশ্বাসঘাতকতা ছিল কিনা এসব বিষয়গুলো নিয়ে দলের উচ্চপর্যায়ে বিশেস্নষণ হচ্ছে। সব পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা করার পরে প্রতিটি ক্ষেত্রে সুযোগ্য নেতার নেতৃত্বে পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণ করা হবে। তাই সময় নিয়ে সতর্ক সিদ্ধান্ত্ম নেয়া হবে। তবে আগামী জুনের মধ্যেই চূড়ান্ত্ম কৌশল নিয়ে আন্দোলন মাঠে বা সমঝেতার টেবিলে থাকবে বিএনপি।

বিএনপি সূত্র জানায়, আন্দোলনের চূড়ান্ত্ম কর্মকৌশল যাই হোক না কেন ভেতরে ভেতরে সাংগঠনিক কর্মকা- খুব দ্রম্নতগতিতে এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। শান্ত্মিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিনিয়ত জনমত নিজেদের পক্ষে আনার চেষ্টা করছে। পাশাপাশি নির্বাচনের জন্য সবচেয়ে সুযোগ্য প্রার্থী বাছাইয়ের জন্যও জরিপ চলছে।

জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থায়ী নির্বাচনগুলোতে শতভাগ সফলতা পেতে এরই মধ্যে কাজ শুরম্ন হয়েছে। এর অংশ হিসেবে রংপুর সিটি নির্বাচন দিয়ে শুরম্ন করে রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনের প্রচারণায় খোদ চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নামার সিদ্ধান্ত্ম হয়েছে।

এ ছাড়া ২০ দলীয় জোটের পরিধি আরো বৃদ্ধি এবং পরবর্তী সময়ে অন্য জোটের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন এবং নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে কার্যক্রম শুরম্ন করা হযেছে। আর নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায়ে কূটনৈতিক তৎপরতা আরো বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

বিএনপির পরবর্তী কর্মকৌশলের বিষয়ে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ বলেন, বর্তমান সরকার দেশে যে পরিস্থিতি তৈরি করেছে, তাতে মানুষ ফুঁসে উঠেছে। কিন্তু বিএনপি বারবার সরকারকে সময় দিচ্ছে, যাতে তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হয়। কিন্তু ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে গেলে মরণপণ আন্দোলনে নামতে হবে।

প্রসঙ্গত, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বন্ধে ২০১৩ সালের শেষ দিকে ধারাবাহিক আন্দোলন শুরম্ন করে বিএনপি। হরতালের পাশাপাশি লাগাতার অবরোধ কর্মসূচিও ঘোষণা করে দলটি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পরও বেশ কিছু দিন আন্দোলন অব্যাহত রাখে দলটি। পরে আন্দোলন থেকে সরে এলেও নির্বাচনের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আবারও কর্মসূচিতে যায় তারা।

দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সভা করতে না দেয়ায় ২০১৫ সালের ৬ জানুয়ারি আবারও অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। কর্মসূচি চলাকালে বিভিন্ন সহিংসতার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার হন দলের অধিকাংশ শীর্ষ নেতা। ফলে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে বিএনপি। এর পর থেকে আর কোনো আন্দোলন যেতে পারেনি দলটি।

যায়যায়দিন

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin