‘বন্দুকযুদ্ধে’ ছাত্রদল নেতা নিহত: পুলিশের দাবি মাদক ব্যবসায়ী, পরিবারের দাবি নিরপরাধ

নেত্রকোনায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত মাদক ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। জেলা বিএনপির একাধিক নেতা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তারা জানান, আমজাদ বিএনপির স্থানীয় ও কেন্দ্র ঘোষিত সব কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতেন। তবে জেলা ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় তিনি কোনও পদে ছিলেন না।

পুলিশ জানায়, আমজাদের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে একাধিক দলীয় মামলা ছিল। এছাড়াও নেত্রকোনা মডেল থানায় খুন, অস্ত্র, বিস্ফোরক, দ্রুত বিচার, চুরি, মাদকসহ ১৩টি মামলার আসামি ছিলেন আমজাদ। তবে স্বজনদের দাবি, আমজাদ নিরপরাধ ছিলেন।

তার বিরুদ্ধে সবগুলো মামলাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বিএনপি করার কারণেই তাকে ‘হত্যা’ করা হয়েছে।

নিহত আমজাদ হোসেন শহরের পশ্চিম নাগড়া এলাকার মৃত আলী হোসেনের ছেলে। তিনি জেলা ছাত্রদলের একজন সক্রিয় কর্মী বলে নিশ্চিত করে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম মনিরুজ্জামান দুদু। সম্প্রতি দেশব্যাপী বিএনপির বিরুদ্ধে বিস্ফোরক ও দ্রুত বিচার আইনে মামলারও আসামি আসামি ছিলেন আমজাদ। সোমবার (২১ মে) বিএনপির মামলার শুনানি চলাকালে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে আদালত পাড়ায়ও ছিলেন।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডা. আনোয়ারুল হক বলেন, ‘আমজাদ ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী। সর্বশেষ বিএনপির রাজনৈতিক মামলায় সে আমার সঙ্গে আসামির তালিকায় ছিল। যদি সে আসামি হয় বা মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকে তাহলে তাকে দেশের প্রচলিত আইনুনযায়ী বিচার করা যেত। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।’

পুলিশের দাবি, মাদকবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে সোমবার দিনগত গভীর রাতে আমজাদকে তার বাসা থেকে আটক করে পুলিশ। পরে তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সদর উপজেলার বড়ওয়ারি বালু মহাল এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে অস্ত্র উদ্ধার করতে গেলে সংঘবদ্ধ মাদক ব্যবসায়ীর একটি দল পুলিশের ওপর হামলা করে। পুলিশও পাল্টা গুলি চালালে এই নিহতের ঘটনা ঘটে।

এ সময় নেত্রকোনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বোরহান উদ্দিন খান, উপপরিদর্শক মহসীন, মামুন, মুগবুল ও পুলিশ সদস্য মালেক আহত হন। আহতরা নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

নেত্রকোনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আশরাফুল আলম জানান, ‘অভিযানে ৫০০ গ্রাম হেরোইন, ৩০৫ পিচ ইয়াবা, একটি পাইপগান ও দুইটি কার্তুজ উদ্ধার করা হয়েছে।’

তবে আমজাদের মামা আমিনুল হক বলেন, ‘আমার ভাগ্নে কোনোদিন একটি সিগারেটও খায়নি। এলাকায় খবর নিন। সে কোনও নিরীহ মানুষকে নির্যাতন করেছে তা কেউ বলতে পারবে না। মামলা যেগুলো সব রাজনৈতিক মামলা। বিএনপি করতো বলেই আজ তাকে হত্যা করা হয়েছে।’

নিহত আমজাদকে দেখতে জেলা বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা এবং উৎসুক জনতা তার বাড়িতে ভিড় করেন। এ সময় জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ফরিদ হোসেন বাবু বলেন, ‘সে আমাদের সংগঠনের সক্রিয় কর্মী। এ বিষয়ে আপনাদের কাছে শিগগিরই বিবৃতি দেওয়া হবে।’

নেত্রকোনা পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরী বলেন, ‘কেউ বা কোনও দল যদি অপরাধীদের লালন করে তাহলে তো কিছু বলার নেই। মাদক ব্যবসায়ী যে দলেরই হোক না কেন, এ বিষয়ে কোনও ছাড় দেবে না পুলিশ। এই অভিযান আগামী কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে।’

মঙ্গলবার দুপুরে জানাজা শেষে আমজাদ হোসেনকে সাতপাই পৌর করবস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

উৎসঃ   বাংলা ট্রিবিউন

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin