বন্দী খালেদা জিয়া কেমন আছেন

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ঠাঁই হয়েছে নাজিম উদ্দিন রোডের পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে। খালেদা জিয়াকে যে কক্ষে রাখা হয়েছে সেটি প্রশাসনিক ভবন হিসেবে ব্যবহার করা হতো। সাত হাজার বন্দী ধারণক্ষমতার কারাগারটিতে বর্তমানে খালেদা জিয়াই একমাত্র বন্দী।

২০১৬ সালের ২৯ জুলাই পুরোনো এই কেন্দ্রীয় কারাগারের সব বন্দীকে কেরানীগঞ্জের নতুন কারাগারে নেওয়া হয়। তারপর থেকে কারাগারটি ফাঁকা ছিল।

সরকার ১৭ একরের এই জায়গায় জাদুঘর, বিনোদনকেন্দ্র ও উন্মুক্ত স্থান করার উদ্যোগ নেয়। খালেদা জিয়াকে সেখানে অন্তরীণ রাখায় পরিত্যক্ত কারাগারটি আবার সচল হলো।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজা হলে খালেদা জিয়াকে কোথায় রাখা হবে, তা নিয়ে বেশ কয়েক দিন ধরেই প্রস্তুতি চলছিল। প্রথমে ভাবা হয়েছিল, তাকে কাশিমপুরে কেন্দ্রীয় নারী কারাগারে (কাশিমপুর-৩) রাখা হবে। তবে কাশিমপুর থেকে ঢাকার আদালতে আনা-নেওয়া বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। এরপর ভাবা হয় নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারের কথা।

নাজিমুদ্দিন রোডে রাখার সিদ্ধান্ত হওয়ার পরই শুরু হয় ঘরগুলো ধোয়ামোছার কাজ। প্রধান ফটকের পর কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক যে কক্ষটিতেই বসতেন, সেই ঘরটিতেই খালেদা জিয়ার থাকার ব্যবস্থা করা হয়। বাথরুমসহ বড় কক্ষে তার থাকার জন্য খাট ও অন্যান্য জিনিসপত্র এক দিন আগেই আনা হয়েছে। ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দী হিসেবে খালেদা জিয়া এসব সুবিধা পাবেন।

কারাসূত্র জানায়, কারাগারে প্রথম শ্রেণির বন্দী যেসব সুবিধা পান, তার মধ্যে রয়েছে খাটসহ বিছানা, মশারি, চেয়ার-টেবিল, একটি দৈনিক পত্রিকা ও একজন কাজের মানুষ। এর পাশাপাশি জেলকোড অনুসারে তিনি খাবার পাবেন। সঙ্গে একজন গৃহকর্মী নেওয়ার আবেদন করেছেন খালেদার আইনজীবী। তবে কারাগার এখনো সে আদেশ পায়নি। খালেদা জিয়ার একজন আইনজীবী বলেছেন, একজন গৃহকর্মী খালেদার সঙ্গে আছেন।

বেলা দুইটার দিকে খালেদাকে কারাগারে নেওয়া হয়। সেখানে আসার পর খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন একজন নারী চিকিৎসক। জেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, খালেদা জিয়ার প্রেশার ঠিক আছে। তার স্বাস্থ্যগত কোনো বড় সমস্যা নেই। তিনি স্বাভাবিক খাওয়া-দাওয়া করছেন।

কারা সূত্র জানায়, এই কারাগারে দুজন ডেপুটি জেলার থাকবেন। একজন নারী ডেপুটি জেলার কারাগারের ভেতরে, আরেকজন পুরুষ ডেপুটি জেলার বাইরে থাকবেন। সার্বক্ষণিক একজন চিকিৎসকও থাকবেন। কারাগারের ভেতরে দায়িত্ব পালনের জন্য কয়েকজন দক্ষ ও পুরোনো কারারক্ষীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। খালেদাকে কারাগারে নেওয়ার আগেই গতকাল সকালে তাদের সেখানে এনে রাখা হয়। বাসা থেকে আদালতে আসার সময় নিজের জিনিসপত্র ছোট ছোট সাতটি ব্যাগে ভরে সঙ্গে নিয়েছিলেন খালেদা। এসব তার সঙ্গে দেওয়া হয়।

রায় ঘোষণার আগে সকাল থেকেই কারাগারের আশপাশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। চারপাশের সব সড়ক বন্ধ করে দেয় পুলিশ। প্রধান ফটকের সামনেও কাউকে ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি।
৩৬ বছরের রাজনৈতিক জীবনে খালেদা জিয়ার এটি দ্বিতীয় কারাবাস। এর আগে ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তিনি গ্রেপ্তার হন। তাকে সংসদ ভবন এলাকায় স্থাপন করা বিশেষ কারাগারে রাখা হয়। ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের আদেশে তিনি মুক্তি পান।

উল্লেখ্য, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ৫ বছর এবং তারেক রহমানসহ এ মামলা বাকি আসামিদের ১০ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin