bnp_464645484

ফুরফুরে বিএনপি

শনিবার (১ সেপ্টেম্বর) ৪০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী সফলভাবে পালন করে তৃপ্ত বিএনপি। নেতাকর্মীদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে ফুরফুরে মনোভাব। কোনও কর্মসূচি ছাড়াই বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতি দলটির প্রতি কর্মী-সমর্থক ও দলীয় আদর্শের ওপর জনভিত্তিকে আরও শক্তিশালী করেছে বলে মনে করেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা।

বিএনপির নেতারা বলছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় প্রধানের কারাবন্দি থাকাবস্থায় দলের প্রতি সাধারণ নেতাকর্মীদের আস্থা ও অবিচল বিশ্বাস তুলে ধরেছে। আগামী দিনের রাজনৈতিক রণকৌশল ও কর্মসূচি নির্ধারণে এই জনসমাবেশ নতুন মাত্রা যোগ করবে, এমনটি বিশ্বাস করেন নেতারা।

সাধারণ নেতাকর্মীদের মতো দলের সিনিয়র নেতারাও সফল প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন করে আনন্দিত। রবিবার সন্ধ্যায়ও সিনিয়র নেতাদের বৈঠকে বিষয়টি উঠে আসে। আগামী দিনে রাজপথের আন্দোলনে নতুন উদ্যম ও দলটির রাজনৈতিক আবেদন যে শেষ হয়ে যায়নি, এর প্রমাণ মিলেছে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর সমাবেশের মধ্য দিয়ে।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর সমাবেশে লাখ-লাখ মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করেছে, বিএনপি জনগণের দল। আমাদের সমাবেশে লোকজন এসেছে স্বতঃস্ফূর্তভাবে। আমাদের সমাবেশে আসতে সরকারি কর্মকর্তাদের বাধ্য করা হয়নি, স্কুলের ছেলে-মেয়েদের জোর করে আনা হয়নি। দুপুরের গরমের মধ্যে আমরা স্টেজে বসতেও অনেক কষ্ট হয়েছে, সেখানে নেতাকর্মীরা প্রখররোদ মাথায় নিয়ে দিনভর রাজপথে ছিলেন। এটা অসম্ভব ভালোবাসা প্রমাণ করে। মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করে, তারা পরিবর্তন চায়, গণতন্ত্র চায়।’

দলটির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সরকারের নানামুখী আক্রমণ, বাধার পরও প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর সমাবেশই (শনিবার) আগামী দিনে বিএনপির কর্মসূচি নির্ধারণে সাহায্য করবে। এই সমাবেশ গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠায় মাইলফলক হয়ে থাকবে।’

প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর সমাবেশের কর্মসূচির পর বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল প্রশাসনের অনুমতি মিলে কিনা, তা নিয়ে। যদিও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সমাবেশের অনুমতি দেয়। বিগত দিনে অনেকবার অনুমতি না দেওয়া, শেষ মুহূর্তে অনুমতি—এসব বিষয় থাকলেও ৪০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর সমাবেশটি ছিল প্রায় বাধাহীন।

যদিও সমাবেশের পর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, ‘সরকার জুলুমের সুদীর্ঘ বাহু বিধৃত করে বিএনপির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর কর্মসূচি বানচাল করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে লেলিয়ে দিয়েছে।’

শনিবার সমাবেশেও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস জানান, ‘সমাবেশের আগে শনিবার দিবাগত রাতে ঢাকায় বহু নেতাকর্মীর বাসায়-বাসায় হানা দিয়েছে।’

বাধার অভিযোগের পাশাপাশি বিএনপির কেউ-কেউ অবশ্যই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রশংসাও করেছেন।

নিন্দা-প্রশংসা থাকলেও সাধারণ কর্মী ও বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতারা বলছেন, শনিবার সমাবেশের মধ্য দিয়ে নতুনভাবে রাজপথে আন্দোলনে নামার প্রাথমিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের একজন প্রভাবশালী কর্মকর্তা বলছেন, ‘এই সমাবেশে একটা জিনিসই প্রমাণিত হয়েছে—দলে ঐক্যবদ্ধ আছে। দল সুসংগঠিত আছে। এটাই হচ্ছে বাংলাদেশি জাতীয়বাদের জায়গা। এর বিকল্প নেই।লাখ-লাখ মানুষের উপস্থিতি তো আন্দোলনের জন্য হয়নি, এটা হয়েছে দলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে। এত কিছুর পরও বিএনপি যে সুসংগঠিত, তা প্রমাণিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর সমাবেশ তো প্রতিবাদ কর্মসূচি ছিল না।’

শনিবার সমাবেশের মঞ্চেও ফুরফুরে ছিলেন বিএনপি নেতারা। প্রায় সবার বক্তব্যেই কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তাকে ছাড়া নির্বাচনের অংশ না নেওয়ার বিষয়টি উঠে আসে। পুরো সমাবেশে ছাত্রদলের কিছু নেতাকর্মীর বিশৃঙ্খলা ছাড়া বড় ধরনের কোনও ত্রুটি দেখা যায়নি। প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর সমাবেশ হলেও নেতাকর্মীদের আচরণ, স্লোগান, ফেস্টুন, ব্যানারে ছিল খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি সংবলিত0।

ছাত্রদলের সহ-সভাপতি এজমল হোসেন পাইলট বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জনমত, জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে এখনও বিএনপি দেশের অদ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। দেশনেত্রীর মুক্তির আকাঙ্ক্ষার দিকটা উপস্থিত বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে লক্ষ করা গেছে। বলা যায়, খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতি সবার মধ্যে শূন্যতার জন্ম দিয়েছে।’

উৎসঃ   বাংলা ট্রিবিউন

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin