ফখরুলের প্রতি সিনিয়র নেতাদের অনাস্থা

বিএনপি যখন নতুন করে আন্দোলন শুরু করার কথা ভাবছে এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া আর কোনো নির্বাচনে যাবে না বলে ঘোষণা দিচ্ছে ঠিক সেই সময় বিএনপিতেই গৃহদাহ তীব্র আকার ধারণ করেছে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছেন দলের একগুচ্ছ সিনিয়র নেতারা। তারা বলেছেন যে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নির্দেশনায় তারা কাজ করতে আগ্রহী নয়।

এই অভিমত তারা লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়াকে ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন। তারেক জিয়া তাদেরকে শান্ত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন বলেও একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন এবং আজ বা আগামীকাল রাতে তিনি দলের স্থায়ী কমিটির সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠকে মিলিত হবেন বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, ২০১৮ সালের নির্বাচন থেকেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে নিয়ে দলের ভিতর টানাপোড়েন চলছিল। এ সময় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিজেই দলের নেতৃত্ব থেকে সরে যাওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছিলেন।

কিন্তু নান বাস্তবতায় শেষ পর্যন্ত দলের ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে মহাসচিব এর দায়িত্বে রাখা হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে নানা ইস্যুতে দলের সিনিয়র নেতাদের সাথে দলের মহাসচিব এর বিরোধ প্রকাশ্যে রূপ ধারণ করেছে।

বিশেষ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে আন্দোলন হলে সেই আন্দোলনের ফসল সরকারের ঘরে যাবে কিনা এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে সন্দেহ, অবিশ্বাস প্রবল আকার ধারণ করেছে। 

বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, একদিকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকার বিরোধী তীব্র আন্দোলনের ঘোষণা দিচ্ছেন, অন্যদিকে গোপনে তিনি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী এবং নেতাদের সাথে বৈঠক করছেন। এইরকম দ্বৈত আচরণ কখনোই একটি রাজনৈতিক দলের আন্দোলনের পক্ষে ইতিবাচক নয় বলেই বিএনপি নেতারা মনে করেন।

বিএনপির মধ্যে যারা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য অবস্থান নিয়েছেন বলে জানা গেছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন দলের অন্যতম সিনিয়র নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এবং ভাইস চেয়ারম্যান মেজর অবসরপ্রাপ্ত হাফিজউদ্দিন।

এছাড়াও বিএনপির আরেক নেতা সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও মির্জা ফখরুল ইসলাম বিরোধী বলে বিএনপির একাধিক নেতা জানিয়েছেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ হলো যে, তিনি গোপনে সরকারের সঙ্গে আঁতাত করেন এবং সরকারকে বিভিন্ন রকম সুযোগ দেন, দলের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরকারের কাছে সরবরাহ করেন।

বিএনপির নেতারা বলছেন যে, বিএনপি যদি একদফা আন্দোলনে যেতে চায় তাহলে এখনই আমাদেরকে আন্দোলনের কর্মসূচি দিতে হবে, শুধু প্রেসক্লাবে বা বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বক্তৃতা দিলে হবেনা।

কিন্তু দলের মহাসচিব এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো কর্মসূচি প্রণয়ন করতে পারেননি। এমনকি বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেছেন যে, বিএনপি গত মাসে যে দুই দফা বৈঠক করলো সেই বৈঠকের ফলাফল এবং সুপারিশগুলো এখন পর্যন্ত সুপারিশ আকারে প্রকাশ করা হয়নি এবং সেই সমস্ত বৈঠকের আলোকে কোনো কর্মসূচি প্রণয়ন করা হয়নি।

বিএনপির একজন নেতা বলেছেন, যদি এ সমস্ত বৈঠকের সুপারিশ গুলো গ্রহণ নাই করা হবে তবে বৈঠক ডাকার প্রয়োজনীয় কি। গত মাসে বিএনপি প্রথমে কেন্দ্রীয়, বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সাথে বৈঠক করেন।

সেই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় তিন দিনব্যাপী। দ্বিতীয় দফায় দুইদিন ব্যাপী বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে বৈঠক করেন। এইসব বৈঠকগুলোতে নানারকম সুপারিশ এসেছিল, এই সুপারিশের আলোকে আন্দোলনের কর্মসূচি প্রণয়ন করা হবে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছিল।

কিন্তু বেশ কিছু দিন পার হয়ে গেলও এখন পর্যন্ত ওই ধরনের সুপারিশগুলো নিয়ে বিএনপির কোনো কাজ করেনি। যদিও বিএনপি মহাসচিবের ঘনিষ্ঠরা বলছেন যে ৯৬ ঘণ্টা ব্যাপী বৈঠক হয়েছে, সেই বৈঠকের যে বক্তব্যগুলো  বিচার-বিশ্লেষণ করে সুপারিশ গুলো প্রণয়নের কাজ চলছে।

কিন্তু বিএনপি নেতারা বলছেন যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংগঠনকে শেষ করে ফেলেছেন। কারণে শুধু কথা দিয়ে কোনো কর্মসূচি না নিয়ে সংগঠন পরিচালনা করা অসম্ভব। আর এই কর্মসূচি পালনের জন্য একজন যোগ্য মহাসচিব দরকার।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেছেন যে একদিকে আমরা আন্দোলন করছি সরকার পতনের, অন্যদিকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য দেন দরবার করছেন। এই দ্বিমুখী তৎপরতা বন্ধ না হলে কোনভাবেই ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব নয়।

তবে বিএনপির কোন কোন নেতা মনে করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একজন পুতুল মাত্র। লন্ডন থেকে তিনি যেই ধরণের নির্দেশনা পাচ্ছেন সেই নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছেন, এখানে তার করনীয় কিছুই নেই, শুধু শুধু মির্জা ফখরুল ইসলামের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে কোন লাভ নেই।

সূত্র: বাংলা ইনসাইডার

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin