একমাস আগে বিএনপি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে তারা আস্তে আস্তে রাজপথে আন্দোলনে নামবে। ধাপে ধাপে সেই আন্দোলনকে সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ দেওয়ার পরিকল্পনাই ছিল। সেই সঙ্গে তারা বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়েও আন্দোলন শুরু করবে। সেই লক্ষ্যেই বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কিছু কর্মসূচিও গ্রহণ করা হয়েছিল। এরপর থেকেই বিএনপি রাজপথে টুকটাক কর্মসূচি শুরু করেছিল। যদিও এসব কর্মসূচি জনগণের মধ্যে তেমন সাড়া ফেলতে পারেনি। তবে বিএনপির নেতাকর্মীরা এই কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে কিছু একটা কাজ পাচ্ছিলো। তারা নিজেরা উজ্জীবিত হচ্ছিলো।
কিন্তু আওয়ামী লীগ যখন সম্প্রতি শুদ্ধি অভিযান শুরু করে, তখন বিএনপি নেতাকর্মীরা অনেকটাই চাঙা হতে থাকে। বিএনপির কর্মসূচিগুলোতে লোকসমাগম বাড়ে। কিন্তু এরকম কর্মসূচির মাঝপথেই হঠাৎ করে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সিঙ্গাপুরে পাড়ি জমান। তিনি তার ঘনিষ্ট দুই একজনকে ছাড়া কাউকেই সিঙ্গাপুর যাওয়ার বিষয়টি বলেননি।
সিঙ্গাপুরে তিনি চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন বলে তার ঘনিষ্ট কয়েকজনকে জানিয়েছিলেন। পরবর্তীতে বিএনপি নেতাদের কাছে এরকম তথ্য এসেছে যে তার সিঙ্গাপুরে যাওয়ার যাবতীয় খরচ সরকার বহন করছে, সেখানে তার চিকিৎসার ব্যয়ভার প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে ব্যয় করা হচ্ছে। সিঙ্গাপুর দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা মির্জা ফখরুলের চিকিৎসার দেখভাল করছেন। এই খবর ঢাকায় আসার পরপরই বিএনপির মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিএনপির মধ্যে নানারকম গুঞ্জন ছিল। বিশেষ করে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে হঠাৎ করে সংলাপে যাওয়া এবং খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রসঙ্গ মানা ছাড়াই নির্বাচনে যাওয়া- এই সিদ্ধান্তগুলো মির্জা ফখরুলকে বিএনপিতে একজন অজনপ্রিয় ব্যক্তিতে পরিণত করে তুলেছিল। যদিও অনেকেই মনে করেন যে তারেক জিয়ার নির্দেশেই তিনি সব করেছেন। কিন্তু বিএনপির অনেক নেতাই সেটা বিশ্বাস করেন না। বরং তারা মনে করেন যে তারেক জিয়াকে মির্জা ফখরুল ইসলাম প্রভাবিত করেছেন।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির অন্তত তিনজন নেতা মির্জা ফখরুলকে সরকারের এজেন্ট মনে করেন। তারা মনে করেন যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের একটি চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে, মির্জা ফখরুল সরকারকে খুশি করার জন্যই সবকিছু করেন। এই বিষয়টি আরও পরিস্কার হয়ে যায় যখন বিএনপির সংসদ সদস্যরা শপথ গ্রহণ করেন।
৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর বিএনপি ঘোষণা করেছিল যে তারা এই সংসদে যাবে না। এই নির্বাচন কমিশন এবং দলীয় সরকারের অধীনে তারা কোনো নির্বাচন করবেন না।
কিন্তু কিছুদিন পরেই দেখা গেলো মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভোল পাল্টে ফেললেন এবং দলের স্থায়ী কমিটিকে পুরোপুরি অন্ধকারে রেখে তিনি এমপিদেরকে শপথ গ্রহণের জন্য পাঠালেন। এ নিয়ে বিতর্ক আরও তুঙ্গে ওঠে যখন মির্জা ফখরুল যখন নিজেই তার সদস্যপদ বহাল রাখেননি এবং শপথ নেননি।
এসব নিয়ে বিএনপিতে তীব্র সমালোচনা হয়েছিল। কিন্তু বিএনপিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিকল্প নেই- এই বিবেচনা করেই তাকে দলের মহাসচিব পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়নি। তবে এখন সরকারের সঙ্গে তার সম্পর্কের বিষয়টি গোপন নেই। বরং এটা প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে বলে বিএনপির একাধিক নেতা মনে করছেন। তারা মনে করছেন, এখনই যদি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে সরিয়ে দেওয়া না হয় বা তাকে যদি এখনই জবাবদিহিতার আওতায় আনা না হয় তাহলে বিএনপির পক্ষে কোনো আন্দোলন গড়ে তোলা যেমন অসম্ভব, তেমনি অসম্ভব খালেদা জিয়ার মুক্তিও।
সূত্র: বাংলা ইনসাইডার