hindu_mohajott

প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে: হিন্দু মহাজোট

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে পদত্যাগে সরকার বাধ্য করেছে বলে অভিযোগ করেছে জাতীয় হিন্দু মহাজোট।

সংগঠনের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক বলেন, বিচারবিভাগকে স্বাধীন বলা হলেও প্রধান বিচারপতিকে যেভাবে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে, তা ইতিহাসে নজিরবিহীন।

সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক এ অভিযোগ করেন।

হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার চিত্র তুলে ধরে লিখিত বক্তব্যে গোবিন্দ্র চন্দ্র প্রামাণিক বলেন, প্রতিটি ঘটনার সঙ্গে সরকারি দলের নেতাকর্মীদের যুক্ত থাকার প্রমাণ থাকলেও সরকার বিরোধীপক্ষের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দায় এড়িয়ে যাচ্ছে। ফলে অপরাধীরা রেহাই পেয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, নির্যাতিত হিন্দুদের রক্ষায় সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর ভূমিকাও নেওয়া হয়নি।

সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রামের হাটহাজারী, কপবাজারের রামু, ব্রাক্ষ্ণণবাড়িয়ার নাসিরনগর ও রংপুরের ঠাকুরপাড়ায় হামলাকারী ও অগ্নিসংযোগকারীদের মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের দাবি জানানো হয়। এছাড়া হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে জাতীয় সংসদে ৬০টি সংরক্ষিত আসন প্রতিষ্ঠা ও পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থার দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. দূর্গা দাস ভট্টাচার্য, উপদেষ্টা ঝুমুর গাঙ্গুলী, সহ-সভাপতি মানিক চন্দ্র সরকার, ডা. মৃত্যুঞ্জয় রায়, প্রধান সমন্বয়কারী বিজয় ভট্টাচার্য প্রমুখ।

শীর্ষ নিউজ

খালেদা জিয়ার বক্তব্যের যেসব ব্যাখ্যা করছেন নেতারা

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির সমাবেশে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দীর্ঘ বক্তব্যকে আগামী নির্বাচনের জন্য নেতাকর্মীদের প্রস্তুত করার ইঙ্গিত হিসেবে দেখার কথা জনিয়েছেন জেলা পর্যায়ের একাধিক নেতা। তারা বলছেন, ক্ষমতায় গেলে কী কী করা হবে, সে বিষয়ে অঙ্গীকার করার অর্থ এই একটাই দাঁড়ায়।

বরিবার দীর্ঘ বক্তব্যে সরকারের বিরুদ্ধে গতানুগতিক কিছু অভিযোগের পাশাপাশি আগামী জাতীয় নির্বাচন, ক্ষমতায় যেতে পারলে কী করা হবে সে বিষয়ে অনেক কথা তুলে ধরা হয়েছে। পরদিন সংবাদপত্রে এসব বক্তব্য প্রকাশের পর গত সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী দলটির নেতা-কর্মীরা এসব বক্তব্যের চুলচেরা ব্যাখ্যা করছেন। খালেদা জিয়া কী বার্তা দিলেন, তা বোঝার চেষ্টা করছেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গেও কথা বলেছেন স্থানীয় পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা।

বরগুনার বেতাগী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসাইন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা বুঝতে পেরেছি গত নির্বাচনের মতো নির্বাচন আগামীতে নির্বাচন হবে না। আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে সেই ম্যাসেজও আমরা পেয়েছি। চেয়ারপারসনের বক্তব্যে আমরা যে তেজ দেখেছি তাতে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আত্মপ্রত্যায়ী হয়েছি। বাধাবিঘ্ন উপেক্ষা করে সফল সমাবেশের মধ্য দিয়ে আত্মবিশ্বাস জন্মেছে যে আগামীতে সরকারবিরোধী আন্দোলনে সফল হবো।’

গত বছরের ১ মে শ্রমিক সমাবেশে বক্তৃতার পর রবিবারই প্রথম সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করলেন খালেদা জিয়া। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের ঘটনাবলীকে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ হিসেবে পালন করা বিএনপি এই দিবসের স্মরণে এই জনসভা করে।

এই বক্তব্যে খালেদা জিয়ার বক্তব্যে আগামী জাতীয় নির্বাচনকেন্দ্রীক নানা দাবির কথা উঠে এসেছে। গত এক বছর ধরে এই সহায়ক সরকারের দাবি জানিয়ে আসা বিএনপির নেতারা সম্প্রতি তত্ত্বাবধায়কের দাবি তুলে ধরলেও সমাবেশে খালেদা জিয়া এ বিষয়ে সরাসরি কিছু বলেননি।

বরং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন, ভোট গ্রহণে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম ব্যবহার না করার দাবি করেছেন। বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের চ্যালেঞ্জ নিতে। অবশ্য শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়-এমন কথাও বলেছেন বিএনপি নেত্রী।

এর পাশাপাশি ক্ষমতায় গেলে কী কী করা হবে তার একটি আগাম ঘোষণাও দেন বিএনপি নেত্রী। এর মধ্যে রয়েছে, এক বছরের বেশি বেকার থাকলে বেকার ভাতার ব্যবস্থা, সবার জন্য বিনামুল্যে চিকিৎসা, পর্যায়ক্রমে স্বাস্থ্য বিমা চালু, কমমূল্যে কৃষি পণ্য দেয়ার পাশাপাশি বেশি মূল্যে কৃষকের কাছ থেকে পণ্য কেনা, বাজারমূল্যের সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ানো প্রভৃতি।

আওয়ামী লীগকে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমরা আপনাদের মতো ধরবো, মারবো না। আমরা আপনাদের শুদ্ধ করবো। আপনারা যে এই হত্যা, গুম, নির্যাতন করছেন এটা ঠিক না। আমরা সত্যিকারের মানুষ বানাবো আপনাদের।’

এই সমাবেশে যোগ দেয়া বিএনপির জেলা পর্যায়ের ও কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা বলেছেন, ‘বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাব না’- সরাসরি এই ধরনের ঘোষণা না দিয়ে খালেদা জিয়া বেশ কিছু দাবি তুলে ধরেছেন। অর্থাৎ আগের অবস্থান থেকে তিনি কিছুটা নমনীয় হয়েছেন। আবার দেশবাসীর জন্যও কিছু অঙ্গীকার করেছেন তিনি। বিএনপির প্রতি যেন তারা সমর্থন জানায়, সে জন্যই নানা বিষয় তুলে ধরেছেন। এর অর্থ গত নির্বাচন বর্জন করলেও আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে দলতে প্রস্তুত করছেন তিনি।

নির্বাচনকালীর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি পূরণ না হওয়ায় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। কিন্তু সরকারের পতনের এক বছর পূর্তিতে সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনে নেমে ব্যর্থ হওয়ার পর থেকে এই দাবি আর জানাননি নেতারা। এক বছর আগে থেকে তারা নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবি তুলে ধরছিলেন। যদিও এই সরকারের রূপরেখা চূড়ান্ত করতে না পারা দলটি এই দাবি আর তুলছে না।

এরই মধ্যে নির্বাচনী হাওয়া শুরু হয়ে গেছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনী এলাকায় তৎপরতা বাড়িয়েছেন। এর মধ্যে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরাও রয়েছেন। এই অবস্থায় খালেদা জিয়ার এই বক্তব্যে এলাকায় বিএনপির পক্ষে প্রচার আরও জোরদার করার কথাও জানাচ্ছেন বিএনপির তৃণমূলের নেতারা।

পিরোজপুর জেলা বিএনপির সভাপতি আলমগীর হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সরকার পতনের লক্ষ্যে কঠোর কোনো কর্মসূচি না দিলেও সরকারকে ক্ষমতা ছাড়তে আলটিমেটাম দেবেন এমন প্রত্যাশা অনেকের ছিল। কিন্তু তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন আমরা মনে এটা রাজনৈতিক পরিকপক্কতার কারণেই দিয়েছেন। কারণ নিশ্চয়ই তিনি সবকিছু বিবেচনা করে, হিসেব নিকেশ করে দিয়েছেন। তাই তিনি যা বলেছেন যথেষ্ট।’

আলমগীর বলেন, ‘চেয়ারপারসন আগামী দিনে ইতিবাচক রাজনীতির যে কথা বলছেন এটা সামগ্রিক রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে বলে আমরা মনে করি। এ ছাড়া তিনি ঐক্যের কথা বলেছেন। এটা তৃণমূলে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে ভুমিকা রাখবে।’

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুণ রায় ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘শুধু দল নয়, সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ, সামাজিক নানা সমস্যাকে প্রধান্য দিয়েছেন তার (খালেদা জিয়া) বক্তব্যে। সর্বোপরি দেশে যে সুশাসনের অভাব বিরাজ করছে, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রয়োজন সে বিষয় কথা বলেছেন। কিন্তু তিনি সরকারের প্রতি কোনো ধরনের আক্রোশের কথা বলেননি। একই সঙ্গে সরকার পতনের আন্দোলনের জন্য নেতাকর্মীরা প্রস্তুত থাকলেও তিনি সেদিকে যাননি।’

তৃণমূলের নেতাদের নানা ব্যাখ্যার বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘চেয়ারপারসনের বক্তব্যে মূলত আমরা দুটি বার্তা পেয়েছি। প্রথমত. শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন নয়। এর মানে এই নয় যে নির্বাচন বর্জন। পাশাপাশি নির্বাচনে সেনা মোতায়েন ও নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা যাবে না। বিষয়গুলো আগে বললেও আবারো স্পষ্ট করে জানিয়ে দেয়া হলো। দ্বিতীয়ত, তিনি ইতিবাচক রাজনীতির ধারা প্রবর্তনের কথা বলে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন। এর ফলে ধৈর্য ধারণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ রক্ষার জন্য নেতাকর্মীসহ সবার কাছে বার্তা দেয়া হয়েছে। এটা আগামী দিনের রাজনীতির জন্য অবশ্যই ইতিবাচক বিষয়।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘চেয়ারপারসন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের যে দাবি করেছেন এটা জনগণের আকাঙ্ক্ষার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ এবং রাজনৈতিক দাবি। তিনি স্পষ্ট করেই বলেছেন বিএনপি প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না, করবেও না। এটা আগামী দিনের রাজনীতির জন্য অবশ্যই ইতিবাচক দিক।’

এই নেতা বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ সমাবেশের মধ্য দিয়ে সারাদেশের নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়েছে। আগামী দিনে নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে বলে মনে করি।’

সূত্র: ঢাকাটাইমস

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin