আইন মন্ত্রণালয় বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের মেয়াদ আরও ছয় মাস বৃদ্ধি করার সুপারিশ করেছে। গত ২৫ মার্চ সরকারের বিশেষ বিবেচনায় ৬ মাসের জামিন পাওয়া বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর।
বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর ছোটভাই শামীম এস্কান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধি এবং তাকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্যে একটি জামিনের আবেদন জমা দিয়েছিলেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেই আবেদনটি পাঠিয়েছিল আইন মন্ত্রণালয়ে এবং আইন মন্ত্রণালয় আইনগত মতামতে তাঁর জামিন একই শর্তে আরও ছয় মাস বৃদ্ধি করা যায় বলে সুপারিশ করেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে যে, এই আবেদনটি এখন প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্যে পাঠানো হবে এবং প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন সাপেক্ষে এটাকে সরকারি আদেশ হিসেবে জারি করা হবে। এর ফলে বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের মেয়াদ আরও ৬ মাস, অর্থাৎ আগামী ২৪ মার্চ পর্যন্ত বৃদ্ধি হবে।
কিন্তু বেগম জিয়ার পরিবার সূত্রে জানা গেছে যে, আইন বিভাগ যে সুপারিশ করেছে সেই সুপারিশে তারা সন্তুষ্ট নয়। তারা বলছেন যে, ‘আমরা আশা করেছিলাম যে বেগম খালেদা জিয়াকে স্থায়ী জামিন দিয়ে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে। কিন্তু বিদেশ ভ্রমণের অনুমতি না দেওয়ায় আমরা হতাশ হয়েছি এবং আমরা এই ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর মহানুভবতার অপেক্ষা করছি।’
উল্লেখ্য যে, দুটি দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে বেগম খালেদা জিয়া ১৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছে। ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হওয়ার পর তাকে কারাগারে নেওয়া হয়েছিল এবং ২৫ মাস কারাভোগের পর বিশেষ বিবেচনায় তিনি জামিনে আছেন। গত ২৫ মার্চ যখন বেগম খালেদা জিয়াকে জামিন দেওয়া হয়েছিল সেই জামিনের আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের একাধিক সদস্য।
তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুকম্পা ভিক্ষা করেছিলেন এবং মানবিক কারণে বেগম খালেদা জিয়াকে শেখ হাসিনা ৬ মাসের জামিন দিয়েছিলেন সাজা স্থগিত করে। এই সময়ে বেগম খালেদা জিয়া জামিনের শর্ত মোটামুটি ভালোই মেনে চলেছেন বলে সরকারের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন। বিশেষ করে তিনি তার বাসা থেকে বের হননি, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেননি, কোন বক্তৃতা-বিবৃতি দেননি। যেহেতু তিনি জামিনের শর্ত মেনেছেন, এজন্যে আইন মন্ত্রণালয় মনে করছেন যে, শর্ত ভঙ্গ না করার প্রেক্ষিতে তাকে আরও ৬ মাসের জামিন দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা বলছেন যে, গত ৬ মাসে বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা তেমন হয়নি। কারণ তিনি তাঁর অসুস্থতার চিকিৎসা করান মূলত লন্ডন আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। কিন্তু জামিন পাওয়ার পর করোনার প্রকোপের কারণে বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার সুযোগ হয়নি, দেশেই চিকিৎসা নেওয়া হয়েছে এবং মানসিক চিকিৎসার উন্নতি ছাড়া তাঁর শারীরিক অবস্থার কোন উন্নতি হয়নি বলেও বেগম জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। আর এইজন্যেই তারা বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে যেতে চাচ্ছেন।
কিন্তু আইন মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র বলছে, বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে যে আবেদন করা হয়েছে তাতে তার বিদেশ ভ্রমণের কথা উল্লেখ নেই। আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন যে, বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে যে আবেদন করা হয়েছে সেই আবেদনে কোথাও তাকে বিদেশে নেওয়ার আগ্রহের কথা উল্লেখ করা হয়নি। তবে বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা বলছেন তারা এই বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করবেন এবং প্রধানমন্ত্রীর অনুকম্পা ভিক্ষা করবেন।
এই ব্যাপারে খালেদা জিয়াও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে পারেন বলে বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের একজন সদস্য ইঙ্গিত করেছেন। তবে বেগম খালেদা জিয়া কথা বলুক বা না বলুক, তাঁর বিদেশ যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা যে প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হবেন এবং প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন তা মোটামুটি নিশ্চিত।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, আগামী রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রেরিত হবে অনুমোদনের জন্যে, এই সময়ের মধ্যে বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন এবং প্রধানমন্ত্রীর অনুকম্পা ভিক্ষা করছেন।
শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে বিদেশ যেতে দেবেন কিনা সেটা যেমন দেখার বিষয়, পাশাপাশি এই ধরণের দণ্ডিত অপরাধীর জামিন স্থগিত করে তাকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার আইনগত বৈধতা আছে কিনা সেটাও একটি বিবেচনার বিষয় বলে মনে করছেন সরকার সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র: বাংলা ইনসাইডার