প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পাশেই ‘জঙ্গি আস্তানা’, বাড়ির মালিকসহ কয়েকজন হেফাজতে

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ১০০ গজ দূরে এবং পুরাতন এমপি হোস্টেলের একেবারে কাছে জনবসতিপূর্ণ এলাকায় এবার ‘জঙ্গি আস্তানা’র সন্ধান পেল র‌্যাব। এমনকি সেখানে অভিযানে তিন নিহত হয়েছে বলেও খবর এসেছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেয়া হয়েছে বাড়ির মালিক ও দারোয়ানসহ বেশ কয়েকজনকে।

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দুইটা থেকে ঢাকার তেজকুনি ও নাখালপাড়ার সীমান্তে ছাপড়া মসজিদ সংলগ্ন ১৩/১ রুবি ভিলা নামে ৬তলা ভবনটি ঘিরে রাখার পর শুক্রবার ভোর রাত ২টা থেকে পঞ্চম তলায় অভিযান শুরু করে র‌্যাব। ভবনটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ১০০ মিটারের কিছুটা বেশি দূরত্বে এবং সাংসদ সদস্যদের সরকারি বাসভবন বা ন্যাম ভবনের কাছাকাছি অবস্থিত।

স্থানীয়রা জানান, বাড়িটি ১৯৯০ সালের দিকে তৈরি। সাব্বির নামের এক ব্যক্তি বাড়ির মালিক। চারপাশে বড় বারান্দা রয়েছে। বাড়ির ছাদে মোবাইল অপারেটরের একাধিক টাওয়ার আছে। এই বাসার পাঁচতলাতেই র‌্যাব সন্ধান পেয়েছে ‘জঙ্গি আস্তানা’র।

পশ্চিমদিকে বায়তুল আতীক জামে মসজিদ কমপ্লেক্স লোকমুখে ছাপড়া মসজিদ নামে পরিচিত। এখান থেকে মাত্র ৫০ গজ দূরে রুবি বিলার অবস্থান। বাড়ির উত্তরদিকে ন্যাম ভবন। ন্যাম ভবন থেকে দক্ষিণ পাশে তিনটি বাড়ির পরই এটি।

এ ঘটনায় এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ভোরে জঙ্গিবিরোধী অভিযান শুরু হলে হঠাৎ গুলি আর গ্রেনেডের শব্দে কেঁপে ওঠে গোটা এলাকা। অনেককে চিৎকার-চেঁচামেচি করতেও শোনা যায়।

স্থানীয় বাসিন্দা রুহুল অামিন একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ওই বাসায় কিছু ব্যাচেলর ভাড়া থাকে। তবে অামাদের কাছে কখনওই জঙ্গি বলে মনে হয়নি।

নূরুজ্জামান মন্টু নামের অপর এক বাসিন্দা জানান, রাতের দিকে গোলাগুলির শব্দ পান। একপর্যায়ে মাইকিং করা হয়।

ছেলের ফোন পেয়ে গাজীপুর থেকে আসা কামরান হোসেন জানান, রুবি ভিলার ছয়তলায় তাঁর ছেলে পারভেজ হোসেন থাকেন। ছয়তলায় মেস করে বেশ কয়েকজন ছেলে থাকে। ভোররাত ৪টার দিকে পারভেজ ফোন করেন বাবাকে। বলেন, ‘গোলাগুলি হচ্ছে। কিছু বোঝা যাচ্ছে না। আমি কী করব?’

পারভেজ হোসেন ঢাকার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র। বাসার ছয়তলায় কয়েকজন যুবককে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। তাদেরই মধ্যে হয়তো পারভেজ রয়েছেন। নিচে ঘুরছেন উদ্বিগ্ন বাবা।

র‌্যাবের দাবি, আগে থেকেই তথ্য ছিল নাখালপাড়ার কোনো একটি বাড়িতে বড় ধরনের নাশকতা সৃষ্টির জন্য দীর্ঘদিন ধরে বিস্ফোরক মজুদ করছে জঙ্গিরা।

এদিকে, জিঙ্গাসাবাদের জন্য বাড়ির মালিক সাব্বির (৫৫) ও দারোয়ানসহ কয়েকজনকে র‌্যাব হেফাজতে নেয়া হয়েছে। হয়তো নিহতদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তাদের কাছ থেকে জানা যাবে।

র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান ‘জঙ্গি আস্তানায়’ তিনজন নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে র‍্যাব সূত্রে জানা গেছে, ছয়তলা বাসার পঞ্চম তলায় মেস বাসা ছিল এটি। সেখানে ৩ জন মারা যেতে পারে।

র‌্যাব সূত্র জানিয়েছে, বাড়িটির ভেতরে বিপুল পরিমান বিস্ফোরণ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। ঘটনাস্থলে র‌্যাবের বোম ডিস্পোজাল টিমের সদস্যরা কাজ করছেন। ওই বাড়ির আশপাশ থেকে সাধারণ বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।

র‌্যাবের মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ খান বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ৬ তলা বাড়িটির পঞ্চম তলায় কয়েকজন জঙ্গি সদস্য রয়েছেন বলে তারা জানতে পারেন। এই তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালাতে গেলে বাড়ির ভিতর থেকে গুলিবর্ষন ও গ্রেনেড ছুড়ে মারা হয়। র‌্যাব সদস্যরা পাল্টাগুলি ছুঁড়লে হতাহতের ঘটনা ঘটে। এতে দুই র‌্যাব সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানান তিনি। ভিতরে কয়কেজন জঙ্গির লাশ রয়েছে। এছাড়াও প্রচুর বিস্ফোরক ছড়ানো ছিটানো রয়েছে।

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin