hasina_jante_chailen

প্রধানমন্ত্রীকে আইনি নোটিস পাঠাতে পারে বিএনপি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিএনপি আইনি ব্যবস্থার ‍হুমকি দেয়ার ১১ দিন পেরিয়ে গেলেও দলটি কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ নেই। এমনকি এ বিষয়ে দলটির নেতারা কিছু বলছেনও না। তবে বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী।

ওই আইনজীবী নেতা জানিয়েছেন, কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া যায়, কীভাবে আগান যায়, সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।

তবে সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী যে অভিযোগ তুলেছেন, তার জন্য তার বিরুদ্ধে মামলা টিকবে না। তিনি বলেছেন, একটি মিডিয়ার সংবাদের ভিত্তিতে কথা বললে মামলা করতে হয় ওই মিডিয়ার বিরুদ্ধে, যিনি বলেছেন তার বিরুদ্ধে নয়।

আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা ঢাকাটাইমসকে বলেছে, বিএনপি আদৌ এ ধরনের কিছু করবে বলে তারা বিশ্বাস করেন না। ওই নেতা বলেন, ‘বিএনপি আদালতে গেলে তাদের জন্যই বিষয়টি সুখকর হবে না। কারণ, তখন আদালত বিষয়টি নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিতে পারে। আর এতে বিএনপি আরও বেকায়দায় পড়বে।’

গত ৭ ডিসেম্বর কম্বোডিয়া সফর নিয়ে করা সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থপাচার এবং সৌদি আরবে বিপুল সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তোলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে আওয়ামী লীগের নেতারাও ক্রমাগত এ নিয়ে কথা বলে যাচ্ছেন।

প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের পরদিন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধানমন্ত্রীকে বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান। নইলে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কি বিএনপি আসলেই আইনি ব্যবস্থা নেবে? জানতে চাইলে দলের চাইলে যুগ্ম মহাসচিব ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক মাহবুব উদ্দীন খোকন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আইনগত ব্যবস্থার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি বিষয়টি জানতে পারবেন।’

কী ধরনের আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা ভাবছেন, এমন প্রশ্নে খোকন বলন, ‘সরকারে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা করতে হলে ৩০ দিন আগে তাকে নোটিস দিতে হবে। এরপর তার বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষেত্রেও সেটা প্রযোজ্য। শুধুমাত্র দায়িত্ব পালনরত রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারী মামলার করা যায় না। আমরাও হয়ত সেভাবেই আগাব।’

জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে বিএনপি রংপুরের সিটি নির্বাচন এবং খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরা নিয়ে ব্যস্ত। অচিরেই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর সেটা যখন নেব, মিডিয়াকে জানিয়ে দেব।

কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার চিন্তা করছে বিএনপি-এমন প্রশ্নে দুদু বলেন, ‘আমরা মামলা করব।’

বিএনপির হুমকি গায়ে মাখেননি প্রধানমন্ত্রী

বিএনপির আইনি ব্যবস্থার হুমকি যে প্রধানমন্ত্রী গায়ে মাখেননি সেটি বিজয় দিবস এবং শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনায় ১৭ ডিসেম্বর আবারও খালেদা জিয়ার বিদেশের কথিত সম্পদের প্রসঙ্গ তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী।

৭ ডিসেম্বর তোলা প্রসঙ্গ প্রত্যাহার বা ক্ষমা চাইতে বিএনপির দাবি যে প্রধানমন্ত্রী পাত্তা দেননি, সেটি সেদিন তার বক্তব্যেই স্পষ্ট। তিনি বলেন, ‘এক সময় ভাঙা সুটকেস খেকে জাহাজ বেরিয়েছে কোকো-১, কোকো-২, ইন্ডাস্ট্রি বেরিয়েছে, এখন আবার দেখি শপিং মল বেরুচ্ছে, ফ্লাট বেরুচ্ছে, হাজার হাজার কোটি টাকা বেরুচ্ছে।’

বিএনপি প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দেয়ার পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দুই দফা বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন।

৯ ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে কাদের বলেন, ‘শেখ হাসিনা যা বলেছেন জেনেশুনে বলেছেন। তথ্য প্রমাণ আছে বলেই বলেছেন।’

১০ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আবার বলেন, ‘যখন দেশের প্রধানমন্ত্রীর মুখ দিয়ে যে কথা বের তা না জেনে, না শুনে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) অন্ধকারে ঢিল ছুড়েন না।’

সংবাদ সম্মেলনে মূলত খালেদা জিয়া এবং তার পরিবার নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো একটি ভিডিও নিয়ে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। একটি বিদেশি টেলিভিশনের সংবাদ হিসেবে ছড়ানো ভিডিওতে দাবি করা হয়েছে খালেদা জিয়া সৌদি আরবে আল আরাফাহ নামে একটি শপিং মল এবং একটি বহুতল বাণিজ্যিক ভবনের মালিক। তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর নামে কাতারে আরও একটি বাণিজ্যিক ভবন রয়েছে। খালেদার পরিবার ১২টি দেশে ১২ বিলিয়ন ডলার বা বাংলাদেশের মুদ্রায় প্রায় এক লাখ কোটি টাকার মালিক বলে ওই ভিডিওতে বলা হয়েছে। এতে দাবি করা হয়েছে, সৌদি আরবে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে খালেদা পরিবারের এই সম্পদ খুঁজে পাওয়া গেছে।

প্রধানমন্ত্রী অবশ্য গত সেপ্টেম্বরেও জাতীয় সংসদে সৌদি আরবে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরুর কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু সে সময় বিষয়টি নিয়ে তেমন আলোচনা হয়নি।

৭ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী আবার প্রসঙ্গটি তোলার পরদিন বিএনপির পক্ষ থেকে করা সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর তারা সৌদি আরবে এই বিষয়টি নিয়ে খোঁজ খবর নিয়েছেন। কিন্তু সেখানে জিয়া পরিবারের সম্পদ থাকার মতো কোনা তথ্য পাননি। এই সংবাদ সম্মেলনেই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী গণমাধ্যমে আসা সংবাদ নিয়ে কথা বলেছেন। এ বিষয়ে যদি আইনগত ব্যবস্থা নিতে হয় তাহলে ওই পত্রিকার বিরুদ্ধে নেবে। প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেবে?’।

ঢাকাটাইমস

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin