রাজধানীর নয়াপল্টনে চলছে বিএনপির ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশ। সভায় বক্তারা বলেন, খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। মুক্ত খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে নির্বাচনে যাবে বিএনপি।
শনিবার দুপুর ২টায় কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক এ সভা শুরু হয়। কিন্তু সভা শুরুর আগেই দলের নেতাকর্মীরা নয়াপল্টন ও আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেয়। সভা শুরু পর থেকেই বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। বক্তব্যে খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করেন।
সমাবেশে বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন,‘সারাদেশের আকাশে বাতাসে আপনাদের পতনের আওয়াজ উঠেছে। প্রতিটি গাছের পাতায় পাতায় আপনার পতনের আওয়াজ উঠেছে। আপনাদের পতন অবশ্যম্ভাবী। কিন্ত আপনি টের পাচ্ছেন না।’
রিজভী আরো বলেন, কিসের নির্বাচন? দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী খালেদা ছাড়া নির্বাচন হবে না। নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচন হবে না। তবে প্রধানমন্ত্রীর ভোটের দরকার নাই, দরকার ক্ষমতার। ক্ষমতায় থাকলে লুট করা যায়।’
নির্বাচন কমিশনারের উদ্দেশ্যে হুশিয়ারি করেন বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান ও কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান দুদু বলেন,‘জানুয়ারিতে খালেদা জিয়া এই দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিবেন, নির্বাচন কমিশনারকে বলতে চাই, আপনাদের কিসের ইভিএম-টিভিএম? বেশি বাড়াবাড়ি করলে ঠ্যাং ভেঙে দেবো।’
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘আজকের এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে সারারাত হাসিনা সরকার তার পুলিশ বাহিনীকে লেলিয়ে দিয়েছিল আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। আজকের এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে হাসিনা সরকারের উদ্দেশ্যে বলে যেতে চাই, ডিসেম্বর-জানুয়ারির মধ্যে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এই দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিবেন। ’
কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান দুদু বলেন,‘শেখ হাসিনাকে অনেক বার বলেছি, বলতে বলতে মুখে ফেনা উঠে গেছে, বেগম জিয়ার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। তার রুমটা একটু ভালো করেন। কিন্ত আপনি তা শোনেন নাই। বেগম জিয়া প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সেদিন কি আপনি এই দেশ থেকে পালিয়ে যেতে পারবেন? কথা খুব পরিষ্কার, ব্যাংক থেকে নিয়েছেন ৪ হাজার কোটি টাকা। সেই টাকা আপনাকে দিতে হবে। এটা বাংলাদেশের টাকা।’
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘তারেক রহমান কি অন্যায় করেছে? জিয়াউর রহমান আপনাকে দেশে আসার সুযোগ দিয়েছিলেন আর আপনি তার ছেলেকে দেশে আসতে দিচ্ছে না। কথা একটাই বাংলাদেশ জিয়ার দেশ, বাংলাদেশ খালেদা জিয়ার দেশ, বাংলাদেশ হচ্ছে তারেক রহমানের দেশ। এই দেশে থাকতে হলে আইনের আওতায় থাকতে হবে। মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমানের কথা মতো থাকতে হবে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন জিয়াউর রহমান, রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছে জিয়া ও তার বাহিনী। আপনার বাপের দেশ যা খুশি তাই করবেন? বেগম জিয়াকে ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। আমরা বেগম জিয়াকে নিয়েই নির্বাচনে যাবো।’
যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘এখন আমাদের আন্দোলন হচ্ছে সিইসি নুরুল হুদার বিরুদ্ধে। কারণ শেখ হাসিনা সরকার যা বলছে, যা করতে চাইছে হুদা কমিশন সেগুলো বাস্তবায়ন করছে। ১৯৯৬ সালের জনতার মঞ্চের নেতা নুরুল হুদার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। আর নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। তাঁর নেতৃত্বেই বিএনপি নির্বাচনে যাবে, দেশের গণতন্ত্র মুক্ত হবে।’
যুগ্ম মহাসচিব খাইরুল কবির খোকন বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে দেশে কোনো নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলতে চাই, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। না হলে দেশের জনগণ আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের প্রিয় নেত্রীকে মুক্ত করে আনবে।’
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন বলেন, ‘আজ মিথ্যা মামলায় কারাগারে আমাদের নেত্রী। আমরা সরকারকে বলতে চাই, অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। না হলে এ দেশে আর কোনো নির্বাচন হবে না।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিবুন নবী খান সোহেল বলেন, ‘আমরা ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করছি। অথচ আমাদের চেয়ারপারসন আমাদের মাঝে উপস্থিত নেই, উনি জেলখানায় আছেন। বিষয়টি আমাদের জন্য যন্ত্রণার, দুঃখ ও লজ্জাজনক। বিএনপির চেয়ারপারসন অসুস্থ, নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রতিটি দীর্ঘশ্বাসের পাওনা হিসাব নেয়ার সময় এসেছে। অবশ্যই হিসাব নেয়া হবে।’
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে সোহেল বলেন, ‘আমাদের নেত্রীকে জেলে রেখে অবৈধ প্রধানমন্ত্রী আপনি সেজেগুজে পারফিউম মেখে দেশে-বিদেশে ঘুরে বেড়াবেন? এইভাবে কি দেশ চলবে? এভাবে দেশ চলতে পারে না। আওয়াজ কি শুনতে পাচ্ছেন? শেখ হাসিনা- আপনার পতনের আওয়াজ কি শুনতে পাচ্ছেন?’
নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে সোহেল বলেন, ‘গ্রামগঞ্জে পাড়ায়-মহল্লায় সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে। কারণ, দেশকে পরিষ্কার করতে হবে। এই আওয়ামী লীগের যতো নির্যাতনকারী হেলমেটবাহিনী-চাপাতিবাহিনী আছে সব পরিষ্কার করতে হবে।’
এসময় পুলিশের উদ্দেশে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিবুন নবী খান সোহেল বলেন, ‘আপনাদের বেতন কিন্তু আওয়ামী লীগ দেয় না, দেশের জনগণ দেয়। তাই জনগণের পক্ষে কাজ করুন, আওয়ামী লীগের পক্ষে নয়। কিছু পুলিশের কার্যক্রম দেখে লজ্জা লাগে, এতো দল করার ইচ্ছা থাকে তাহলে পুলিশের পোশাক বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের কোর্ট পরিধান করুন, নইলে পরিস্থিতি কিন্তু ভালো না।’
মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিবে। আর সেই নির্বাচন হবে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে। তাঁকে কারাগরে রেখে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। আর কোনো প্রহসনের নির্বাচন দেশে হতে দেওয়া হবে না।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার বলেন, ‘আজ খালেদা জিয়া কারাগারে নয়, বাংলাদেশের গণতন্ত্র কারাগারে। তাঁকে কারাগারে আটকে রেখে বিএনপিকে বাইরে রেখে নির্বাচনের পাঁয়তারা করছে সরকার। কিন্তু আমরা সরকারকে বলতে চাই, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে তাঁর নেতৃত্বে নির্বাচনে যাব।’
ঢাকা মহানগর উত্তরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বাদরু বলেন, ‘আজ আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আমাদের জন্য আনন্দ নয়, বিষাদের। কারণ, আমাদের প্রিয় নেত্রী খালেদা জিয়া মিথ্যা মামলায় কারাগারে। আজ আমরা শপথ নিয়েছি, খালেদা জিয়াকে এই অবৈধ সরকারের কারাগার থেকে মুক্ত করার।’
যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নীরব বলেন, ‘খালেদা জিয়া এ দেশের মাটি ও মানুষের নেত্রী। অবৈধ সরকার অন্যয়ভাবে তাঁকে জেলে আটকে রেখেছে। আমরা তাঁকে কারাগারে রেখে আজ আমাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করছি।’
নীরব সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মী খালেদা জিয়াকে রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে কারাগার থেকে মুক্ত করে আনবে। তার নেতৃত্বে আন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারের পতন ঘটাব।’
স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু বলেন, ‘মিথ্যা মামলায় খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে কারাগারে আটকে রেখেছে এ অবৈধ সরকার। তারা চায়, খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে আবারও একটা পাতানো নির্বাচন করতে। কিন্তু এ দেশের জনগণ খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে কোনো নির্বাচন হতে দিবে না।’ তিনি বলেন, ‘সরকার যদি খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে বিএনপিকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করতে চায় তাহলে দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সেটি প্রতিহত করা হবে। আগামী নির্বাচন হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে মুক্ত খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে। এ ছাড়া এ দেশে কোনো নির্বাচন হবে না।’