বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির প্রতিবাদে বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ মিছিল পুলিশ পণ্ড করে দিয়েছে।রোববার সকাল থেকেই পুলিশ ভোলা, মুন্সীগঞ্জ, নেত্রকোনা জেলায় দলীয় কার্যালয় ঘেরাও করে রাখে। এর ফলে নেতাকর্মীরা জেলা শহরে কোনো বিক্ষোভ করতে পারেননি। তবে কোথাও কোথাও শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করার খবর পাওয়া গেছে।
লন্ডন থেকে চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরার পর জিয়া চ্যারিটেবল ও অরফানেজ ট্রাস্ট দুই মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দিচ্ছিলেন। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বারবার তাঁর স্থায়ী জামিনের আবেদন জানালেও আদালত তা নাকচ করে দেন।
গত বৃহস্পতিবারও এক মামলায় রাজধানীর বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামানের আদালতে খালেদা জিয়ার আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হরতাল চলাকালে নিরাপত্তার কারণে তিনি সকালে আদালতে যেতে পারেননি। পরে তাঁর আইনজীবীরা দুপুরের পর আদালতে হাজির হওয়ার আবেদন জানান।
কিন্তু বিচারক সময়মতো আদালতে হাজির না হওয়ায় সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।চিকিৎসার জন্য লন্ডনে থাকাবস্থায়ও একই আদালত দুই মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন। দেশে ফেরার পরপরই তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন এবং নিয়মিত হাজিরা দিয়ে আসছিলেন। এর মধ্যেই আদালত তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। তাঁর আইনজীবীরা জানিয়েছেন, ৬ ডিসেম্বর খালেদা জিয়া আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইবেন।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানাকে ‘বিস্ময়কর’ বলে মন্তব্য করেন বিএনপির নেতারা। পরোয়ানার বিরুদ্ধেই সারা দেশে বিক্ষোভের ডাক দেয় বিএনপি।মুন্সীগঞ্জ থেকে মঈনউদ্দিন সুমন জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির প্রতিবাদে মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল পুলিশ পণ্ড করে দিয়েছে। পরে জেলা কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করেন দলের নেতাকর্মীরা।রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেলা বিএনপির আয়োজনে মুন্সীগঞ্জের সুপারমার্কেটের ‘অঙ্কুরিত যুদ্ধ-৭১’ ভাস্কর্যের সামনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল হাইয়ের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি আতোয়ার হোসেন বাবুল, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল কুদ্দুস ধীরন, জেলা যুবদলের সভাপতি তারিক কাশেম খান মুকুল, শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, জেলা কৃষক দলের সভাপতি আবদুল আজিম স্বপন, জেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক নিজাম উদ্দিন মেম্বার, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা, টঙ্গিবাড়ী থানা বিএনপির সভাপতি মুনরুল মনি পল্টন প্রসুখ।নেত্রকোনা ভজন দাস জানিয়েছেন, সেখানেও পুলিশি বাধার করণে বিএনপির নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ সমাবেশ করতে পারেননি।
জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য আশরাফ উদ্দিন খান সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, দেশব্যাপী প্রতিবাদ কর্মসূচির কারণে আজ সকালে ছোট বাজারের দলীয় কার্যালয়ে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সকাল থেকেই বিপুলসংখ্যক পুলিশ দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়।বিএনপির নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয়ের কলাপসিবল গেট খুলে কার্যালয়ে বসতে চাইলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়।
এ সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা ব্যানার নিয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করতে চাইলে পুলিশ তাদের সেখান থেকে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। পুলিশি বাধায় বিক্ষোভ সমাবেশ পণ্ড হয়ে যাওয়ায় বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী সেখান থেকে চলে যেতে বাধ্য হন বলে অভিযোগ করেন জেলা বিএনপির সভাপতি।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ড্যাব নেতা অধ্যাপক ডা. আনোয়ারুল হক বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ সমাবেশ করতে চাইছিলাম, কিন্তু পুলিশি বাধার কারণে তা করা সম্ভব হয়নি।’দলের জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে পুলিশি বাধার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
এ ব্যাপারে নেত্রকোনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমীর তৈমুর ইলী বলেন, অস্থিতিশীল পরিবেশ ও শান্তি-শৃঙ্খলা ভঙ্গের আশঙ্কায় তাদের বিক্ষোভ সমাবেশ করতে দেওয়া হয়নি।ভোলা থেকে মো. আফজাল হোসেন জানিয়েছেন, পুলিশি বাধার মুখে বিএনপি শহরে বিক্ষোভ মিছিল করতে পারেনি। তবে কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ এবং ভেতরে সমাবেশ হয়েছে।
বেলা ১১টায় বিএনপি ভোলা শহরের মহাজনপট্টির দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করতে চাইলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। বিএনপি কার্যালয়ের সামনে একটি গাড়ি রেখে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে রাখে। ফলে নেতাকর্মীরা আর বের হতে পারেননি। ব্যানার বের করলে পুলিশ তা নিয়ে যায়। একপর্যায়ে নেতাকর্মীরা সেখানে বিক্ষোভ করেন।
এ সময় তাঁরা সরকারবিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন।এদিকে সকাল থেকেই দুজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ওসির নেতৃত্বে বিপুলসংখ্যক পুলিশ বিএনপির কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়। কার্যালয়ের আশপাশ ছাড়াও শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশকে অবস্থান নিতে দেখা গেছে।
পরে বিএনপির কার্যালয়ে জেলা বিএনপির সহসভাপতি মো. আমিনুল ইসলামের সভাপতিত্বে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সদর উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মো. কবির হোসেনের উপস্থাপনায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হারুন-অর-রশিদ ট্রুম্যান, উপজেলা বিএনপির সভাপতি আসিফ আলতাফ প্রমুখ বক্তব্য দেন।বক্তারা পুলিশি বাধার নিন্দা জানিয়ে বলেন, এভাবে পুলিশ দিয়ে বেশি দিন আন্দোলন-সংগ্রাম দাবিয়ে রাখা যাবে না। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সব মিথ্যা মামলা, ওয়ারেন্ট বাতিলের দাবি জানানো হয় সমাবেশ থেকে।