নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেটের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে যুক্তরাষ্ট্র শাখা বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, আওয়ামী লীগকে সংখ্যালঘুরা সব সময় নিজেদের পরম বন্ধু মনে করেছে। কিন্তু দলটি তাদের আচরণে সংখ্যালঘুদের প্রতি বন্ধুত্ব দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা এখন আরও বেশি উপেক্ষার শিকার হচ্ছে।
নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেটের সামনে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে যুক্তরাষ্ট্র শাখা বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা এসব কথা বলেন। ২৪ নভেম্বর বিকেলে লং আইল্যান্ড সিটির নর্দার্ন বুলেভার্ডে এই বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
পুলিশ বেষ্টনীর মধ্যে অনুষ্ঠিত এই বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে ডেপুটি কনসাল জেনারেল শহিদুল ইসলামের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়। স্মারকলিপিতে বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং সামাজিক সংখ্যালঘুদের রক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
‘টার্গেট কিলিং, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ এবং সামাজিক ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর বর্বরোচিত হামলার ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাওয়া’ শীর্ষক স্মারকলিপি হস্তান্তর করেন যুক্তরাষ্ট্র ঐক্য পরিষদের নেতা নয়ন বড়ুয়া, জেমস রয় ও স্বপন দাস। এ ছাড়া স্মারকলিপির কপি দেওয়া হয়েছে মার্কিন সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান, ইউএস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল ফ্রিডম, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর,
বাংলাদেশ ককাসের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার কংগ্রেসম্যান জোসেফ ক্রাউলি, কংগ্রেসওম্যান তুলশী গ্যাবোর্ড, ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস, ভারতীয় হাইকমিশনার, যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার, জার্মান দূতাবাস, ফরাসি দূতাবাস, সুইডিশ দূতাবাস, নিউইয়র্কে ভারতীয় কনসাল জেনারেল, বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন, মানবাধিকারবিষয়ক ইউরোপীয় কমিশন, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, হিন্দু আমেরিকান ফাউন্ডেশন এবং সার্ক সচিবালয়ে।
বিক্ষোভ সমাবেশে ঐক্য পরিষদের আন্তর্জাতিক সমন্বয়কারী শিতাংশু গুহ অভিযোগ করেন, ‘রামু, অভয়নগর, নাসিরনগর, মাধবপুর, রংপুরসহ অন্যান্য স্থানে বিগত কয়েক বছরে যে হামলা হয়েছে, সবই একই ধরনের। পরিকল্পিতভাবে এসব হামলা চালানো হয়। সব মামলায় হামলার শিকার ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। অর্থাৎ হামলাকারীদের রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসন উল্টো আক্রান্ত ব্যক্তিদেরই মামলায় অভিযুক্ত করেছে।
কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করাও হয়েছে।’ তিনি অভিযোগ করেন, কোনো কোনো ঘটনায় প্রকৃত অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হলেও কয়েক দিন পরই জামিন পেয়ে যাচ্ছে।
স্বপন দাস অভিযোগ করেন, অত্যাচার-নির্যাতনে অতিষ্ঠ ব্যক্তিরা বিচার না পেয়ে বসতবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র পাড়ি জমাচ্ছেন। এভাবেই নীরবে বাংলাদেশকে সংখ্যালঘুহীন করার সুদূরপ্রসারী একটি পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ঐক্য পরিষদের সাবেক সম্পাদক সুশীল সাহা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক হচ্ছে হিন্দুসহ সংখ্যালঘুরা। অথচ সেই আওয়ামী লীগের আমলেই সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছি আমরা।’
স্মারকলিপিতে সম্প্রতি পদত্যাগী প্রধান বিচারপতির প্রসঙ্গ টেনে বলা হয়, ‘এস কে সিনহার পদত্যাগের নাটক আমরা অবলোকন করেছি। এস কে সিনহাকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের আগে প্রচলিত রীতি অনুযায়ী সবকিছু যাচাই করা হয় এবং তাঁর পেশাগত দক্ষতার গুণেই তিনি ওই পদে নিয়োগের সুযোগ পেয়েছিলেন।
হিন্দুদের ভোটে কিংবা হিন্দু সম্প্রদায়ের অনুরোধে তাঁকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। কিংবা এস কে সিনহা হিন্দু সম্প্রদায়ের কোনো পর্যায়ের নেতাও ছিলেন না। অথচ তাঁর কিছু কাজের জন্য পুরো হিন্দু সম্প্রদায়কে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর জঘন্য একটি প্রয়াস দেখেছে গোটা জাতি।’
সংখ্যালঘু নির্যাতনবিরোধী নানা স্লোগান লেখা পোস্টার-প্ল্যাকার্ড নিয়ে পরিষদের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেন। শ্রীকৃষ্ণভক্ত সংঘের নেতা ডা. প্রভাত দাস ও সুশীল সাহা, জ্যামাইকা হিন্দু কমিউনিটির প্রিয়তোষ দে, পূজা উদ্যাপন পরিষদের ভজন সরকার, ঐক্য পরিষদের তপন সেন, মনিকা রায় প্রমুখ সমাবেশে অংশ নেন।
উৎসঃ প্রথমআলো