নেতাদের ভাবমূর্তি নষ্টে দুদকের অনুসন্ধান: বিএনপি

বিএনপির ভাবমূর্তি নষ্টের জন্য নেতাদের ব্যাংক হিসাব নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনুসন্ধান শুরু করেছে বলে অভিযোগ করেছে দলটি। বিএনপি দাবি করেছে, মিথ্যা সংবাদ করার জন্য আওয়ামী লীগ ২৫টি পোর্টাল করেছে। আওয়ামী লীগ-সমর্থিত অনলাইন পোর্টালগুলোর মনগড়া প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে দুদক এই অনুসন্ধান শুরু করেছে। এটা বিএনপির ভাবমূর্তি নষ্টের নীলনকশার অংশ।

ব্যাংক হিসাবে ‘সন্দেহজনক লেনদেনের’ অভিযোগে বিএনপির কয়েক নেতার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। যেসব নেতার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মোর্শেদ খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আবদুল আওয়াল মিন্টু, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, তাবিথ আউয়াল।

দুদকের অনুসন্ধানের প্রতিক্রিয়ায় আজ মঙ্গলবার দুপুরে নয়াপল্টনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিএনপি। সংবাদ সম্মেলনে জ্যেষ্ঠ নেতারা এ নিয়ে কথা বলেন।

বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন দুদকের অনুসন্ধানের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে একটি মিথ্যা মামলায় কারাগারে রাখা হয়েছে। হাইকোর্টে জামিন হওয়ার পরও নানা অজুহাতে তাঁর কারাবাসকে দীর্ঘায়িত করা হচ্ছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিদেশে। দলের মহাসচিব অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে। এ অবস্থায় দলের নেতাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের বানোয়াট ও মনগড়া খবর এবং দুদকের অনুসন্ধানের ঘোষণার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে এই মিথ্যা প্রতিবেদন দুদক গণমাধ্যমের মাধ্যমে প্রকাশ করছে।’

খন্দকার মোশাররফ হোসেন আরও বলেন, খালেদা জিয়া থেকে শুরু করে দলের নেতাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য নীলনকশার অংশ হিসেবে এই অপপ্রচার। সরকারের এই নীলনকশা বাস্তবায়িত হবে না।

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, সরকার হুকুম করেছে, যারা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে, তাদের বিরত রাখো, ভয় দেখাও, থামাও। আর দুদক দাবি করে, তারা স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। অথচ তারা সরকারের হাতের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

নজরুল ইসলাম খান আরও বলেন, ‘অনলাইন পত্রিকা বা মিডিয়া আছে বলে যা খুশি তা লেখার অধিকার কারও নেই। আমাদেরও পরিবার-পরিজন আছে, আত্মীয়স্বজন আছে। দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি-সংগ্রাম করে এই জায়গায় এসেছি। আমি চাইব, হয় তারা ক্ষমা প্রার্থনা করবে, না হয় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া লাগবে।’

স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সরকার জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য মিথ্যাচারের মাধ্যমে জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। দৃষ্টি অন্যদিকে নিয়ে যেতে হলে তাদের এ ধরনের কাজ করতে হবে। মিথ্যা নিউজ করার জন্য আওয়ামী লীগ ২৫টি পোর্টাল করেছে। প্রতিনিয়ত তাদের যে মিথ্যাচার, তার মধ্যে এই নিউজ একটি। এটাই শেষ নয়; ভবিষ্যতে আরও অনেক নিউজ দেখা যাবে।

সরকার দুদকের মতো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের গ্রহণযোগ্যতা ধ্বংস করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘আমি ব্যবসা করি, লেনদেন হতে পারে। এখানে বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট লিখেছে, আমি সব কটি দেখিনি। এমনও দেখানো হয়েছে, যেখানে আমার কোনো অ্যাকাউন্টই নেই। সংবাদটা পুরোপুরি মনগড়া। কেন এই সংবাদের উৎপত্তি করা হলো, সেটা জনগণের বিচার করা উচিত। বলা হচ্ছে, গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এই প্রতিবেদন। গোয়েন্দা সংস্থাকে বিভিন্ন দেশে স্বৈরাচারী সরকারেরা ব্যবহার করে।’

এক্স-রে ও রক্ত পরীক্ষার সুপারিশ, ব্যবস্থা নেবে সরকার

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। আজ মঙ্গলাবার বিকেলে সচিবালয়ে পয়লা বৈশাখের নিরাপত্তা বিষয়ে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের চার সদস্যের মেডিকেল বোর্ড খালেদা জিয়ার এক্স-রে ও রক্ত পরীক্ষার সুপারিশ করেছে। এ–সংক্রান্ত প্রতিবেদন আজই কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মেডিকেল বোর্ড গতকাল সোমবার জানিয়েছিল, খালেদা জিয়া অসুস্থ। তবে তা গুরুতর নয়। গত রোববার খালেদা জিয়াকে নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে দেখে আসে চার সদস্যের ওই মেডিকেল বোর্ড।

চিকিৎসক দলের প্রধান ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিকস বিভাগের চিকিৎসক অধ্যাপক মো. শামসুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তাঁরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলেছেন। খালেদা জিয়া ঘাড়ে, বাঁ হাতে ও পায়ে ব্যথা বোধ করেন। হাত ঝিমঝিম করে। তিনি আগে যেসব ওষুধ সেবন করতেন, তার সঙ্গে আরও কিছু ওষুধ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। রক্ত ও এক্স-রে পরীক্ষা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তাঁকে ব্যায়াম করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সর্বোপরি তিনি অসুস্থ, তবে গুরুতর নয়।

বৈঠক শেষে পয়লা বৈশাখের নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিষয়ে সাংবাদিকদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সারা দেশে পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠান বিকেল পাঁচটার মধ্যে শেষ করতে হবে। আর রাজধানীর রবীন্দ্রসরোবরের অনুষ্ঠান শেষ করতে হবে সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে।

খালেদা জিয়ার জামিনের বিরুদ্ধে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত রয়েছে। দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) মঞ্জুর করে আপিল বিভাগের দেওয়া আদেশে এ কথা বলা হয়েছে। এ-সংক্রান্ত আদেশ গতকাল সোমবার প্রকাশিত হয়েছে বলে জানা যায়।

প্রসঙ্গত, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয় খালেদা জিয়ার ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অন্য পাঁচ আসামিকে। রায় ঘোষণার পরই সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীকে নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারকে বিশেষ কারাগার ঘোষণা দিয়ে সেখানে রাখা হয়।

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin