alig_bnp

নির্বাচন: অনড় আ.লীগ, কোন পথে বিএনপি?

২০১৮ সালটি বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়াচ্ছে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচন ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে দেশের বৃহৎ দুটি রাজনৈতিক দল বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও জন সমর্থন বিচারে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি বিপরীতমুখি অবস্থান নিয়েছে।

কারণটিও স্পষ্ট। কোন সরকারের অধীনে হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন? নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হবে, কিভাবে এবং কাদের নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হবে, নির্বাচনের সময় সংসদ থাকবে না-কি ভেঙে দেয়া হবে, এবং নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হবে কি-না, হলে কিভাবে হবে এসব বিষয়ে রাজনৈতিক মতপার্থক্য দূর করার উপরই নির্ভর করছে অনেক কিছু।

আওয়ামী লীগ তথা মহাজোট এ ব্যাপারে স্থির বাচনে যেমন বলছে- নির্বাচন অনুষ্ঠানের সব দায়িত্ব থাকবে নির্বাচন কমিশন (ইসি) এর হাতে। সরকারি দল প্রয়োজন অনুযায়ী ইসিকে সহায়তা করবে। ভোটের মাঠে দলীয় সরকারের কোনও হস্তক্ষেপ থাকবে না।

একইভাবে আওয়ামী লীগের এই বক্তব্যে একবারও কান দিতে রাজি নয় বিএনপি। তাদের কথা হচ্ছে- নির্বাচন অবশ্যই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হতে হবে। কোনও দলীয় সরকারের অধীনে এদেশে নির্বাচন হতে দেয়া হবে না।

দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন কিছুতেই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে পারে না- এমন দাবি করে বিএনপির শীর্ষ নেতারা বলছেন, স্থানীয় নির্বাচনে হয়তো জনগণের চোখে ঘোর লাগিয়ে নিজেদের স্বচ্ছ অবস্থানের জারি গাইছে আওয়ামী লীগ। হয়তো বিভিন্ন উপজেলা কিংবা সিটি করপোরেশনে অন্য দলের প্রার্থী বিজয়ী হয়েছে। কিন্তু জাতীয় নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে হলে বিএনপি কথিত ‘বর্তমান অবৈধ সরকার’ কিছুতেই তা নিরপেক্ষ, অবাধ হতে দেবে না।

সম্প্রতি রংপুর সিটি নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী বিজয়ী হয়েছে। ঠিক আগের মতোই এবারও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে রংপুরের নির্বাচনকে দৃষ্টান্ত হিসেবে দাঁড় করানো হলো। বলা হলো- দলীয় সরকারের অধীনেও যে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব রংপুর সিটি নির্বাচন তারই উদাহরণ।

চলমান এই পরিস্থিতিতে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে নাগরিকদের মধ্যে। ২০১৪ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত আর বিরোধী দল ছাড়াই সরকারের নির্বাচন অনুষ্ঠান -দুটো নিয়েই এখনও সমালোচনা আছে রাজনৈতিক মহলে।

বাংলাদেশে ১৯৭৩ সাল থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত প্রথম ৪টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সে সময়কার ক্ষমতাসীন সরকারগুলোর অধীনে। যার ৩টিই ছিলো সেনা নিয়ন্ত্রিত সরকার। তবে ১৯৯১ সালের নির্বাচনটি করে সব দলের ঐকমত্যে গঠিত একটি নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ১৯৯৬ সাল থেকে পরপর ৩টি নির্বাচন হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। ২০১১ সালে সংবিধানে সংশোধনী এনে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিধানে ফিরে যায় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট সে নির্বাচন বর্জন করার পর এখন বিভিন্ন মহল থেকে সব দলকে নিয়ে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের চাপ আছে সরকারের ওপর। এমন প্রেক্ষাপটে আগামী নির্বাচন কিভাবে হবে, তা নিয়ে সরকারের অবস্থানে কোনো পরিবর্তন এসেছে কি?

সম্প্রতি গণমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ‘আমাদের মেয়াদ শেষ হবে ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারি। তার আগের ৯০ দিনের মধ্যেই যে নির্বাচন হবে, বর্তমান সরকার সেই নির্বাচনকালীন সময়ে ক্ষমতায় থাকবে। তারা দৈনন্দিন কাজ করবে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হিসেবে কাজ করবে, যেরকম অন্যান্য দেশেও হয়। এখানে যদি বিএনপি নির্বাচনে না আসে তাহলে আমাদের তো কিছু করার নেই। নির্বাচন হবেই এবং সেই নির্বাচন হবে সংবিধানের ভিত্তিতে। ক্ষমতাসীন দল বা আমাদের জোট এর বাইরে যাবে না।’

তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ের জন্য ২০১৪ সালের নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপি যে লাগাতার কর্মসূচি দিয়েছিল দলটির নেতারা বলছেন, এবারও সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে জনগণকে নিয়ে রাজপথে থাকবে বিএনপি।

অবশ্য আওয়ামী লীগ যখন দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যাপারে কিছুতেই আপস কিংবা সমঝোতায় আসছে না, তখন বিকল্প হিসেবে বিএনপির পক্ষ তত্ত্বাবধায়কের বদলে সহায়ক সরকারের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। যদিও সহায়ক সরকারের কোনও রূপরেখা এখনও স্পষ্ট করেননি বিএনপি।

‘আমরা একটি নাম বলেছি যে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ একটি সহায়ক সরকার। যে নামেই হোক না কেন, মূল কথাটা হচ্ছে নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সরকার। এই সরকারের রূপরেখা আমরা দেব, আমাদের নেত্রী উপযুক্ত সময়ে এই রূপরেখা দেবেন। সরকারের প্রতিক্রিয়া দেখে আমরা এই রূপরেখা নিয়ে জনগণের কাছে যাবো এবং এই জনগণকে নিয়েই আমরা আগামী নির্বাচনের সময় পর্যন্ত থাকতে চাই। যদি সরকার ২০১৪ সালের পথে হাঁটে তাহলে জনগণ রাস্তায় নেমে তাদের ভোটের অধিকার আদায় করবে’ -গণমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এমনটিই বলছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতাদেরও ভাষ্য, শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে আসবে বিএনপি।

চলমান এই রাজনৈতিক বৈরিতায় রাজনৈতিক দলগুলোর মতো দেশের সাধারণ জনগণের মধ্যেও এক ধরনের চাপা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাজ করছে। তাদের একাধিক জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিষয়টি তারা খুবই সিরিয়াসলি নিচ্ছে। কারণ, দেশের অস্থিতিশীলতায় তাদেরকেই যে সবচেয়ে বেশি নির্যাতন-নিপীড়ন আর ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়। সুশীল সমাজ কিংবা শান্তিপ্রিয় একশ্রেণির মানুষের ভাষ্য, দেশের বড় দুটি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি খুব ভালো করেই জানে কোন পদ্ধতিতে দেশ পরিচালিত হলে জনগণ একটু শান্তি-স্বস্তিতে থাকতে পারবে। কিন্তু সে তাড়না কিংবা দায় সরকার অথবা বিরোধী দলগুলোর মধ্যে নেই। রাজনৈতিক বিভেদ প্রতিহিংসা দূর করে শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য পরিবেশে ভোট হউক- একথায় ঠিক এ মুহূর্তে এমনটিই চাওয়া দেশবাসীর।

লেখক: পাঠক, চিন্তক

ব্রেকিংনিউজ/

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin