alig_bnp

নির্বাচনকালীন সরকার: এখনো অনড় দু’দল

নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে দেশের প্রধান দুই দল বিপরীতমুখী অবস্থানে অনড়। আওয়ামী লীগের দাবি, নির্বাচনকালীন যে সরকার ক্ষমতায় থাকবে, অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের মতো সেই সরকারই এটি (বর্তমান সরকার)। একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করাই সরকারের কাজ। ওই সময় সরকার শুধু ‘রুটিন ওয়ার্ক’ করবে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনেই হবে নির্বাচন। অন্যদিকে বিএনপির দাবি, নির্বাচনের সময় যদি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী স্বপদে থাকেন এবং সংসদও বহাল থাকে, সেক্ষেত্রে প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন না। কারণ তাদের পদোন্নতি থেকে শুরু করে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে সরকার।

সরকার নয়, ইসির অধীনে নির্বাচন : ওবায়দুল কাদের

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি জানে শেখ হাসিনা বা সরকারের অধীনে নয়, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে। তারপরও বিএনপি নেতারা ব্ল্যাকমেইলিং বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। এখানে তারা কেন ভণিতা করছেন? ইচ্ছা করেই তারা ভণিতা করছেন। ‘মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা ইস্যুতে যে রকম আইওয়াশ স্টেটমেন্ট দিয়েছে, এ বক্তব্যও সে রকমই মনে হয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না বলে খালেদা জিয়ার ও দলের নেতাদের এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর খবর পেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছুটে যাওয়ার কথা স্মরণ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘যখন ওনার (খালেদা জিয়া) ছেলে মারা গেলেন, প্রধানমন্ত্রী ছুটে গেছেন ওনাকে সান্ত্বনা দিতে। কিন্তু উনি দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন। উনি এখন সংলাপের কথা বলেন। সংলাপের দরজা তো ওইদিনই বন্ধ করে দিয়েছেন নিজের দরজা বন্ধ করে। কিন্তু পক্ষান্তরে তারা সংলাপের কথা বলে।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপি জানে নির্বাচন হবে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে। এখানে শেখ হাসিনার কথা কেন এলো? নির্বাচনকালীন যে সরকার ক্ষমতায় থাকবে, অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের মতো সেই সরকারই এটি। একটি স্বাধীন নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করাই সরকারের কাজ। সরকার নির্বাচনের সময় শুধু রুটিন ওয়ার্ক করবে।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশে যেভাবে নির্বাচন হয়, সেভাবেই নির্বাচন হবে। যাতে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়, স্বাধীন হয়- সেই ব্যাপারে সহায়তা করবে শুধু নির্বাচনকালীন সরকার। কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করবে না ওই সময়। সবকিছু থাকবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে। সরকারের অধীনে কোনো কিছু থাকবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসনও থাকবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে।’

নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো ইসির অধীনে থাকবে উল্লেখ করে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘সংস্থাগুলো তখন সরকারের কথা শুনবে না। তারা কথা শুনবে নির্বাচন কমিশনের। বিএনপি সেনাবাহিনীর কথা বলছে। সেনাবাহিনী তো আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নয়। আরপিওতে না থাকলে সেনাবাহিনী কিভাবে রাখবে ইসি।’

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বক্তব্যের সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, এক সময় তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার বলেন, আবার বলেন সহায়ক সরকার। তারা কার কাছে এই দাবি জানান? তারা ইসিকে বলেন সহায়ক সরকারের কথা। ইসি এখানে কী করবে? পরে আবার বলেন, ইসি নাকি সরকারকে বোঝাবে। যেনতেন প্রকারে তাদের ক্ষমতায় বসাতে হবে। তা না হলে তারা শান্তি পাবেন না।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এ বছর আমরা দলে অনৈক্য চাই না। আওয়ামী লীগের জনসমর্থনের কোনো কমতি নেই। কিন্তু দলের ভেতরে কিছু সমস্যা আছে। ঘরে শত্রু রাখলে বাইরে আক্রমণ তো হবেই। আমরা দুর্বল হলে দুর্বলতার ওপর বেশি আঘাত আসবে। আমরা আশাবাদী যে, আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকবে। এজন্য আমরা জেলাগুলোতে দিনরাত পরিশ্রম করছি। উপজেলা পর্যায়ে যাচ্ছি।’ সেগুলোকে সমাধান করার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ বিজয়ী হবে।’ বিএনপির নেতাদের মধ্যে ‘সৌজন্যবোধ’ নেই বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘আমরা এতকিছুর পরও খালেদা জিয়াকে বেগম জিয়া বলি। আর ওনারা বলেন, হাসিনা-হাসিনা। এটা আমাদের কষ্ট লাগে। কারণ বর্তমানে আমাদের প্রধানমন্ত্রী দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তি।’

নির্বাচন হবে নির্দলীয় সরকারের অধীনেই : মির্জা ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই হতে হবে। তিনি আরও বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন (ইসি) আওয়ামী লীগ সরকারের আজ্ঞাবহ। আর জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণেই ক্ষমতাসীনরা সংলাপকে ভয় পায়। আগামী নির্বাচন ও নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বুধবার এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের করা বিভিন্ন মন্তব্যের জবাবে যুগান্তরের কাছে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী এবং বর্তমান সংসদ বহাল থাকবে- এ অবস্থায় জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না, হবে না। এ অবস্থায় নির্বাচনের মাঠে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরি করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। নির্বাচনের মাঠ যদি সমতল না হয়, সেখানে প্রার্থীরা সঠিকভাবে তার প্রচারের কাজ করতে পারবে না। আর ভোটাররাও নির্বিঘেœ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোটও দিতে পারবে না।

তিনি আরও বলেন, একটি দলের প্রধান হচ্ছেন শেখ হাসিনা। তিনিই যদি নির্বাচনের সময় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে স্বপদে থাকেন, সেক্ষেত্রে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট প্রশাসন বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নির্বাচনকালীন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন না। কারণ তাদের পদোন্নতি থেকে শুরু করে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে সরকার। নির্বাচনকালীন তারা কিছু সময়ের জন্য এরা নির্বাচন কমিশনে ন্যস্ত হন। ফলে ইসি নয়, সরকার যেভাবে চাইবে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করতে বাধ্য হবে।

সিটি কর্পোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদসহ বিগত সময়ে বর্তমান সরকারের অধীনে যেসব স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে- তা কোনোটিই সুষ্ঠু হয়নি। এসব ক্ষেত্রে দেখা গেছে, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্তদের চোখের সামনে ভোট কেন্দ্র দখল করে ক্ষমতাসীনরা তাদের প্রার্থীদের মার্কায় সিল মেরেছে। কোথাও কোথাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ও প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্তরাও এ কাজে সহায়তা করছে- এমন চিত্র গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার যদি নিরপেক্ষ না হয়, তাহলে নির্বাচন কমিশন চাইলেও সুষ্ঠু ভোট সম্ভব নয়। তার মধ্যে নির্বাচন কমিশনও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের আজ্ঞাবহ। এছাড়া সরকার নির্বাচনের আগে কয়েক স্তরে প্রশাসনকে নিজেদের লোক দিয়ে সাজায়। গণতান্ত্রিক দেশগুলোয় যেভাবে নির্বাচন হয়, বাংলাদেশেও একইভাবে নির্বাচন হবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, অন্য গণতান্ত্রিক দেশগুলোয় পার্লামেন্ট বহাল রেখে নির্বাচন হয় না।

পার্লামেন্ট বিলুপ্ত করেই সেসব দেশে নির্বাচন হয়। এছাড়া গণতান্ত্রিক দেশগুলোর নির্বাচন কমিশনকে সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করতে হয় না। কিন্তু আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় থেকেছে, তখনই নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনকে নিয়ন্ত্রণ করেছে। সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে নিরপেক্ষ থেকে নির্বাচন পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি। এজন্যই আমরা নির্বাচনের সময় নিরপেক্ষ সরকারের কথা বলেছি।

সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন নয়, নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতেই বিএনপি নেত্রী এমন বক্তব্য দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব যুগান্তরকে বলেন, এক্ষেত্রে আমাদের বক্তব্য পরিষ্কার। ক্ষমতাসীন দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন করা সম্ভব নয়। দেশে যে রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রেক্ষাপট রয়েছে- সেখানে তা এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি। নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়- এটা আমরা বিশ্বাস করি। এটা চাপের কোনো বিষয় নয়। আমরা চাই, দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে। জনগণের সরাসরি ভোটে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠাই আমাদের মূল চাওয়া। জনগণও চায় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। যেখানে জনগণের চাহিদার প্রতিফলন ঘটবে।

সংলাপ প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, এ সরকার জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তারা মনে করে সংলাপে বসলেই জনগণের চাহিদা অনুযায়ী সবকিছু করতে হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। এ কারণেই আওয়ামী লীগ সংলাপকে ভয় পায়। সংলাপের প্রসঙ্গ এলেই আওয়ামী লীগ নেতারা অস্বস্তিতে পড়েন এবং উল্টাপাল্টা কথা বলেন।

যুগান্তর

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin