bnp-flag

নতুন রাজনৈতিক স্ট্র্যাটেজি বিএনপির

চেয়ারপারসনের বার্তা পৌঁছে দিতে তৃণমূলে ঝটিকা সফরে কেন্দ্রীয় নেতারা * উসকানিতে পা না দিয়ে পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণের নির্দেশ চেয়ারপারসনের

নতুন বছরে নতুন রাজনৈতিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) নিয়ে আসছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। নির্বাচনের বছরকে সামনে রেখে এ স্ট্র্যাটেজি তৈরি করছেন তিনি। অতীতে ভুল-ত্রুটি হয়ে থাকলে সেখান থেকে বেরিয়ে এসে একেবারে নতুন ধারার রাজনীতি শুরু করতে চান তিনি।

আগামী বছরকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের বছর হিসেবে ধরে এ কৌশল চূড়ান্ত করা হচ্ছে। যার অন্যতম পদক্ষেপ- জনসাধারণ ক্ষুব্ধ হয়, এমন কোনো পদক্ষেপ না নেয়া। বিপরীতে জনপ্রত্যাশা অনুযায়ী পরিস্থিতি প্রেক্ষাপট বুঝে সিদ্ধান্ত নেয়া। তবে কোনো ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো করে হঠকারী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে না। একমাত্র দলীয় চেয়ারপারসন ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অন্য কারও বক্তব্য, সিদ্ধান্ত বা নির্দেশনা দেয়ার পথ বন্ধ করা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিএনপির নতুন এক কর্মকৌশলের অন্যতম পথনির্দেশিকা হল, দলের নেতাকর্মী ও জনগণের কাছে নিজেদের অবস্থান সুসংহত রেখে ঠাণ্ডা মাথায় চুপচাপ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দিনক্ষণ পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়া। এ সময় সরকারের পক্ষ থেকে নানা রকম ফাঁদ তৈরি করা হবে। কিন্তু ১১ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি কোনো ফাঁদে পা না দিয়ে সতর্কতার সঙ্গে কঠিন সময়টুকু পাড়ি দিতে চায়।

২০১৮ সালের জন্য দলটির চেয়ারপারসনের নতুন রাজনৈতিক কৌশলের এ বার্তা নেতাকর্মীদের কাছে পৌঁছে দিতে তৃণমূল সফরে বের হচ্ছেন দলটির সিনিয়র নেতারা। আজ থেকে এক সপ্তাহের এ ঝটিকা সফরে তারা বিভিন্ন সাংগঠনিক জেলা সফর করবেন। এছাড়া উদ্ভূত যে কোনো পরিস্থিতিতে তৃণমূলকে কখন কী করতে হবে, সে বিষয়েও খালেদা জিয়ার নির্দেশনা জানিয়ে দেয়া হবে। দলটির উচ্চপর্যায়ের নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, বিএনপি সব সময় ইতিবাচক রাজনীতিতে বিশ্বাসী। উদার গণতান্ত্রিক দল হিসেবে আমাদের চেয়ারপারসন বারবার অতীত ভুলে সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, আগামী বছর এ দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের বছর হল ২০১৮। দেশের মানুষের ভোটাধিকার ও মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার বছর হবে এটা। এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, নতুন বছরে নিশ্চয়ই আমাদের চেয়ারপারসন দেশবাসীর কাছে নতুন বার্তা দেবেন।

দলটির হাইকমান্ড মনে করে, আসছে নতুন বছরে দলকে কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হতে পারে। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার আগাম প্রস্তুতি হিসেবে নানা কৌশল নিয়ে ভাবা হচ্ছে। সাধারণ মানুষের কাছে নতুন ধারার রাজনীতি, নতুন কিছু প্রতিশ্রুতি নিয়ে হাজির হতে চান তারা।

এমনকি খালেদা জিয়া যথাসময়ে জাতির উদ্দেশে দেশের বিভিন্ন সেক্টরের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সামনে বিশেষ একটি নির্বাচনী বক্তৃতাও দিতে পারেন। তবে এ বিষয়ে সূত্রটি খোলাসা করে কিছু বলতে চায়নি। এখন শুধু বলা হচ্ছে, সরকারের পাতা ফাঁদে পা না দিয়ে প্রয়োজনের সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়াকেই বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে।

তাই সরকারের উসকানিতে পা না দিয়ে নেতাদের সতর্কভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের নির্দেশ দিয়েছেন দলটির চেয়ারপারসন। এক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বক্তব্যের জবাবেও অনেকটা কৌশলী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। যেন কেউ দলের বিদ্যমান পলিসিরি বাইরে গিয়ে যে যার ইচ্ছেমতো কিছু না বলেন। প্রয়োজনে সমন্বিত সিদ্ধান্ত নিয়ে একটি স্থান থেকে কিংবা একজন নেতা কথা বলবেন। এক ইস্যুতে জনে জনে সবাই যেন বিক্ষিপ্ত কথা না বলেন।

সূত্র জানায়, গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে দলের নেতাদের প্রতিক্রিয়া দেয়ার ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। কোনো ইস্যুতে যাতে পরস্পরবিরোধী অবস্থান না হয়, সেদিকে দৃষ্টি দিতে বলা হয়েছে। সব ব্যাপারে নেতাদের প্রতিক্রিয়া না দেয়ার পক্ষে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে দলের মুখপাত্রই প্রতিক্রিয়া জানাবেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় যুগান্তরকে বলেন, চেয়ারপারসনের বার্তা নিয়ে আমরা তৃণমূলে যাচ্ছি। পাশাপাশি এ সফরের মধ্য দিয়ে তৃণমূলের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি ও নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করা হবে।

দলটির কয়েকজন নীতিনির্ধারক যুগান্তরকে জানান, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বিএনপি। বিশেষ করে দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলা ও পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে এখন থেকেই হিসাব কষতে শুরু করেছেন তারা। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় সার্বিক প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।

চেয়ারপারসনের মামলা নিয়ে নেতাকর্মীরা যাতে উদ্বিগ্ন না হন- এমন বার্তা নিয়ে আজ থেকে তৃণমূল সফরে যাচ্ছেন তারা। আগামী দিনের আন্দোলন ও নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ সফর বলা হলেও মূলত চেয়ারপারসনের মামলা এবং নতুন বছরে তার রাজনৈতিক স্ট্র্যাটেজি তুলে ধরাই মূল উদ্দেশ্য। কেন্দ্রের যে কোনো সিদ্ধান্ত যাতে একযোগে পালন করা হয়, সে ব্যাপারে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেয়া হবে।

কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সবাইকে দলের চেয়ারপারসনের সিদ্ধান্তের বাইরে অন্য কারও নির্দেশ না মানতে কঠোর বার্তা দেয়া হবে। নতুন বছরে রাজনীতিতে নানা মেরুকরণ হতে পারে। যে কোনো পরিস্থিতিতে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা যাতে বিভ্রান্ত না হন, সে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েই এমন বার্তা দেয়া হবে। পাশাপাশি চেয়ারপারসনের মামলা নিয়ে নেতাকর্মীরা যাতে উদ্বিগ্ন না হন, সেটিও পরিষ্কার করা হবে এ সফরে।

খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা মনে করেন, সবকিছু বিবেচনা করে বিচারক রায় দিলে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বেকসুর খালাস পাবেন বিএনপি চেয়ারপারসন। তারপরও অন্য কিছু হলে সে ব্যাপারে তাদের আইনগত প্রস্তুতি রয়েছে। আইনের পাশাপাশি রাজনৈতিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হচ্ছে।

তবে এক্ষেত্রে বেশ সতর্ক দলটির হাইকমান্ড। মামলার রায়কে কেন্দ্র করে তৃতীয় পক্ষ যাতে ফায়দা নিতে না পারে, সে দিকটিও ভাবা হচ্ছে। রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলার নামে রাজপথে ভাংচুর, জ্বালাও-পোড়াও না করে ব্যাপক জনগোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ করে শান্তিপূর্ণভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে চায় দলটি।

সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার নতুন বছরে রাজনৈতিক নতুন স্ট্র্যাটেজি ও কেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ বার্তা নিয়ে একযুগে জেলা সফরে বের হচ্ছেন নেতারা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন আজ যাচ্ছেন বরিশাল। সেখানে নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন তিনি। আজ মহানগর ও দক্ষিণ এবং আগামীকাল উত্তর জেলার নেতাকর্মীগের সঙ্গে মতবিনিমিয় করবেন। চেয়ারপারসনের মামলা, আগামীদিনের আন্দোলন ও নির্বাচন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেবেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য আজ বরিশালে আসবেন। তৃণমূলকে উজ্জীবিত করতেই মূলত তার এ সফর। স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে তিনি মতবিনিময় করবেন। আগামী দিনের আন্দোলন ও নির্বাচন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দেবেন। পাশাপাশি চেয়ারপারসনের বিশেষ বার্তাও থাকবে বলে মনে হচ্ছে।

জানা গেছে, দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় যাচ্ছেন সিলেট জেলায়। বৃহস্পতিবার সেখানে নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে হাইকমান্ডের বার্তা পৌঁছে দেবেন তিনি। এছাড়া দলের ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ গোপালগঞ্জ, মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী নেত্রকোনা যাচ্ছেন। অন্য সিনিয়র নেতাদেরও নির্দিষ্ট জেলার দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হচ্ছে।

উৎসঃ   যুগান্তর

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin