al-neta_india

দুর্নীতি মামলার আসামিকে ভারতে রেখে এলেন আ.লীগ নেতা!

সুনামগঞ্জের হাওরে বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির সঙ্গে যে কয়জন জড়িত তার মধ্যে অন্যতম হলেন সিলেট জেলা যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ঠিকাদার আব্দুল হান্নান। গত ২ জুলাই সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি হয়েছে। কিন্তু, আব্দুল হান্নান প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাকে খুঁজে পাচ্ছে না। পুলিশ তাকে কাগজে কলমে পলাতক হিসেবে দেখাচ্ছে।

আরও লক্ষণীয় বিষয় হলো, দুর্নীতি মামলায় পরোয়ানাভুক্ত আসামি আব্দুল হান্নানকে সপরিবারে সঙ্গে নিয়ে গত মঙ্গলবার ভারত গেলেন সিলেটের পাবলিক প্রসিকিউটর (রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী) ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। পুলিশের চোখের সামনে দিয়ে মঙ্গলবার সকালে তামাবিল স্থলবন্দর ক্রস করলেও পুলিশ তাকে আটক করেনি। ভারত গিয়ে তারা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরাফেরা করে একসঙ্গে দুই পরিবারের ছবি তুলে এগুলো আবার আব্দুল হান্নান তার ফেসবুকেও পোস্ট করেছেন।

গত শুক্রবার বিকেলে তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ সপরিবারে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসলেও তার সঙ্গে ছিল না আব্দুল হান্নান ও তার পরিবারের লোকজন। দুর্নীতি মামলার অন্যতম এই আসামিকে সপরিবারে নিরাপদে ভারতে রেখে চলে এসেছেন আওয়ামী লীগের এই কেন্দ্রীয় নেতা।

চলতি বছরের প্রথম দিকে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের হাওরে বাঁধ ভেঙে জেলার ১৫৪টি হাওরের ফসল তলিয়ে যায়। এতে আবাদ হওয়া দুই লাখ ২৩ হাজার ৮২ হেক্টর জমির বোরো ধানের ৯০ ভাগ ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। এ ঘটনার পরই ফসল রক্ষাবাঁধ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্ত কমিটি প্রাথমিকভাবে দুর্নীতির প্রমাণ পায়।

এরপরই ২ জুলাই সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ১৫ কর্মকর্তা, বাঁধ নির্মাণকাজের ৪৬ জন ঠিকাদারসহ ৬১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। অভিযুক্ত ঠিকাদারদের মধ্যে অন্যতম আসামি হলেন সিলেটের ঠিকাদার ও সিলেট জেলা যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল হান্নান।

অ্যানালাইসিস বিডির অনুসন্ধানে জানা গেছে, সিলেটের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরেই আব্দুল হান্নান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের দক্ষিণহস্ত হিসেবে পরিচিত। এর আগেও অনেক অনিয়ম-দুর্নীতি করে সিরাজের ক্ষমতা বলে পার পেয়ে গেছেন হান্নান। হান্নানের দুর্নীতির টাকার বড় একটি অংশ আওয়ামী লীগের এই নেতার পকেটে যায় বলেও অভিযোগ রয়েছে। এখন পুরো সিলেট জুড়ে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে মিছবাহ উদ্দিন সিরাজ মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে আব্দুল হান্নানকে বাঁচাতে নিরাপদে ভারতে রেখে আসছেন।

এছাড়া, রাষ্ট্র আইনজীবী নিয়োগ দেয় রাষ্ট্রকে সহযোগিতা করার জন্য। কিন্তু, মিছবাহ উদ্দিন সিরাজ রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হয়ে এত বড় দুর্নীতি মামলার একজন পরোয়ানাভুক্ত আসামিকে ভারতে রেখে আসার ঘটনায় সিলেটসহ সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। সিলেট আদালতেও এনিয়ে কয়েকদিন ধরে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। আইনজীবীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, রাষ্ট্রই যে দুর্নীতিবাজদের সেল্টার দিচ্ছে আবারো তা প্রমাণিত হলো।

অ্যানালাইসিস বিডি

আওয়ামী লীগ বিএনপি যেসব দলকে জোটে ভেড়াতে চায়

তৃণমূল বিএনপি ও ইসলামী ফ্রন্টের আওয়ামী লীগের নির্বাচনী জোটে যোগ দেয়া প্রায় নিশ্চিত… বিএনপিও এগোচ্ছে নানা কৌশলে… হেফাজতসহ ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে আ’লীগের সমঝোতার উদ্যোগ, বিএনপি বলছে- সময় হলে ইসলামী দলগুলো তাদের সঙ্গে থাকবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দুই প্রধান দল জোটের পরিধি ও শক্তি বাড়াতে তৎপরতা শুরু করেছে।

এ নিয়ে পর্দার আড়ালে নানামুখী সমীকরণ চলছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে। তবে এ কথা সত্য, যে দলগুলোকে জোটে ভেড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে তাদের ভোটের হিসাব-নিকাশে তেমন কোনো প্রভাব বিস্তারের সক্ষমতা নেই। কিন্তু ভোটের মাঠে সাধারণ ভোটারদের আকৃষ্ট করতে কিছু পরিচিত মুখকে তারা সামনে রাখতে চান। জোট ভারি করে বোঝাতে চান বেশিরভাগ দল তাদের সঙ্গে আছে।

সূত্র জানিয়েছে, এরকম একটি হিসাব-নিকাশ সামনে রেখে তৃণমূল বিএনপি ও ইসলামী ফ্রন্টের আওয়ামী লীগের নির্বাচনী জোটে যোগ দেয়া প্রায় নিশ্চিত। চলছে হেফাজতের সঙ্গেও সমঝোতার উদ্যোগ। অপরদিকে ২০ দলীয় জোট অক্ষুন্ন রেখে এর পরিধি বাড়ানোর পক্ষে বিএনপি ও এর বেশিরভাগ শরীক। অন্ততপক্ষে যুগপৎ আন্দোলন ও সমঝোতার ভিত্তিতে আগামী নির্বাচনে প্রার্থী দেয়ার চিন্তাভাবনা করছে বিএনপির হাইকমান্ড। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের একজন নীতিনির্ধারকরা যুগান্তরকে বলেন, সময় এলে অনেক চমক দেখা যাবে। যারা নির্বাচনী জোটে যুক্ত হবেন তারা সবাই ক্ষমতার সঙ্গী হতে চাইবেন। ফলে তারা জনসমর্থনের পাল্লা যেদিকে ভারি সেদিকেই ঝুঁকবেন। সেসব চমক নমিনেশন জমা দেয়ার আগের দিনও ঘটতে পারে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিষয়টি মনস্তাত্ত্বিক। মূলত ভাসমান ভোটারদের মন জয় করতে বড় দুটি দল গত দু’দশক থেকে জোটগত নির্বাচনের ফর্মুলা বেছে নিয়েছে। দল দুটির নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, সাধারণত ‘ভোট নষ্ট’ না করার উদ্দেশ্যে সম্ভাবনাময় জয়ী দলকে ভোট দিয়ে থাকেন এসব ভোটার। আর এটাও সত্য যে, জয়-পরাজয়ের প্রধান ফ্যাক্টর ভাসমান ভোট। যারা বাতাস বুঝে শেষ মুহূর্তে দল ও প্রার্থী নির্বাচন করে থাকেন। এসব কারণে ভাসমান বা ফ্লোটিং ভোটারদের লক্ষ্য করেই জোট সম্প্রসারণের কাজ চলছে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রোববার যুগান্তরকে বলেন, ২০ দলীয় জোট অটুট রয়েছে। এখনও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়নি। তাই আগামী নির্বাচনে তারা আমাদের সঙ্গে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জোট-মহাজোটের বিষয়টি একটি রাজনৈতিক কৌশল। পরিস্থিতি বিবেচনা করেই এ কৌশল চূড়ান্ত করা হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী জোট সম্প্রাসারণের কোনো সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। তবে জোটের পরিধি যে আর বাড়বে না এটাও নিশ্চিত বলা যাবে না। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সামনে রাজনীতিতে নানা মেরুকরণ হতে পারে। তখন পরিস্থিতি বুঝেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ রোববার যুগান্তরকে বলেন, এ মুহূর্তে আওয়ামী লীগ জোটবদ্ধ অবস্থায় আছে এবং জোটের ঐক্য সূদৃঢ় করার ওপর জোর দিচ্ছে। আমরা আশা করি, আগামী নির্বাচনে জোট আরও শক্তিশালী করে নির্বাচনে অংশ নেব।

এদিকে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ছোট ছোট ইসলামী দল ও সংগঠন নিয়ে ইতিমধ্যে জোট গঠন করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ। বিশ্লেষকরা বলছেন, এবারও তিনি সরকার গঠনের ট্রাম্পকার্ডে পরিণত হতে পারেন। মাঠের রাজনীতিতে সাংগঠনিকভাবে জাতীয় পার্টি আগের তুলনায় অনেক শক্তিশালী। তাই আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে কাছে টানতে দুই প্রধান দলের নানামুখী গোপন তৎপরতা যে থাকবে, সেটি নিশ্চিত বলা যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় পার্টির একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য যুগান্তরকে বলেন, জাতীয় পার্টির সমর্থন ছাড়া কেউ সরকার গঠন করতে পারবে না। আগামী জাতীয় নির্বাচনে এটি আরও একবার প্রমাণিত হবে।

সূত্র জানায়, গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনকে সামনে রেখে জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বাসদসহ কয়েকটি দল মিলে তৃতীয় একটি জোট গঠনের তৎপরতা চালাচ্ছেন। তারা এ নিয়ে কয়েক দফা বৈঠকও করেন। নতুন সম্ভাব্য এ জোটের দিকে তীক্ষ্ম নজর রাখছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। তাদের অনেকের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রাখছেন দল দুটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।

অপর দিকে রাজনৈতিক দল না হয়েও হেফাজতে ইসলামীসহ বেশ কিছু ইসলামী সংগঠনের সমর্থন পাওয়া নিয়ে অনেকটা আগেভাগে তৎপরতা শুরু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বেশ কিছু পদক্ষেপ ছিল চোখে পড়ার মতো। ওদিকে বিএনপি বরাবরের মতো এবারো মনে করছে, হেফাজতসহ ইসলামী দলগুলো তাদের বড় ভোট ব্যাংক। বিদ্যমান প্রেক্ষাপট ও পরিস্থিতির কারণে অনেকে অনেক কথা বললেও শেষ পর্যন্ত এসব ভোট তাদের বাইরে অন্য কোথাও যাবে না। কিন্তু কারণ যাই হোক, আওয়ামী লীগের কয়েকটি নির্ভরযোগ্য সূত্র যুগান্তরকে জানিয়েছে, আগামী নির্বাচনে হেফাজতের সমর্থন নৌকার পক্ষে আসবে। সময় এলে দেশবাসী এমন খবর প্রকাশ্যে জানতে পারবে। রাজনীতির মাঠে হেফাজতকে নিয়ে এই যখন অবস্থা, তখন ধর্মীয় এ সংগঠনটির নেতাদের রাজনৈতিক গুরুত্ব আগের তুলনায় অনেক বেশি। সূত্র বলছে, এ সুযোগে পর্দার আড়ালে তাদের দরকষাকষির শক্ত অবস্থান আরও মজবুত হয়েছে।

জোট সম্প্রসারণে আওয়ামী লীগের প্রস্তুতি : বিভিন্ন দলের সঙ্গে ঐক্যের মাধ্যমে জোটগতভাবে আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ ক্ষেত্রে আদর্শিক জোট ১৪ দলকে অক্ষুণœ রেখে নির্বাচনী জোটের কলেবর বৃদ্ধি করা হবে। গত দুই নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে (এরশাদ) সঙ্গে নিয়ে ভোট করেছে আওয়ামী লীগ, যা মহাজোট নামে পরিচিত। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এই জোটে নাজমুল হুদার নেতৃত্বাধীন তৃণমূল বিএনপি এবং ইসলামিক ফ্রন্টের যোগদানের বিষয়টি ইতিমধ্যে নিশ্চিত।

এ ছাড়া বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের যোগদানের সম্ভাবনা রয়েছে। আর হেফাজতে ইসলাম রাজনৈতিক দল হিসেবে আবির্ভূত না হতে পারলেও আওয়ামী লীগের সমর্থনে কাজ করবে বলে আশা করছেন দলটির শীর্ষমহল। তা ছাড়া জাতীয় পার্টি (এরশাদ) নেতৃত্বাধীন যে জোটটি রয়েছে সেটাকেও সঙ্গে রাখতে জোর তৎপরতা চালাবে ক্ষমতাসীনরা।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বলছেন, আগামী নির্বাচন হবে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। তারা জোটগত ঐক্য অক্ষুণœ রেখেই এ নির্বাচনী যুদ্ধে অবতীর্ণ হবেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একজন নেতা যুগান্তরকে জানান, বিভিন্ন সময় নানা ইস্যুতে অনেকের সঙ্গেই আলোচনা হয়েছে। এখনও আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। যেহেতু নির্বাচনের এখনও এক বছর বাকি, তাই এখন চূড়ান্ত করে বলা যাচ্ছে না- কোন কোন দল নির্বাচনী জোটে থাকবে। তবে জোটের ঐক্য অটুট রাখা এবং পরিধি বাড়ানোর মাধ্যমে আগামী নির্বাচনে অংশ নেবেন তারা। আর এসবের মাধ্যমে অন্যদের এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক বার্তাও দিতে চায় তার দল।

এমন মন্তব্যের বিষয়ে প্রমাণও মিলেছে। ১৪ দলের শরিক জাসদ একাংশের সভাপতি হাসানুল হক ইনু সম্প্রতি কুষ্টিয়ায় আওয়ামী লীগ শরিকদের ছাড়া ক্ষমতায় আসতে পারবে না বলে মন্তব্য করেন। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ে এই বক্তব্যের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া শোনা গেলেও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, অভিমান থেকে ইনু এমন কিছু বলে থাকতে পারেন, যা দল ও জোটে আলোচনা করে সমাধান করা হবে। আর ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেন, এই মুহূর্তে কারোই এমন কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না- যা জোটের ঐক্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এখন দ্বন্দ্বের সময় নয় ঐক্য সুদৃঢ় করার সময়।

সূত্র জানায়, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর জোটে যোগ দেয়া নিয়ে দলের শীর্ষ মহলে আলোচনা হয়েছে। আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্যের সঙ্গে বঙ্গবীরের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। সময় হলে তাকে ১৪ দল এবং নির্বাচনী জোটে যোগ দেয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হবে।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে রোববার যুগান্তরের পক্ষ থেকে কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে তার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

এদিকে তৃণমূল বিএনপি এবং ইসলামী ফ্রন্ট দুটি দলেরই ১৪ দলে যোগ দেয়া নিয়ে আলোচনা অনেক দূর এগিয়েছে। এর আগে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা ২০১৬ তে জোটের একটি বৈঠকেও অংশ নিয়েছিলেন। একইভাবে ২০১৭ এর জুন মাসে জোটের বৈঠকে যোগ দেয়ার জন্য উপস্থিত হয়েছিলেন ইসলামী ফ্রন্টের নেতারাও। কিন্তু এ দুটি দলের গঠনতন্ত্রের সঙ্গে ১৪ দলের মূল চেতনার মিল না থাকায় এরা জোটের শরিক হতে পারেনি। পরবর্তীতে দুটি দলকেই নির্বাচনী জোটে শরিক করার বিষয়ে নিশ্চিত করা হয়।

তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা রোববার যুগান্তরকে বলেন, নির্বাচনী জোটে যোগ দেয়া নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ১৪ দলের সঙ্গে তার আলোচনা হয়েছে। তার নির্বাচনী জোটে যোগ দেয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তাকে ঢাকার গুলশান-বনানীর নির্বাচনী আসনে (ঢাকা-১৭) কাজ করতে বলেছেন।

ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের চেয়ারম্যান সৈয়দ বাহাদুর শাহ মুজাদ্দেদী যুগান্তরকে বলেন, তাদের ১৪ দলে যোগ দেয়ার আলোচনা বহুদূর এগিয়ে গিয়েছে। কিন্তু এ আলোচনা চূড়ান্ত রূপ নেয়নি। আগামীতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে নির্বাচনী জোট হলে তার দল তাতে অংশ নিতে পারে বলে ১৪ দলীয় জোটের সিদ্ধান্ত তাকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, ২০০৭ সালে নির্বাচনের যে তারিখ ঘোষিত হয়েছিল তখন তাকে চাঁদপুর-৫ আসন থেকে মনোনয়নও দেয়া হয়। কিন্তু সে নির্বাচন হয়নি। আগামীতে তিনি ঐ আসনটিই চাইবেন।

এদিকে হেফাজতে ইসলামের সঙ্গেও সরকারের এক ধরনের সমাঝোতা রয়েছে বলে একটি সূত্র জানায়। সূত্রমতে, সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে হেফাজতের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা অব্যাহত আছে। এমনকি সম্প্রতি হেফাজতের ইসলামের নায়েবে আমীরের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা করা হয়েছে। আগামী নির্বাচনে হেফাজত এবং তাদের অনুসারী আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দল এবং সংগঠন সরকারের সঙ্গে থাকতে পারে। অবশ্য ইতিমধ্যেই ২০টি আসনে সরকারের সহযেগিতা চেয়ে খসড়া চিঠি প্রস্তুত করেছে ইসলামী ঐক্যজোট।

প্রসঙ্গত, ইসলামী ঐক্যজোট হেফাজত সংশ্লিস্ট নিবন্ধিত একটি রাজনৈতিক দল। এছাড়াও খেলাফত আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও খেলাফত মজলিসের মতো নিবন্ধিত দলগুলোর সঙ্গে হেফাজতের অংশীদারিত্ব রয়েছে। তবে ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও খেলাফত মজলিস বিএনপি জোটের শরিক।

বিএনপি জোট : জোটের পরিধি বাড়ানোর চিন্তাভাবনা চলছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে। সরাসরি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটে যোগ না দিলেও অন্ততপক্ষে যুগপৎ আন্দোলন ও সমঝোতার ভিত্তিতে আগামী নির্বাচনে প্রার্থী দেয়ার চিন্তাভাবনা করছে দলটি। তবে পরিধি বাড়ানোর আগে বর্তমান জোটের ঐক্যের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে দলটি। জোটের শরিক দলগুলোকে সরিয়ে নিতে সরকারের নানা তৎপরতার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই তারা এমন সিদ্ধান্ত নেন। সম্প্রতি জোটের সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে স্পষ্টত তিনি জানিয়ে দেন, আগে জোটের ঐক্য অটুট রাখতে হবে। তিনি জোট নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের জোট থেকে বের করে নিতে নাকি সরকার নানা অফার দিচ্ছে।’ সরকারের এসব টোপে পা না দিয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান তিনি।

সূত্র জানায়, ২০ দলীয় জোটের কয়েকটি শরিক দলের মধ্যে চলছে নানা অস্থিরতা। জোটের প্রধান শরিক জামায়াতে ইসলামী। বিএনপির ওপর জামায়াত ছাড়ার প্রবল চাপ অনেক আগে থেকে থাকলেও বাস্তবে তেমন কোনো প্রতিফলন নেই। এছাড়া ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশ সম্প্রতি জোট থেকে বেরিয়ে যায়। সর্বশেষ লেবার পার্টিও দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। জোটের মধ্যে এসব অস্থিরতা কাটিয়ে কীভাবে ঐক্য আরও অটুট রাখা যায় সে ব্যাপারে সতর্ক বিএনপির হাইকমান্ড।

সূত্র জানায়, ২০ দলীয় জোটের পরিধি বাড়ানোর চেয়ে সরকারবিরোধী ও সমমনা দল নিয়ে নির্বাচনী জোট করার পক্ষেই বেশি জোর দিচ্ছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। জোটের অন্য শরিক দলগুলোর মনোভাবও প্রায় এরকম। এমন পরিস্থিতিতে সমমনা ও সরকারবিরোধী হিসেবে পরিচিত দল ও সংগঠনের সমর্থন আদায়ে নানা পরিকল্পনা নিচ্ছে বিএনপির হাইকমান্ড। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলের দায়িত্বশীল সিনিয়র কয়েক নেতা আওয়ামী লীগ জোটের বাইরে থাকা অন্য দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।

বিভিন্ন সময়ে ওইসব নেতার সঙ্গে একাধিক বৈঠকও করেছেন তারা। বিশেষ করে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম, বি চৌধুরীর বিকল্পধারা, আ স ম আবদুর রবের জেএসডি, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্যসহ কয়েকটি বাম দলের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। এসব দলের সঙ্গে নির্বাচনী জোট বাড়াতে চায় দলটি। প্রয়োজনে এদের মধ্যে কোনো দল জোটে আসতে চাইলেও কোনো আপত্তি থাকবে না। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট দলগুলোর সঙ্গে ভিতরে ভিতরে আলোচনাও চলছে বিএনপির। ভোটে ‘সরকারবিরোধী ঐক্য’ হলে বেশ কয়েকটি আসনও ছাড় দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।

উৎসঃ যুগান্তর

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin