দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণার দিন চট্টগ্রাম নগরের সাতটি মোড়ে অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি। কিন্তু কাজীর দেউড়ির নাসিমন ভবনের দলীয় কার্যালয় ছাড়া কোথাও দেখা যায়নি নেতা-কর্মীদের। ঘোষণা দিয়েও কর্মসূচি পালন করতে না পারায় ক্ষুব্ধ দলের তৃণমূলের নেতারা। তাঁরা এ জন্য দুষছেন নগর কমিটির সভাপতি শাহাদাত হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেমের দ্বন্দ্বকে।
দুর্নীতি মামলার রায়ে গত বৃহস্পতিবার ঢাকার আদালত খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সাজা দেন। এর তিন দিন আগে সোমবার বিএনপির নেতারা ঘোষণা দেন নাসিমন ভবনের দলীয় কার্যালয়, অক্সিজেন মোড়, দেওয়ানহাট, শাহ আমানত সেতু, সিটি গেট, বহদ্দার হাট ও ইপিজেড মোড়ে তাঁদের নেতা-কর্মীরা অবস্থান নেবেন। কার্যত এই কর্মসূচি ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করছেন দলটির তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।
গত বৃহস্পতিবার দলীয় কর্মসূচি সীমাবদ্ধ ছিল নাসিমন ভবনেই। ৩০ জনের মতো নেতা-কর্মী নিয়ে সেখানে অবস্থার নেন সভাপতি শাহাদাত হোসেন। তাও তিনি সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কার্যালয়ে আসেন। বেলা পৌনে দুইটায় পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপের অভিযোগে ২১ নেতা-কর্মীসহ আটক হন। তবে ওই দিন নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম দলীয় কার্যালয়েই আসেননি।
তৃণমূলের নেতা পাঁচটি ওয়ার্ডের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাঁরা বলেন, বেশ কিছু দিন ধরে সভাপতি-সম্পাদকের মধ্য নানা বিষয় নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। সভাপতি সোমবার কর্মসূচি দিলেও তিন দিন পর বৃহস্পতিবার এসে সাধারণ সম্পাদক বলছেন তিনি কিছু জানেন না। ফলে প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও তাঁরা মাঠে নামতে পারেননি। কারণ, তাঁরা সমন্বিত কোনো সিদ্ধান্ত পাননি।
সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেমের অনুসারীদের অভিযোগ, কর্মসূচি নিয়ে সভাপতি শাহাদাত হোসেন সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে পরামর্শ করেননি। ফলে কর্মসূচি ব্যর্থ হয়েছে। সভাপতির অনুসারীরা এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, রায় ঘোষণার তিন-চার দিন আগে থেকে সাধারণ সম্পাদক মুঠোফোন বন্ধ করে দেন। তাঁকে খুঁজে বের করা কঠিন হয়ে পড়ে। এ জন্য নগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদের নাসিমন ভবনসহ সাতটি স্থানে অবস্থান করার দায়িত্ব বণ্টন করে দেন।
সভাপতির সঙ্গে দ্বন্দ্ব প্রসঙ্গে নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কর্মসূচি নিয়ে কেউ আমার সঙ্গে পরামর্শ করেনি। তবুও আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে থাকার চেষ্টা করেছি।’
আবুল হাশেম দাবি করেন, তিনি বৃহস্পতিবার দলীয় কার্যালয়ে না থাকলেও রেয়াজউদ্দিন বাজার, এনায়েত বাজার ও বিআরটিসির অলিগলিতে বিএনপির পাঁচ হাজারের নেতা-কর্মী প্রস্তুত ছিলেন। ওই দিন দুপুরের দিকে নাসিমন ভবনের উদ্দেশে মিছিল বের করা হলে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ঘটনাস্থল থেকে বিএনপির দুই কর্মীকে গ্রেপ্তার করে।
সভাপতির অনুসারী নগর বিএনপির সাংগঠনিক মো. কামরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য সঠিক নয়। সভাপতি শাহাদাত হোসেন তাঁর সঙ্গে পরামর্শ করে কর্মসূচি দিয়েছিলেন। কিন্তু নেতা-কর্মীরা কেন নাসিমন ভবনসহ আরও ছয়টি মোড়ে জড়ো হননি তা তিনি জানেন না।
দুই নেতার দ্বন্দ্ব প্রসঙ্গে নগর বিএনপির জ্যেষ্ঠ সভাপতি আবু সুফিয়ান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সমন্বয়হীনতা বিষয়টি এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, হাজার হাজার নেতা-কর্মী নগরের অলিগলিতে প্রস্তুত ছিলেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের যুদ্ধংদেহী মনোভাবের কারণে নাসিমন ভবন চত্বর ছাড়া বাকি ছয়টি মোড়ে জড়ো হতে পারেননি তাঁরা।