দুই দলকে সমঝোতায় আনতে চেষ্টা করছে সুশীল সমাজ

বাংলাদেশের সুশীল সমাজের একাংশ নির্বাচনকালীন সরকারের একটি রূপরেখা তৈরি করছে। অবাধ, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক সমঝোতার মধ্যস্থতাও করতে চায়। প্রকাশ্যে এই উদ্যোগের উদ্যোক্তা হিসেবে থাকছেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের ড. বদিউল আলম মজুমদার এবং সিপিডির সাবেক নির্বাহী পরিচালক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

তাঁরা মনে করছেন, আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ না হলে গণতন্ত্র বিপন্ন হবে। সুশীলদের এই অংশ মনে করছেন, ‘সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অর্থবহ নির্বাচনের প্রধান শর্ত।’সুশীল সমাজের এই অংশ দাবি করছেন যে, তারা আওয়ামী লীগ বা বিএনপির কারও পক্ষেই নন।

তাঁরা জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারের সুরক্ষা চান। এজন্য তাঁরা আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি ঘারানার বাইরের বুদ্ধিজীবী এবং পেশাজীবীদের নিয়ে একটি প্লাটফরম তৈরির কাজ শুরু করেছেন। ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘নাগরিকদের একটি প্লাটফরম থেকে আমরা সমঝোতার চেষ্টা চালাব। আমরা মনে করি সমঝোতা ও সংলাপের কোনো বিকল্প নেই।’

একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, টিআইবির চেয়ারপারসন ও সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, সাবেক উপদেষ্টা গীতি আরা সাফিয়া চৌধুরী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক সহ অন্তত ১০০ জন ইতিমধ্যে এরকম উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হতে রাজি হয়েছেন।

ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, ‘আমরা আরেকটি ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন চাই না। আমরা চাই সকল দলের অংশ গ্রহণে জনগণের স্বাধীন মত প্রকাশ। এজন্য যে যার মতো করে চেষ্টা করতেই পারে।’

এই উদ্যোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তি বলেছেন, কেউ যেন তাদের আওয়ামী লীগ, বিএনপির লেবেল না দিতে পারে সেজন্য এমন সব ব্যক্তিত্বদের নেওয়া হবে যাদের নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই উদ্যোক্তাদের একজন বলেছেন, ‘আমরা প্রথমে চাইবো সরকারই রাজনৈতিক সমঝোতার উদ্যোগ নেবে। এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করবে যেন সব দল অংশ গ্রহণ করে। কিন্তু সেটা যদি না হয়, তাহলে আমরাই দুপক্ষের সঙ্গে কথা বলে একটা সমঝোতার রাস্তা তৈরি করব।’

ড. দেব প্রিয় বলেছেন, ‘আমাদের কোনো রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ নেই। এর মধ্যে কোনো মতলব খোঁজারও সুযোগ নেই। আমরা চাই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে দেশ সুশাসনের পথে থাকুক।’

তবে, এই উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমান সংবিধানের আওতায় তারা একটি রাজনৈতিক সমাধান খুঁজছেন। সমাধানটা কি? এর উত্তরে একজন শিক্ষাবিদ বলেন, ‘আমরা একটা সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব তৈরির কথা ভাবছি। যেটা হবে আলোচনার ভিত্তি। সেই সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব চূড়ান্ত নয়।

তবে এটা ঠিক, আমাদের প্রস্তাবে নির্বাচনকালীন সরকারে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ব্যাপক হ্রাস করা হবে। খুব শিগগিররই আমাদের রূপরেখা প্রকাশ করা হবে। কোনো চাপ প্রয়োগ নয়, আমরা মিলেমিশে একটা জায়গায় আসতে চাই।

কিন্তু নির্বাচনের আগে সুশীল সমাজের তৎপরতাকে প্রধান দুই দলই সন্দেহের চোখে দেখছেন। তারা মনে করছেন, এটার পেছনে অন্য উদ্দেশ্য আছে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকদের এই উদ্যোগে পূর্ণ সমর্থন আছে বলে জানা গেছে।

বাংলা ইনসাইডার

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin