bnp-flag

দাবি আদায়ে রাজপথে থাকবে বিএনপিও

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। তবে দলটি এখনও নির্বাচনকালীন সহায়ক বা নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচনে অংশ না নেয়ার পক্ষে অনড়। বিএনপির নীতিনির্ধারকরা জানান, বর্তমান সরকারের অধীন নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল তারা।

সহায়ক বা তত্ত্বাবধায়ক- যে নামেই ডাকা হোক, নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সরকার থাকতে হবে। কোনো দলীয় সরকার থাকতে পারবে না।

নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারই সহায়ক সরকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি বাস্তবায়নে দলের সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছে দলটি। এ লক্ষ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে গঠিত অর্ধশত টিম তৃণমূল সফর করছে।

এছাড়া আগামী নির্বাচন ও আন্দোলনের ব্যাপারে হাইকমান্ডের দিকনির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। তবে সংকট সমাধানে সংলাপের ওপর জোর দেবে দলটি। এ লক্ষ্যে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখাও যথাসময়ে দেয়া হতে পারে। সরকার যদি শেষ পর্যন্ত দাবি না মানে বা সংলাপের উদ্যোগ না নেয়, তাহলে রাজপথে ফয়সালা করার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা রয়েছে দলটির হাইকমান্ডের।

জানা গেছে, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করছে দলটি। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে রাজপথের আন্দোলনকে প্রাধান্য দিয়েই করা হচ্ছে এসব পরিকল্পনা। দলের সিনিয়র নেতাসহ জাতীয়তাবাদী বুদ্ধিজীবীদের পরামর্শ নিচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করার ওপর তারা জোর দেন।

নির্বাচনকালীন সরকারের দাবিতে জনমত তৈরি এবং নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে বিভাগীয় ও জেলা সফরে বের হওয়ার পরিকল্পনা করছেন খালেদা জিয়া। দলের নেতাকর্মীর পাশাপাশি সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ এমনকি সাধারণ ভোটারদের এ দাবির প্রতি ঐক্যবদ্ধ করার চিন্তাভাবনা রয়েছে।

বিশেষ করে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে যেসব দল সহায়ক বা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেয়ার দাবি জানিয়েছে, ওইসব দলের সঙ্গে ঐক্য করার বিষয়টি ভাবা হচ্ছে। নির্দলীয় সরকারের দাবিতে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া সম্ভব হলে এতে রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি জনগণের সমর্থনও পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা।

সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের মতো নির্বাচন বর্জন করবে না দলটি। যে কোনো পরিস্থিতিতে নির্বাচনে যেতে চান দলটির নেতাকর্মীরা। তবে সর্বাত্মক চেষ্টা থাকবে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ের। এ লক্ষ্যে সরকারকে চাপে রাখার কৌশলে থাকবে বিএনপি।

একই সঙ্গে নিজেদের দাবির পক্ষে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় জনমত আদায়ের চেষ্টাও চালানো হবে। বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, এবার বিএনপি জোটকে বাইরে রেখে সরকারের একতরফা নির্বাচন করা সহজ হবে না। কারণ বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলো এবার একতরফা নির্বাচন হোক, তা কোনো মতেই চাচ্ছে না।

সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে সরকারের ওপর নানা মহলের চাপ রয়েছে। তাই বিএনপিকে নিয়েই নির্বাচন করতে হবে- এমনটা ধারণা দলটির নীতিনির্ধারকদের।

সংশ্লিষ্টরা জানান, নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবিতে রাজপথে সক্রিয় হলেও আপাতত সংঘাত-সংঘর্ষে যাবে না দলটি। সভা-সমাবেশ ও জনমত তৈরির দিকেই গুরুত্ব দেয়া হবে। যৌক্তিক দাবিতে চলমান আন্দোলনে তৃতীয় পক্ষ যাতে ফায়দা নিতে না পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকবে দলটি।

৫ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচনের বর্ষপূর্তিকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা সৃষ্টি হলেও আপাতত কোনো ধরনের সংঘর্ষে যাবে না তারা। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ওইদিন সমাবেশের অনুমতি না দিলেও পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করেনি দলটি। সমাবেশের পরিবর্তে রাজধানীতে কালো পতাকা মিছিল করার চিন্তা রয়েছে।

সূত্র জানায়, সরকারের শেষ সময়ে বিভিন্ন পেশাজীবীরা নানা দাবিতে রাজপথে সক্রিয় রয়েছে বা থাকবে। এসব পেশাজীবীর সমর্থন পেতে চেষ্টা চালাবে দলটি। তাদের দাবির প্রতি সমর্থন এবং ভবিষ্যতে সরকার গঠন করলে তা পূরণের আশ্বাসও দেয়া হবে। এরই মধ্যে ননএমপিও শিক্ষকদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে বিএনপি।

রোববার এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, শিক্ষকদের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনের প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।

জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিটি শুধু আমাদের একার নয়। দেশের বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষও চান একটি অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই কেবল সেরকম একটা নির্বাচন সম্ভব।

তিনি বলেন, এজন্যই আমরা বারবার সংলাপের কথা বলছি। কিন্তু সরকার সেদিকে নজর দিচ্ছে না। উল্টো বিএনপিকে বাদ দিয়ে একাদশ নির্বাচন করার চক্রান্ত করছে।

সরকারের এ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ফখরুল বলেন, নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করার জন্য সরকারকে বাধ্য করতে হবে। নতুন বছরে এ দাবি আদায়ে যা করা প্রয়োজন, গণতান্ত্রিক দল হিসেবে বিএনপি তা করবে বলে জানান তিনি।

উৎসঃ   jugantor

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin