বিএনপির চেয়ারপারসন কারাবন্দী খালেদা জিয়ার সঙ্গে দীর্ঘদিন পর দেখা করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তাঁদের একান্ত সাক্ষাতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি ও ২০-দলীয় জোটের ঐক্য অটুট রাখা এবং বৃহত্তর ঐক্য গড়ার বিষয়ে কথা হয়েছে।
গতকাল শনিবার বিকেল চারটার দিকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একা পুরান ঢাকার সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন। বেরিয়ে এসে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর সন্ধ্যায় গুলশানের কার্যালয়ে চেয়ারপারসনের সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে তিনি স্থায়ী কমিটির সদস্যদের অবহিত করেন। বৈঠকে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও দলীয় নেতা খন্দকার মাহবুব হোসেন, জয়নুল আবদীন, এ জে মোহাম্মদ আলীসহ কয়েকজন আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া বিএনপির ঐক্য ও ২০-দলীয় জোটের ঐক্য ধরে রাখার ওপর জোর দিয়েছেন। পাশাপাশি একটি বৃহত্তর ঐক্য গড়ার যে প্রক্রিয়া চলছে, তা যথাসম্ভব দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে গুরুত্ব আরোপ করেছেন। আন্দোলন ও নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিতে বলেছেন দলের চেয়ারপারসন। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আগামী ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নতুন করে কর্মসূচি দেওয়ার কথা বলেছেন। তাতে খালেদা জিয়া সম্মতি দিয়েছেন।
যদিও বিএনপির মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়ার সঙ্গে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কোনো বিষয়ে তাঁর আলোচনা হয়নি।
বিএনপির মহাসচিব কারা ফটকে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘দেশবাসীর উদ্দেশে ম্যাডাম বলেছেন, তাঁরা যেন সজাগ থাকেন, সচেতন থাকেন। গণতন্ত্রের জন্য যে সংগ্রাম চলছে, সেই সংগ্রাম যেন অব্যাহত রাখেন তাঁরা।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘ম্যাডাম শারীরিকভাবে বেশ অসুস্থ। আমার কাছে মনে হয়েছে, তিনি ব্যথায় খুব কষ্ট পাচ্ছেন। তবে ওনার মনোবল শক্ত আছে। উনি দেশবাসীকেও মনোবল দৃঢ় রাখতে বলেছেন।’
ঈদুল আজহার দুই দিন পর গতকাল বিকেলে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ঈদের দিন সাক্ষাতের অনুমতি চেয়ে ১৩ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ১৩ জন নেতার নামের তালিকা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ঈদের দিন তাঁদের সাক্ষাতের অনুমতি দেওয়া হয়নি। গতকাল দুপুরের দিকে কারা কর্তৃপক্ষ মির্জা ফখরুল ইসলামকে সাক্ষাতের অনুমতি পাওয়ার কথা জানায়।
বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, খবর পেয়ে মহাসচিব লন্ডনে অবস্থানরত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও স্থায়ী কমিটির সদস্যদের জানান। পরে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও স্থায়ী কমিটির সদস্যদের পরামর্শে তিনি কারাগারে যান। প্রায় এক ঘণ্টা তাঁরা কথা বলেন। এর আগে গত ৬ এপ্রিল তিনি একা সাক্ষাৎ করেছিলেন।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, দীর্ঘদিন পর সাক্ষাতে অসুস্থ খালেদা জিয়াকে দেখে আবেগপ্রবণ অবস্থায় তিনি সালাম ও কুশল বিনিময় করেন। এরপর তাঁর শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন। ফখরুল বলেন, ‘ম্যাডামকে এভাবে দেখব, চিন্তাই করতে পারিনি। এটা আমার জন্য বেদনার। ঈদের দিন বাসার খাবারের প্রতীক্ষায় তিনি দীর্ঘ সময় কোনো খাবার খাননি। পরে আইজি প্রিজনসের অনুরোধে সন্ধ্যায় খাবার খেয়েছেন।’
খালেদা জিয়ার সঙ্গে মহাসচিবের বৈঠকের পর স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি নিয়ে আমরা বসেছিলাম। এ ছাড়া মহাসচিবকে হঠাৎ করে ম্যাডামের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি দিল। তিনি দেখা করে এসে আমাদের ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে ব্রিফ করলেন। আমরা জানলাম, তিনি অসুস্থ, তাঁর শারীরিক অবস্থা ভালো নয়।’