আগামী বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বিতীয় বারের মতো রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। আর কাল মঙ্গলবার মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে নির্বাচনের সবধরনের প্রচার-প্রচারণা।
প্রথম বারের মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে এসে এখন দম ফেলারও ফুরসত নেই প্রার্থী ও নেতা-কর্মীসহ সমর্থকদের। ভোটের মাঠে প্রধান তিনটি রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের দৌড়ঝাঁপ এখন বাড়তি উত্তাপ ছড়াচ্ছে নগরজুড়ে।
নিজ দলের প্রার্থীর জয় নিশ্চিত করতে চষে বেড়াচ্ছেন অলি-গলি থেকে মেঠোপথ, রাজপথে। একদল উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার কথা বলছেন তো অন্যদল চাচ্ছে পরিবর্তন। আবার শঙ্কা-আশঙ্কার মধ্যেও দুর্গ ভাঙার লড়াইয়ে হাল ছাড়তে চাইছে না কেউ কেউ।
এদিকে উদ্বেগ-উৎকষ্ঠা, অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ আর প্রার্থীদের নানা প্রতিশ্রিতির সঙ্গে আগামীর নগর পিতা নির্বাচনের হিসেবটাও যেন চলছে সমানতালে। তবে সব শঙ্কা-আশঙ্কা দূর করে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতির কথাও বলছে কমিশন।
রসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সরফুদ্দিন আহামেদ ঝন্টুর সমর্থনে বুধবার বিকেল থেকে প্রচারে নামে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহাম্মেদ হোসেন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন, কৃষক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বিশ্বনাথ সরকার বিটু ও ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়ে ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। এরইমধ্যে রোববার থেকে কেন্দ্রীয় যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুকসহ দলের শীর্ষ স্থানীয় ককেয়জন নেতাও যোগ দিয়েছেন নির্বাচনী প্রচারণায়।
গণসংযোগকালে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহাম্মেদ হোসেন উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকা মার্কার পক্ষে ভোট চান।
অপরদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেলসহ একাধিক নেতা গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা থাকলেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকতে চায় বিএনপি। দলটির শীর্ষ নেতা জয়নাল আবেদীন ফারুক বলেন, ম্যজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হলে কেউ আচরণবিধি লঙ্ঘন করতে পারতো না।। বিরোধী পক্ষ নির্বাচনবিধি অমান্য করলেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে নির্বাচন কমিশন। বিএনপির পক্ষ থেকে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি জানান তিনি।
এছাড়াও বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ রংপুরে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেবেন বলে দলীয় একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
প্রধান দুই দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে মাঠ যখন উত্তপ্ত তখন পিছিয়ে নেই জাতীয় পার্টিও। রোববার সকাল থেকে দলের কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে প্রচারণা শুরু করেছেন।
এসয় তিনি বলেন, আগামী ২১ ডিসেম্বর গোপন ব্যালোটের মাধ্যমে আবারো প্রমাণিত হবে রংপুর লাঙলের দুর্গ। জনগণের স্বতস্ফুর্ত রায়ে এবারে লাঙলের জয় নিশ্চিত।
নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ না নিলেও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা রংপুরে অবস্থান করছেন। এছাড়া পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ আজ রংপুরে আসবেন বলেও গুঞ্জন উঠেছে।
২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছিল রংপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রথম ভোট। ওইসময় দলীয় প্রতীকে ভোট না হলেও সরফুদ্দিন আহম্মেদ ঝন্টু মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে এক লাখ ছয় হাজার ২৫৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি এবার নৌকা প্রতীক নিয়ে মাঠে লড়ছেন।
ওই নির্বাচনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদের নির্দেশ অমান্য করে স্রোতের বিপরীতে গিয়ে হাঁস প্রতীক নিয়ে মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা পেয়েছিলেন ৭৭ হাজার ৮০৫ ভোট। এবারের নির্বাচনে তিনি জাপার মনোনীত প্রার্থী হয়ে লাঙল প্রতীক নিয়ে লড়ছেন।
এছাড়া বিএনপির কাওছার জামান বাবলা প্রথম বারের ওই নির্বাচনের আগের দিন রাতে ভোট বর্জনের পরও ২১ হাজার ২৩৫ ভোট পেয়েছিলেন।
হেভিওয়টে ওই তিন প্রার্থী ছাড়াও এবারের নির্বাচনে লড়ছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের এটিএম গোলাম মোস্তফা বাবু, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি সেলিম আখতার, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) থেকে আব্দুল কুদ্দুস ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টি থেকে সদ্য বহিষ্কার হওয়া এরশাদের ভাতিজা হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ।
উৎসঃ জাগোনিউজ