‘তুলে নিয়ে গিয়ে প্রথমে অস্বীকার করার পর দরকষাকষি শুরু হয়’

‘যখন ইচ্ছা হচ্ছে বাসা থেকে, রাস্তা থেকে, হাটবাজার থেকে, দলীয় কার্যালয় থেকে তাদের তুলে নিয়ে গিয়ে প্রথমে অস্বীকার করার পর দরকষাকষি শুরু হয়। বলা হয় বেশী টাকা দিলে হালকা মামলা দেয়া হবে, আর কম টাকা দিলে কঠিন মামলা দেয়া হবে। আর যদি অর্থ দিতে অক্ষম হয় তাহলে শুরু হয় অমানবিক শারীরিক নির্যাতন’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি’র জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

শুক্রবার সকালে দলটির নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, নির্বাহী কমিটির কর্মকর্তা ও সদস্যরা নয়াপল্টনস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পরিচয় পত্র সংগ্রহ করতে এসে অনেকেই গ্রেপ্তার হচ্ছেন। বাসা থেকেও নেতৃবৃন্দরা গ্রেপ্তার হচ্ছেন। বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে গ্রেপ্তার করা যেন আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর পুতুল-খেলা। এটিই হচ্ছে আওয়ামী লীগের গণতন্ত্র ও শাসনের নমূনা। গুন্ডামির এই নবসংস্করণ ভোটারবিহীন সরকারের দুঃশাসন টিকিয়ে রাখার ইঙ্গিতবহ। গণতন্ত্রের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করার সহিংস আগ্রাসী পদক্ষেপ।

তিনি বলেন, গত চারদিনে ২৭৫ জন বিএনপির নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এখনও নেতাকর্মীদের বাসায় অভিযান চলছে। অথচ প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্রের কথা বলেন। কী অদ্ভুত তার (প্রধানমন্ত্রী) গণতন্ত্র! রাষ্ট্রবিজ্ঞান বইয়ের নতুন অধ্যায়।

সরকারের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, আমরা এমন এক অন্ধকারাচ্ছন্ন দু:সময়ের মধ্যে বাস করছি যে, যখন স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মকান্ড করতে যেয়েও বিএনপি নেতাকর্মীরা সরকারী নিষ্পেষণের শিকার হচ্ছেন। বিপদ, শঙ্কা, আতঙ্ক ও ভয়ের মধ্যে তাদেরকে যাপন করতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, গতকাল দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মশিউর রহমান বিপ্লব পরিচয় পত্র সংগ্রহ করে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিপ্লবের হার্টে অনেকগুলো রিং বসানো আছে। কিছুক্ষণ আগে আমরা সংবাদ পেলাম হৃদযন্ত্রে প্রচন্ড বেদনা অনুভব করলে তাকে হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। কিন্তু আইন শৃঙ্খলা বাহিনী বিএনপি নেতাকর্মীদের শারীরিক অসুস্থতা এসব কিছুই বিবেচনায় না নিয়ে আদিম প্রতিশোধ পরায়ণতার মনোবৃত্তি নিয়ে নির্লজ্জ বেপরোয়াভাবে কাজ করছে।

বিএনপি’র এই সিনিয়র নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশন সরকারের পার্টনার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হোসেইন মোহাম্মদ এরশাদ আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। আর বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জাল নথির ওপর ভিত্তি করে ভুয়া ও মিথ্যা মামলায় হয়রানির মাধ্যমে জুলুম করা হচ্ছে প্রায় প্রতিদিন। সরকার পরিকল্পিতভাবে ভিন্ন কৌশলে আরেকটি বিতর্কিত নির্বাচনের দিকে এগুচ্ছে।

রিজভী বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার ওপর বিচারের নামে অবিচারের যে কালো ছায়া বিস্তার লাভ করানো হয়েছে তাতে দেশবাসী ক্ষুদ্ধ। প্রহসনের বিচার নিয়ে মানুষের ক্ষোভ ভষ্মাচ্ছাদিত বহ্নির মতো ধিকিধিকি জ্বলছে। মিথ্যা মামলার বিচার নিয়ে কোন নেতিবাচক সিদ্ধান্ত হলে জনরোষ চরম প্রতিবাদের শক্তিতে রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়বে।

এসময় রিজভী আরো বলেন, আগামীকাল হোটেল লা মেরিডিয়ানে সকাল ১০টা থেকে বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। ইতোমধ্যে নির্বাহী কমিটির সভার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সভাস্থলে নির্বাহী কমিটির কর্মকর্তা ও সদস্যদের রেজিস্ট্রেশন শুরু হবে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে।

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin