তিন জোটের যুগপৎ আন্দোলন আসছে

৯০’ এ স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের আদলে তিন জোট গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিন জোট নূন্যতম ইস্যুতে অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন করবে। সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ নাগাদ অভিন্ন কর্মসূচিতে আন্দোলন শুরুর পরিকল্পনা নিয়ে আলাপ চলছে। এরকম একটি রাজনৈতিক ঐক্যের ফর্মুলা নিয়ে কাজ করছে দেশের বিরোধী দলগুলো।

বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দল ইতিমধ্যেই রয়েছে। সিপিবি, বাসদ ইত্যাদি দল নিয়ে রয়েছে বাম গণতান্ত্রিক মোর্চা। এখন যুক্তফ্রন্ট এবং গণফোরাম মিলে গঠন করছে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া।

একাধিক সূত্র বলছে, বিএনপি থেকে তিনটি জোটকে আলাদা অবস্থান থেকে অভিন্ন কর্মসূচিতে যুগপৎ আন্দোলনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এর ফলে, নানা রকম শর্ত এবং প্রশ্নের উদ্ভব হবে না। এই তিন জোট ইভিএমকে কেন্দ্র করে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করার লক্ষ্যে কাজ করছে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এরশাদের পতনের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ৮ দল, বিএনপির নেতৃত্বে ৭ দল এবং ওয়ার্কার্স পার্টি, বাসদ, জাসদ সমন্বয়ে ৫ দলীয় বাম জোট গঠিত হয়েছিল। ঐ সময় জামাত তিন জোটের কোনটিতে না থাকলেও তিন জোটের কর্মসূচি হুবহু অনুসরণ করেছিল।

৯০’ এ স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের শেষ ভাগে তিন জোট ১৯ দফার একটি রূপরেখা প্রণয়ন করেছিল। ঐ রূপরেখায় বলা হয়েছিল, ক্ষমতায় যারাই যাক তাঁরা ঐ রূপরেখা অনুযায়ী কাজ করবে। কিন্তু বিএনপি ৯১’ এর নির্বাচনে জয়ী হয়ে ঐ রূপরেখা অগ্রাহ্য করে।

এবার অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য একই ভাবে তিন জোট ঐক্যবদ্ধ হবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। অধ্যাপক ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী এবং ড. কামাল হোসেনের আকাঙ্ক্ষা ছিল সব রাজনৈতিক দলকে সরকার বিরোধী এক মঞ্চে শামিল করা। কিন্তু বিএনপি জামাতকে বাদ দিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে রাজি না। আবার বাম গণতান্ত্রিক মোর্চা তাদের ভাষায় ‘সাম্রাজ্যবাদের দালালদের ক্রীড়ানক হতে রাজি নয়।’

এ রকম বাস্তবতায় শুধু নূন্যতম নির্বাচন ইস্যুতে আলাদা আলাদা প্ল্যাটফর্ম থেকে যুগপৎ আন্দোলন করার প্রস্তাব নিয়ে কথা চলছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে। গণফোরাম নেতা অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেছেন, ‘আমাদের প্রথম লক্ষ্য হলো, একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করা। এ লক্ষ্যে আমরা এক সঙ্গে আন্দোলন করতে চাই।’

তিনি বলেন, ‘এক মঞ্চ হলে ভালো হয়, তা না হলে যে যার অবস্থান থেকে আমরা অভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে আন্দোলন করতে পারি।’ বাম গণতান্ত্রিক মোর্চার নেতা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে আমরা ইতিমধ্যেই আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়েছি। এই ইস্যুতে আমরা যুগপৎ আন্দোলন করতে পারি। এ নিয়ে কথা বার্তা হচ্ছে।

যুক্তফ্রন্ট বিএনপিকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে আগ্রহী। কিন্তু জামাতকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে বিকল্প ধারার আপত্তি রয়েছে। বিএনপিও নির্বাচনের হিসেব-নিকেশে জামাতকে বাদ দিতে রাজি নয়। বিএনপি নেতারা বৈঠক করে যুগপৎ আন্দোলনের ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেছেন, ‘আমরা ২০ দলকে ভাঙ্গতে রাজি নই। ২০ দল থাকবে, পাশাপাশি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আমরা বৃহত্তর একটি প্ল্যাটফর্ম করব।’

জানা গেছে, ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে খুব শিগগিরই বাম ফ্রন্টের একটি বৈঠক হবার কথা আছে। বিএনপির সঙ্গেও ড. কামাল হোসেন, অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর জোটের বৈঠক হবার কথা রয়েছে। গণফোরাম নেতা সুব্রত চৌধুরী বলেছেন, ‘সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের রূপরেখা স্পষ্ট হবে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেছেন, ‘সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় সপ্তাহে আমরা আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে জনগণের সামনে যেতে পারবো বলে আশা করছি।’

দেশের এই বিরোধী দলগুলো অক্টোবর-নভেম্বরে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে একটি বড় আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করছে।

বাংলা ইনসাইডার

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin