২৫ মার্চ ছয় মাসের জন্য মুক্তি পেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এখন তিনি তার বাড়িতেই অবস্থান করছেন। তার হোম কোয়ারেন্টাইনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। বলা হচ্ছে , বেগম জিয়ার বাড়িতেই চিকিৎসা নেওয়া হচ্ছে।
দলীয় কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে একরকম গুটিয়ে নিয়েছেন বেগম জিয়া, পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন। তার পছন্দের চিকিৎসক টিম নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন।
বিএনপির অনেক নেতাই আশা করেছিলেন, বেগম খালেদা জিয়া মুক্ত হওয়ার পর সীমিত আকারে হলেও তিনি দলের কর্মকাণ্ডে নিজেকে যুক্ত করবেন। বিশেষ করে বিএনপিতে যারা তারেক বিরোধী হিসেবে পরিচিত , যারা মনে করেন তারেকের কারণেই বিএনপির এই হাল বা দুদর্দশাগ্রস্থ অবস্থায়।
তারা আশায় বুক বেধে ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া আসলে তারেকের কর্তৃত্ব খর্ব হবে এবং বিএনপিকেও চাঙ্গা করা যাবে। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি পাওয়ার প্রায় তিন সপ্তাহ পরেও এখন পর্যন্ত তিনি দলীয় কোন কর্মকাণ্ডে মনোনিবেশ করেননি।
শুধুমাত্র দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে দুই তিনবার টেলিফোনে সংক্ষিপ্ত আলাপচারিতা হয়েছে। বিএনপির অন্যকোন নেতার সঙ্গে তিনি দেখা সাক্ষাত তো দূরের কথা, টেলিফোনে আলাপ আলোচনাও করেননি। যে কারণে বিএনপিতে এখনো তারেক রাজত্ব চলছে।
বিএনপির একজন নেতা বলছেন, তারেক জিয়া এখনো বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। খালেদা জিয়া এখনো বিএনপির নেতৃত্ব বুঝে নেননি। তবে বিএনপির অন্যরা বলছেন যে, গত ২৫ মাস কারাগারে অন্তরীণ থাকার কারণে বেগম খালেদা জিয়া আসলে বিএনপির কর্তৃত্বই হারিয়েছে।
বিএনপি এখন পুরোপুরিভাবে তারেকের নিয়ন্ত্রণে, তারেকের কথাই বিএনপিতে শেষ কথা্। আর এই পরাজয় বেগম খালেদা জিয়াকে মেনে নিতে হয়েছে। বিএনপির মহাসমচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কখনোই বেগম খালেদা জিয়ার আস্থাভাজন বা বিশ্বস্ত ছিলেন না। তারেকের প্রতি তার অনুগত্য ছিল সর্বজন স্বীকৃত।
এ কারণেই দলে অজনপ্রিয় এবং দলের মধ্যে তাকে নিয়ে অনেক বিতর্ক থাকার পরেও শুধুমাত্র তারেকের বদান্যতা এবং নেক নজরের কারণে তিনি এখনো বিএনপির মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বেগম খালেদা জিয়া নিজেও কারাগারে থাকা অবস্থায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দায়িত্ব থেকে সরানোর জন্য দু দফা উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
প্রশ্ন উঠেছে তারেকের কাছে বিএনপির চাবি কেন? তার শক্তিটা কি? এর উত্তরে বিএনপির একজন নেতা বলেছেন, তারেকের মূল শক্তি হলো তৃণমূল। তূণমূলের বিভিন্ন অঙ্গসহযোগী সংগঠনগুলো প্রায় নব্বই শতাংশ তারেকের অনুগত। তারা নিয়মিত তারেকের সঙ্গে যোগাযোগ করে।
টেলিফোন, স্কাইপিতে তাদেরকে নির্দেশনা দেন। বিএনপিতে তারেক জিয়াই জিয়া পরিবারের প্রথম নেতা যার সঙ্গে তৃণমূলের নেতারা সরাসরি যোগাযোগ রাখতে পারে। জিয়াউর রহমানের সঙ্গে কখনোই তৃণমূলের নেতারা সরাসরি যোগাযোগ করতে পারতেন না। খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রেও একই অবস্থা বিরাজ করেছে। বেগম খালেদা জিয়া অনুগত কয়েকজনকে পাশে নিয়ে দল চালাতেন।
তারেক জিয়ার বিষয়টি অন্যরকম। তারেক জিয়া তৃণমূলের অনেক ছোট নেতার সঙ্গেও কথা বলেন, তার খোঁজখবর নেন ও নির্দেশনা দেন। যার ফলে দুটি জিনিস হয়েছে। প্রথমত; ওই তৃণমূলের কর্মী মনে করছে তারেক তার নেতা। তার সঙ্গে সবকিছু করতে তারা প্রস্তুত। দ্বিতীয়ত; সে দলের শৃঙ্খলা বা দেশে থাকা কেন্দ্রীয় নেতাদের মানছে না।
আর এই ডিভাইড অ্যান্ড রুল কর্তৃত্বেই তারেক বিএনপির কর্তৃত্ব নিয়েছেন। আবার কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মধ্যেও তারেকের একটা বড় অংশ রয়েছে, একটা বড় সমর্থক গোষ্ঠী রওয়ছে যারা তারেক কর্তৃক মনোনিত ও লালিত পালিত।
বিএনপিতে বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষালম্বী বা বেগম জিয়ার অংশ ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে উঠছে। দলের কিছু সিনিয়র নেতা ছাড়া কেউই খালেদা জিয়ার নেতৃত্বের অন্ধ অনুসারী নন। যে কারণে বেগম জিয়া মুক্তি পেলেও এখন পর্যন্ত বিএনপির চাবি বুঝে পাননি। বিএনপির চাবি এখনো তারেকের কাছে। বেগম খালেদা জিয়া হয়তো রাজনৈতিক জীবনে হয়তো দলে একজন আলংকারিক প্রধান হিসেবেই থাকবেন। মূল নেতৃত্বের চাবিকাঠি থাকবে তারেকের কাছেই।
বাংলা ইনসাইডার