ঢাকা উত্তর সিটিতে মেয়র পদে নির্বাচন করবে জামায়াত

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র পদে উপনির্বাচনে অংশ নেয়ার কথা ভাবছে দেশের সর্ববৃহৎ ইসলামী দল জামায়াতে ইসলামী।

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সমীকরণকে সামনে রেখে দলটি এ চিন্তা-ভাবনা করছে। একই চিন্তা থেকে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়রপদে মহানগর আমির এহসানুল মাহবুব জুবায়েরের প্রার্থিতা এরই মধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে।

এখন রাজনীতিতে কোনঠাসা দলটি খোদ রাজধানীতে নিজেদের শক্তিশালী ভোটব্যাংকের কথা জানান দিতে ডিএনসিসি নির্বাচনে অংশ নেয়ার কথা ভাবছে।

এক্ষেত্রে ঢাকা মহানগরী উত্তর জামায়াতের আমির সেলিম উদ্দিন ও সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমের প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে নতুন যুক্ত হওয়া ৩৬টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও ১২টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডেও প্রার্থী দেবে দলটি।

জামায়াতে ইসলামীর নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩০ নভেম্বর ডিএনসিসির আওয়ামী লীগ দলীয় মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যু হয়।

এরপর গত ১ ডিসেম্বর থেকে মেয়রপদ শূন্য ঘোষণা করা হয়। রবিবার নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, আগামী ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে ডিএনসিসির মেয়র পদে উপনির্বাচন হবে। জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে এই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে।

জামায়াত সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলা ও বৈরি পরিস্থিতির কোণঠাসা হয়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনীতিতে নিজেদের শক্তিশালী অবস্থানের নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে দলের হাইকমান্ডের।

এই নীতির আলোকে আওয়ামী লীগের দুই মেয়াদেই ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও বিভিন্ন সিটি করপোরেশনে অংশ নিয়েছেন দলটির মনোনীত প্রার্থীরা।

কিন্তু বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়নি জামায়াত।

তবে আগামী বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবেন দলটি। এক্ষেত্রে জোটগতভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিলেও এ নির্বাচনকে ঘিরে দলটির কিছু কৌশলও রয়েছে।

এরমধ্যে যেসব আসনে অতীতে জামায়াত প্রার্থীরা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন বা দ্বিতীয় স্থানে গিয়ে অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন এমন সব আসনেই দলটির প্রার্থী থাকবে।

পাশাপাশি সরকার বিরোধী আন্দোলনে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও রাজশাহী মহানগরে জামায়াতের নেতাকর্মীরা বেশি দমনপীড়নের শিকার হওয়ায় এসব জায়গাতেও একাধিক প্রার্থী দেয়ার কথা বিবেচনা করছে দলটি।

এছাড়া বিগত দুবারের নির্বাচনে যেসব উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন জামায়াত প্রার্থীরা, সেখানেও প্রার্থী দেবে দলটি।

সব মিলিয়ে অন্তত ৭৫টি আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি রয়েছে দলটির।

জামায়াতের একজন নেতা জানান, আগামী সংসদ নির্বাচনে জোটগতভাবে নির্বাচন করলেও নির্বাচন কমিশনে দলের নিবন্ধন ও প্রতীক বাতিল করায় জামায়াত কাঙ্ক্ষিত মূল্যায়ন না পাওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছে।

এক্ষেত্রে বিএনপি ও ২০ দলের অন্য শরিকদের চাপ এড়াতে বৈরি পরিস্থিতির মধ্যেও যে ভোটব্যাংকে নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি তা তুলে ধরতে চায় জামায়াত।

এজন্য সিলেট ও ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে ইতিবাচকভাবে ভাবছেন জামায়াতের নীতি নির্ধারকরা। এক্ষেত্রে দল নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিলে তাতে কারাবন্দি জামায়াত মকবুল আহমাদের সায় থাকবে বলে জানা গেছে।

জামায়াতের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা জানিয়েছেন, ডিএনসিসি উপনির্বাচনে বিএনপি থেকে প্রার্থী দেয়ার বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয়।

বিশেষ করে সংসদ নির্বাচনের আগে খোদ রাজধানীতে নির্বাচন করার ঝুঁকি নিতে চায় না দলটি। এক্ষেত্রে ২০ দলীয় জোটের অন্য কোনো দলের প্রার্থীকে বা বৃহত্তর রাজনৈতিক স্বার্থ বিবেচনা করে নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্নাকেও সমর্থন দেয়ার বিষয়টি ভাবছেন বিএনপির নীতি নির্ধারকরা।

এ বাস্তবতায় জামায়াতের পক্ষ থেকে প্রার্থী দেয়ার বিষয়ে দলের নীতিনির্ধারকদের আগ্রহ বেড়েছে। দলটির মধ্যমসারির নেতাদের বক্তব্য হলো, বিএনপি যদি তাবিথ আউয়ালের মতো প্রার্থী দেয় বা মাহমুদুর রহমান মান্নাকে সমর্থন করে তাহলে এ সুযোগটি জামায়াতকে দিতে অসুবিধা কোথায়?

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, ডিএনসিসি নির্বাচেন প্রার্থিতা দেয়ার বিষয়ে সম্প্রতি দলটির সিনিয়র নেতারা কয়েক দফা বৈঠক করেছেন। এ সময় বিগত সিটি নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল বা তার বাবা ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুকে মনোনয়ন দেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়।

কিন্তু সম্প্রতি ফাঁস হওয়া প্যারাডাইস পেপারে বিদেশে বেনামি কোম্পানি খুলে অর্থ সরানোর তালিকায় এ বাবা ও সন্তানের নাম আসায় তাদের প্রার্থী না করার বিষয়ে মত আসে। এক্ষেত্রে গুলশান থেকে একাধিকবার নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মেজর (অব.) কামরুল ইসলামের কথা উঠে আসে।

তবে এ নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গঠনের লক্ষ্যকে সামনে রেখে সম্ভাবনাময় প্রার্থী হিসেবে মাহমুদুর রহমান মান্নাকে সমর্থন দেয়ার বিষয়েও আলোচনা হয়।

এদিকে বিএনপি প্রার্থী না দিলে ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে বিজেপি চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ নির্বাচন করতে আগ্রহী।

তবে জামায়াত নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিলে পরিস্থিতির আলোকে ২০ দলের জোটগত অবস্থান নির্ধারিত হবে বলে জানা গেছে।

অনলাইন বাংলা

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin