dhaka_somabesh_bnp

ঢাকায় ঢুকতে বাধা! সমাবেশ স্থল কানায় কানায় পূর্ণ

ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা যাওয়ার উদ্দেশে আজ রোববার সকালে গুলিস্তানে যান আবিদা রহমান। তাঁর চিন্তা ছিল গুলিস্তান থেকে ইলিশ পরিবহনের গাড়িতে করে মাওয়া ঘাট যাবেন। সেখান থেকে স্পিডবোটে পদ্মা পাড়ি দিয়ে আবার বাসে করে ভাঙ্গা পৌঁছাবেন। কিন্তু গুলিস্থানে গিয়ে দেখেন, মাওয়া ঘাট পর্যন্ত যায়—এমন কোনো গাড়িই ছাড়ছে না। পরে মাইক্রোবাসে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে কয়েকজনে মিলে মাওয়ার উদ্দেশে রওনা হন।

গাড়ি না ছাড়ার কারণ জানতে সেখানকার ইলিশ পরিবহনের কাউন্টারে বসা একজন কর্মচারীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানালেন, মাওয়া থেকে গাড়ি ঢাকায় কম আসছে বা ঢাকা থেকেও সেভাবে ছাড়া হচ্ছে না। বিএনপির সমাবেশের কারণে গাড়ি কম চলছে বলে তাঁর দাবি। তবে সরেজমিন দেখা গেছে, ব্যক্তিগত গাড়ি এবং মালামাল বহনকারী ট্রাক, লরি, পিকআপ চলাচলে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।

আজ দুপুরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণ দেবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এই সমাবেশে বাইরে থেকে লোক আসা ঠেকাতে ঢাকার আশপাশের জেলার পরিবহন মালিকদের গাড়ি চলাচল কমিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতারা। এ ছাড়া ঢাকার মধ্যেও গণপরিবহন চলাচল কমানোর কথা বলা হয়েছে। ঢাকার আশপাশের গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ থেকে সকাল থেকে ঢাকামুখী গাড়ি কম চলাচল করছে। ঢাকা থেকেও কম গাড়ি এসব জেলার উদ্দেশে ছেড়ে যাচ্ছে।

প্রথম আলোর গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, বিএনপির আজকের সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকায় যানবাহন ঢুকতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এসব জেলার বেশ কয়েকটি জায়গায় যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ভুক্তভোগী সাধারণ যাত্রী ও সমাবেশে আসছিলেন বিএনপির এমন নেতা–কর্মীরা এই অভিযোগ করেছেন। তবে পুলিশ বলছে, ঢাকাগামী যান চলাচলে বাধা দেওয়ার কোনো ঘটনা তাদের জানা নেই।

সরেজমিনে আমাদের গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক ছিল। একপর্যায়ে যানজটও হয়। তবে এরপরে মহাসড়কের চন্দ্রা, বোর্ড গড়, খাড়াজোড়া এলাকায় ঢাকাগামী বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। গাজীপুর থেকে ঢাকার দিকে কোনো বাস চলতে দেওয়া হয়নি।

কালিয়াকৈর পরিবহন মালিক সমিতির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা বলেন, সমিতির নেতাদের থানায় ডেকে নিয়ে ঢাকাগামী কোনো গাড়ি ছাড়তে নিষেধ করেছে পুলিশ।

ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়কেও চান্দনা চৌরাস্তা থেকেও ঢাকাগামী কোনো গাড়ি ঢুকতে দেখা যায়নি। এই মহাসড়কে কিছু কাভার্ড ভ্যান, ট্রাক ও অটোরিকশা চলতে দেখা গেছে।

চন্দ্রা এলাকার সাইফুল ইসলাম জানান, তিনি সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাচ্ছিলেন। চন্দ্রায় পুলিশ গাড়ির গতিরোধ করে। আজ ঢাকায় যাওয়া যাবে না বলে জানায়।

গাজীপুর হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হাইয়ের ভাষ্য, ঢাকাগামী যান চলাচলে পুলিশের পক্ষ থেকে বাধা দেওয়া হচ্ছে না। অন্য কোনো কারণে যানবাহন নাও চলতে পারে বলে জানান তিনি।

গাজীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য কাজী ফায়েজুল আলম অভিযোগ করে বলেন, তাঁরা সমাবেশে যাওয়ার জন্য গাজীপুর ও কালিয়াকৈরের বিভিন্ন বাস ভাড়া করেন। আজ সকালে নেতা–কর্মীরা বাসেও ওঠেন। কিছু দূর যাওয়ার পর চালকেরা পরিবহন মালিক সমিতির নির্দেশ অনুসারে বাস চলবে না বলে জানান। বাস থেকে নেতা–কর্মীদের নামিয়ে দেন। বাসও ছাড়েননি। সমাবেশে যোগ দিতে দূরদূরান্ত থেকে যারা বাসে আসছিল, ঢাকার প্রবেশমুখে তাদের নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। ব্যক্তিগত গাড়ি ও মাইক্রোবাসও যেতে দেওয়া হচ্ছে না।

সরেজমিনে আমাদের মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, শ্রীনগর, লৌহজং, গজারিয়া, সিরাজদিখান, টঙ্গীবাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় আজ সকাল থেকে ঢাকাগামী সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। শিমুলিয়া ঘাট থেকে কাঁঠালবাড়ি পর্যন্ত লঞ্চ ও ফেরি যাত্রী নিয়ে যাচ্ছে। তবে সেখান থেকে কোনো যাত্রী নিয়ে আসছে না।

শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বলেছেন, মুন্সিগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় সমাবেশে আসছিলেন—এমন নেতা–কর্মীদের পুলিশ আটক করেছে। পরে আবার ছেড়ে দিয়েছে। ঢাকাগামী কোনো যানবাহন চলছে না।

মুন্সিগঞ্জ সদরে ঢাকাগামী যাত্রী ইকবাল বলেন, ‘লঞ্চ ও বাস সব বন্ধ। কীভাবে ঢাকায় যাব? আমাদের তো ব্যবসার কাজ আছে। কিন্তু যেতে পারছি না।’ সমাবেশের অনুমতি দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

মুন্সিগঞ্জ থেকে রোগী নিয়ে ঢাকায় চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছিলেন সেলিনা বেগম। যানবাহন বন্ধ থাকায় যেতে পারেননি। জানালেন, আজ দেখাতে পারলেন না। এক সপ্তাহ পরে আবার দেখাতে হবে। ক্ষুব্ধ হয়ে বললেন, ‘আমাদের আটকে রাখবে কেন?’

মুন্সিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম বলেন, যানবাহন চলাচলে পুলিশের কোথাও বাধা দেওয়ার কথা নয়। যদি কোনো বাধা দেওয়ার খবর আসে, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মানিকগঞ্জ থেকে সকালের দিকে কিছু গাড়ি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়েছে। তবে ১০টার পর থেকে এটা অনেকটাই কমে এসেছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা বাস মালিকদের বাস চলাচল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন বলে সেখানকার বাস মালিক সমিতির নেতারা জানিয়েছেন।

সূত্র: প্রথম-আলো

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin